- অরুণোদয় কুণ্ডু
৩
বিবি কা মকবারা
বিবি কা মকবারা না হয়ে মাতা কা মকবারা হলে নামটা বেশি সার্থক হত। কারন এটি
তৈরি করিয়েছিলেন আজম শা, পিতা ওউরঙ্গজেবের সুপুত্র। বিবির নামটা স্কুলের
ছেলে দের এক দিনের হোমটাস্ক হতে পারে। রাবিয়া উল দুরানি আলিয়াস দিলরাস বানু
বেগম!, আজম শায়ের মা আর অউরংগজেবের বহু স্ত্রী এর মধ্য একজন। অবশ্য এই দিক
দিয়ে অউরঙ্গজেবকে নিরপেক্ষ বলা যায় কারন তার বহু বেগমের মধ্য একজনকে
বিশেষত্ব দেখিয়ে মকবারা তিনি বানাননি, বানিয়েছেন ছেলেকে দিয়ে। অথচ নাম দেখে
মনে হয় তারই কীর্তি। যদিও এটাকে কীর্তি বলা যাবে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক হতে
পারে। তাজ মহলের কাজ যখন শেষের মুখে তখন তার নকল মহলের কাজ শুরু হয়। (
তাজের নির্মাণ কাল – 1631-53, মকবারা- 1651-61) তাজ তৈরির বিপুল ব্যায়ের পর
আবার একটা তাজ বানানোর মত খরচ কোষাগারে না থাকাটাই স্বাভাবিক তাই মকবারা
দেখে বার বারই দায়সারাভাবে কাজ সারা হয়েছে মনে হয়। যারা তাজ মহল দেখেনি
তাদের হয়ত ভালোই লাগবে কিন্তু একে দক্ষিণের তাজ বলা হলেও সেই নাম যে কতটা
হাস্যকর তা দুটি সৌধকে যারা দেখেছে তারা বুঝতে পারবে। আরকিওলজিকাল সার্ভে
অফ ইন্ডিয়ার অন্তর্গত হলেও অযত্ন যথেষ্ট। যদিও দেখলাম মেরামতের কাজ শুরু
হয়েছে।
458x275 বর্গমিটার এলাকা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। মূল প্রবেশপথ দক্ষিণে বাকি
তিনটি দিকে বাগান ও খোলা চত্বর, ফোয়ারা বানানো রয়েছে। একটি বিষয়ে এটি
তাজমহল কে টেক্কা দিতে পারে, তা হল পিছনের প্রাকৃতিক দৃশ্য। তাজমহলের পিছনে
যমুনা সুন্দর বটে কিন্তু এখানে দিগন্ত ঢাকা সবুজ পাহাড়ের সারি আরো সুন্দর।
আর এর পিছনে একটি বিস্তৃত বাগান আছে। যেটা তাজে নাই। মকবারার স্থপতি ছিলেন
হংস্পত রাই আর অলংকরণে আতা উল্লা। তারা যথেষ্ট যত্নবান শিল্পী বলেই মনে হয়।
প্রবেশ দ্বারে পিতলের দরজার কারুকাজ বা গেটের সিলিংয়ের মিনাকারী বেশ সুন্দর
আর মূল সৌধের শ্বেতপাথরের কারুকাজও বেশ ভাল। উঁচু বেদীতে তৈরি মকবারা
বেগমের সমাধি রয়েছে নিচে। যদিও নিচে যাবার সিঁড়ি বন্ধ। উপর থেকেই নিচের
সমাধি দেখা যায়। যা উপর থেকে লোকের ফেলা টাকায় আর পয়সায় আচ্ছাদিত। সেই ঘরের
দেওয়াল চারপাশের কারুকাজ বা মিনার কাজ বেশ ভাল। এই আসল সমাধি কিন্ত তাজমহলে
দেখা যায়না। সেখানে উপরে আলাদা করে মমতাজের সমাধির একটি রেপ্লিকা রয়েছে।
এছাড়া তাজমহলে সমাধি ঘরের চারপাশে রয়েছে পদক্ষিনের অলিন্দ যা এখানে
অনুপস্থিত।
উঁচু বেদির পশ্চিমে নিজামের বানানো একটি মসজিদ রয়েছে। ব্যাসল্ট শিলার উপর
চুনরং দেখলে দূর থেকে শ্বেতপাথরই মনে হয়। গঠন দেখলে অনেকটা দেওয়ান ই আমের
কথা মনে পরে। মসজিদ চত্বরে আয়তকার ঘরকাটা। প্রতিটা আয়তক্ষেত্রের ভিতর একজন
বসে নামাজ পড়তে পারবে।মোট 377 জন বসতে পারবে এমনি ব্যাবস্থা।
এই সব দেখতে দেখতেই সৌধ বন্ধ হবার সময় হয়ে এল। পরিবেশ মনোরম, বাগানে বসে
আড্ডা দিতে ভালই লাগবে। আর এটা লক্ষ্যও করলাম যে এখানকার স্থানীয় মানুষ
বিশেষত কপোত কপোতীরা মকবারা বা বুদ্ধ গুহাকে নিরিবিলি প্রেমের স্থান হিসেবে
বেছে নিয়েছে। মকবারা থেকে স্টেশনের অটো ধরে এরপর চলে এলাম সোজা হোটেল।
অউরঙ্গাবাদ ভ্রমনের এখানেই ইতি। এর পরে ভ্রমনের বাকি দিনগুলোতে আমরা উপরে
উল্লিখিত বাকি জায়গা গুলিও ভ্রমন করেছিলাম। কিন্তু সেগুলি নিয়ে অনেক রথী
মহারথীর অনেক বিখ্যাত লেখা আছে। বিশেষত অজন্তাকে নিয়ে তো লেখার ছড়াছড়ি।
ইলোরা নিয়ে যদিও বাংলায় তথ্যবহুল বিষদ লেখার কিঞ্চিৎ অভাব আছে বা লেখা
থাকলেও তা আমার জানা নেই। কিন্তু সেই সব অতুল ঐশ্বর্য দেখে আমার এটুকুই মনে
হয়েছে সেই ভ্রমনের আলোচনার আলাদা বিস্তৃততর পরিসরের প্রয়োজন আছে। এখানে
অউরঙ্গাবাদের একান্তই নিজের দুটি স্থান নিয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখাই এই
স্থান দুটির প্রতি সুবিচার বলে মনে হয়। কারনটা আমি লেখার প্রথমেই বলেছি।
কোকিলের ডাক বসন্তেই সুমধুর, বর্ষার মেঘগর্জনের মাঝে জোরদার কেকারবই মানায়।
সেখানে কুহুডাক শোনা যাবেনা। তাই একই সময়ে দুটি ঋতুকে নাই বা আনলাম।
লেখকঃ অরুণোদয় কুণ্ডু
মোবাইলঃ 9830580357
ঠিকানাঃ 17/7/4 নরসিংহ দত্ত রোড, কদমতলা, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, পিন – 711101।
17/7/4 Narasingha Dutta Road, kadamtala, Howrah, West Bengal, India,
pin-711101.