- অরুণোদয় কুণ্ডু
সূর্যের আলোয় যেমন চাঁদ ঢাকা পড়ে, রবীন্দ্রনাথের যুগে যেমন অনেক
প্রতিভাবান কবি সাহিত্যিক চলে গেছেন বিস্মৃতির অতলে তেমনই আমাদের ভ্রমনের
জগতেও হতে দেখা যায়। হীরে, চুনি পান্নার বাহারে নিস্প্রভ হয়ে পড়ে থাকে অনেক
অচেনা মুক্তো মানিক। তেমনই সকলের সামনে পড়ে থাকা অথচ কিছুটা হলেও অবহেলিত
কিছু ভ্রমনের জায়গা নিয়ে এবারের গল্প বলা। অউরঙ্গাবাদ শহরটার কথা সকলেরই
জানা। অজন্তা-ইলোরার বিশ্বজোড়া খ্যাতির টানে লোকে ছুটে আসে এই শহরে। কিন্তু
এই শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে আরো অনেক ইতিহাস আর সংস্কৃতি।
১
অউরঙ্গাবাদ
প্রাচীন ভারতের “খিড়কী” শহর যা আজ অউরঙ্গাবাদ নামে পরিচিত। অনেক ইতিহাসের
পদচিহ্ন বহন করে চলেছে। অউরঙ্গাবাদ নাম অউরঙ্গগজেব এর নামে। এখানেই ছিল তার
দাক্ষিনাত্য এলাকার তথা তৎকালীন ভারতের রাজধানী। সহ্যাদ্রি পর্বতমালার দুটি
শ্রেণী সাতরা আর সহ্যাচলের মধ্যবর্তী দুধনা নদীর উপত্যকায় অবস্থিত এই শহর।
কাছাকাছি বড় শহর মুম্বাইয়ের সাথে সড়ক , রেল, আকাশ সমস্ত ভাবেই যুক্ত। বাংলা
থেকে যাবার জন্য মুম্বাই, পুনে গামী যেকোনো ট্রেনে চেপে ভুসাওয়াল বা জলগাঁও
অথবা মনমাডে নেমে বাসযোগে চলে আসা যায় অউরঙ্গাবাদ। মনমাড স্টেশন থেকে ট্রেন
পাওয়া যায় অউরঙ্গাবাদের, যদিওবা সংখ্যায় কম। মনমাড থেকে বাসে সরাসরি আসা না
গেলেও ওখান থেকে ইয়ুলাতে এসে বাস বদল করে আসা যেতে পারে।
অউরঙ্গাবাদ বেশ বড় শহর। রেল স্টেশনের বাড়িটা বেশ রাজকীয়। স্টেশন এলাকায়
অসংখ্য বিভিন্ন মানের হোটেল। সস্তা তে হোটেল পাওয়া সম্ভব। অটোর দৌরাত্ম
ভালই আছে। নতুন লোক দেখলে বেশি দাম নেবার প্রবণতাও আছে। শহরের মধ্য টুকটাক
ঘোরা অটোতেই সারতে হয়। আর যাদের স্টেশনের কাছে হোটেল তাদের তো বাস ধরার
জন্য বাস স্ট্যান্ড যেতে নিয়মিত অটো দরকার হবে। তাই দরদাম না করলে ঠকতে
হবে। বাসে যাতায়াতই এই এলাকায় সবচেয়ে আরামদায়ক এবং সস্তা। সরকারী বাস অনেক
আছে। বেশ বড় বাস টার্মিনাস আছে স্টেশন থেকে ৩ কিলোমিটার মত দুরত্বে।
সেখানেও অনেক থাকবার হোটেল পাওয়া যায় কিন্তু তা স্টেশনের মত সস্তা নয়.।
স্টেশনের কাছাকাছি খাবারের দোকান প্রচুর। কম খরচে উদরপূর্তির এলাহি আয়োজন।
কিন্তু বৈচিত্রের মাধ্যমে রসনা তৃপ্তির অবকাশ কম। এদিকে অধিকাংশ খাবারই
ভাজা খাবার তাই পেটপাতলাদেরাও একটু সাবধানী হতে হবে। বড়া আর পকোড়ার বাইরে
এরা খুব একটা কিছু চেনে না।
আমরা অউরঙ্গাবাদ পৌঁছলাম ২০১৭ সেপ্টেম্বরের কোন এক দিন দুপুর ১২ টার আসে
পাশে। মনমাড থেকে বাসের পথে। ট্রেনে আসার ইচ্ছা থাকলেও ট্রেন অত্যাধিক দেরি
করায় বাসে আসতে বাধ্য হলাম। হোটেল স্টেশনের কাছেই, হোটেলে মালপত্র রেখে
চোখে মুখে জল দিয়েই বেড়িয়ে পরলাম। দুপুরের খাওয়া সেরেই খোঁজ চলল কাছাকাছির
মধ্য কোথায় যাওয়া যায়। অউরঙ্গাবাদ কে কেন্দ্র করে বেশির ভাগ মানুষ দেখতে
আসে অজন্তা ইলোরার গুহা। ইলোরা এখান থেকে প্রায় ২৯ কিমি অজন্তা ১০০ এর
কাছাকাছি। ইলোরা এখান থেকে দেখা সম্ভব তবে অজন্তা এখান থেকে না দেখতে
যাওয়াই ভাল। তাতে দেখার থেকে যাতায়াতের সময় বেশি লেগে যাবে। তাছাড়া কোনও
শিল্পকে উপলব্ধি করতে যে সময়ের দাবি সেই অপূর্ব শিল্পকর্মগুলি রাখে সেই সময়
তাদের না দিয়ে তাদের প্রতি অবিচার হবে বলেই মনে হয়। এই দুই আন্তর্জাতিক
জায়গা বাদ দিলেও অনেক ইতিহাসের স্মৃতিচিহ্ন ধর্মীয় পিঠ ছড়িয়ে আছে আসে পাশে।
শহরের চৌহদ্দির মধ্য আছে বৌদ্ধদের স্থাপত্য দিয়ে ভরা অউরঙ্গাবাদ গুহা,
তাজমহলের নকল করার ব্যার্থ প্রয়াস বিবি কা মকবারা, শিবাজীর নামে মিউজিয়াম,
মধ্যযুগীয় জলসেচ পদ্ধতির প্রমানস্বরূপ পানিচাক্কি ইত্যাদি। শহর ছেড়ে ইলোরা
বা ভেরুল লেনির পথে এগোলেই পাওয়া যায় সুপ্রাচীন দেবগিরির কেল্লা, যা
পরবর্তী সময়ে তুঘলকের আমলে দৌলতাবাদ নামে প্রচলিত হয়েছে। ওই পথেই পাওয়া
যাবে ভারতের ওউরঙ্গজেবের সমাধি। তার কাছে অনেক পৌরাণিক কাহিনীর সাক্ষী
হনুমানের মন্দির। আরো কিছু মন্দির আছে। আছে ইলোরা গুহার পাশেই দ্বাদশ
জ্যোতিঃলিঙ্গের এক ঘৃষনেশ্বর মহাদেব। এছাড়া ঘোরার জন্য আরো অনেক জায়গা
অপেক্ষা করে আছে আশপাশে। যেমন একদিনে সকালে বাসে চেপে সিড়ডির সাঁইবাবার
মন্দির দেখে এসেছিলাম আমরা। আপাতত আমরা অউরঙ্গাবাদ গুহার উদ্দেশ্যে রওনা
দিলাম।
লেখকঃ অরুণোদয় কুণ্ডু
মোবাইলঃ 9830580357
ঠিকানাঃ 17/7/4 নরসিংহ দত্ত রোড, কদমতলা, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, পিন – 711101।
17/7/4 Narasingha Dutta Road, kadamtala, Howrah, West Bengal, India,
pin-711101.