টরন্টো,  ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২, নভো সংখ্যা ৩৬ 
              
হোমপেজ সম্পাদকীয় পাঠক পরিষদের কথা কবিতা ছোট গল্প ধারাবাহিক সাহিত্য সংবাদ ভ্রমণ কাহিনি সাহিত্য সভা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল আবৃত্তি / কণ্ঠসঙ্গীত পাঠাগার আর্কাইভ লেখক পরিচিতি যোগাযোগ

কার্তিকের কুয়াশা

সম্পাদকীয়

 

 

বাংলা সাহিত্যের ভবিষ্যৎ

সাহিত্য কি এমন এক বনফুল নয় যার ঘ্রাণ নাকে এসে লাগে চোখে পড়ারও বেশ আগে? অনেক সময় প্রথম এক লাইন পড়েই আমরা বুঝতে পারি এটা সাহিত্যের লেখা, ডাক্তারবাবুর লেখা প্রেসক্রিপশন নয় । পড়তে বসেই আমরা সাধারণত একটা ধাঁচ খুঁজে ফিরি লেখার মধ্যে। খুঁজে ফিরি আদর্শ একটা রীতি, আদর্শ হিসেবে গৃহীত কোনো বিষয়। বলতে হয় বৈশিষ্টসূচকভাবেই আমরা নিজের অজান্তে মনের মধ্যে টেনে আনি রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বনফুল - অবিসম্বাদী মর্যাদাসম্পন্ন লেখকদেরকে । সাহিত্য শিল্পের সেই শ্রেণীবিভাগ যা মানব মেধাকে আন্দোলিত করে গেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। সাহিত্যের প্রসঙ্গ এসে পড়লেই আমাদের মনে পড়ে ক্ল্যাসিকদের নাম। সাহিত্য কিনা তা বুঝতে আমাদের প্রয়োজন পড়ে তুলনামূলক এক বিশ্লেষণের। সাহিত্য কাকে বলে তা আমরা অনেকে না বুঝলেও সাহিত্য কেমন দেখতে তাতো প্রায় সবাই জানি।
ছোটগল্পের প্রকৃতি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘বর্ষাযাপন’ কবিতায় বলেছেন:
ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা ছোটো ছোটো দুঃখকথা
নিতান্তই সহজ সরল,
সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি
তারি দু-চারিটি অশ্রুজল।
নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা,
নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ।
অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে
শেষ হয়ে হইল না শেষ।
রবিঠাকুরের এই সংজ্ঞা হয়তো এখনকার গল্পকাররাও মেনে চলছেন। সত্যিইতো আধুনিক লেখকদের লেখায় এই চেহারার ঘাটতি একদম নেই। গদ্যে গীতিময়তা, বিষয়বস্তুগত মাত্রা, প্রাত্যহিক জীবনের বিষয়াবলী, এমনকি পরীক্ষণ নিরীক্ষণের আকুল আকাঙ্ক্ষা তাও আছে। চেহারাগত দিক থেকে আধুনিক সাহিত্যে পুরোনো সেই দিনগুলির সাহিত্যের চেহারার সাথে প্রায় সব দিক থেকেই মিল থাকা সত্ত্বেও আজকের সাহিত্য সেই সময়ের সাহিত্যের কাজটি আর করছে না। কোথায় বিদ্যাসাগরের শকুন্তলা ? কোথায় সীতার বনবাস ? কোথায় শরৎবাবুর দেবদাস? শ্রীকান্ত ? কোথায় মধুসূদন দত্ত? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর? জীবনান্দ দাশ ?
অনেকেই মনে করেন আজকের সাহিত্য আর করছে না যা তার করার কথা কারণ এখনকার সাহিত্যিক এবং প্রকাশক বড়ো বেশি প্রতিষ্ঠাননির্ভর হয়ে উঠেছেন, বড়ো বেশি সচকিত, বড়ো বেশি অপটু-অদক্ষ ।
আবার এও তো ভাবা যায় যে ভাষার পুরোনো মর্ফোলজি বা রূপতত্ত্বই এর জন্য দায়ী। রূপতত্ত্ব বলতে ভাষার রূপমূলসমূহ কিভাবে সংযুক্ত হয়ে শব্দ গঠন করে, এতদ্বিষয়ক বিদ্যা। অথবা ধরুন এমন যদি হয় এখনকার তথ্যপ্রযুক্তি সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থাকে এতটাই বদলে দিয়েছে যে, সাহিত্যের পুরনো রূপগুলি আর নির্ভরযোগ্যভাবে সমাজের উপর প্রভাব তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে না?
এ নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখার সময় এসেছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে আরও কিছু লেখার ইচ্ছে রইলো।

 

এ সংখ্যায় বেশ কিছু নতুন গল্প-কবিতা , নিবন্ধ নির্বাচিত হয়েছে। আশা করি সবার ভালো লাগবে। শুভ হোক বাংলা সাহিত্য।

 

 

টরন্টো, ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০২২




 

সাইদুজ্জামান, টরন্টো, কানাডা।