টরন্টো, ২৫ শে বৈশাখ ১৪২৮, নভো সংখ্যা ২০ 
              
হোমপেজ সম্পাদকীয় পাঠক পরিষদের কথা কবিতা ছোট গল্প ধারাবাহিক পাঠাগার আর্কাইভ লেখক পরিচিতি সাহিত্য সংবাদ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল যোগাযোগ আবৃত্তি / কণ্ঠসঙ্গীত

কার্তিকের কুয়াশা

কবিতার পাতা

 

কবিগুরুর প্রতি


-
অরুণোদয় কুন্ডু 

বছর বছর মালার ভারে ছবি পড়ল ঢাকা;
প্রভাতফেরীর শঙ্খনাদে,মাইক্রোফোনের দামাল তানে
গাছটা আজ রইল পাখি ছাড়া।
ঘাসের বুকে বাঁশটা গেঁথে, ‘আলোর মুক্তি’ বাল্বে রেখে,
জামায় তোমার কাব্য এঁকে
সার্বজনীন প্রণাম মঞ্চে হয়েছি আত্মহারা।

‘আধমরাদের’ মারব ক ঘা; ‘কোপাইয়ে’ কটা বাঁক?
ডঃ অমুক গান শুনে তোর, সিঁটকান কি নাক?
‘চাঁদের হাসি’ই ভাঙল কি বাঁধ মনের ‘মরা গাঙে’?
‘জনদশেকে তক্তপোশে’ এ সির হাওয়ায় জমিয়ে বসে
ভাবছি আরও কতকিছু নতুন নতুন ঢঙে।

ছেলে বেলায় আসো তুমি স্যারের বেতের দামে,
কৈশোরেতে তোমায় খুঁজি সহায়িকার পাতায়;
না বোঝার অভ্যাসটা রপ্ত হয়ে গেলে,
বড়বেলায় কেতার বুলি খোদাই করি মাথায়।
তাইতো আরব বেদুইনের কাঁধে জলের বোতল!
ক্ষেমঙ্কর পায়না ক্ষমা, দুর্ভিক্ষে শিবতরাই !
গোরা মাথায় শিবের মতো চন্দ্রবিন্দু খোঁজে।
খাতার পাতায় তোমায় লিখি নবযুগের রবি,
তবু সেকেলে সব যুক্তাক্ষর বসাই ওজন বুঝে।
তোতা পাখি মরেনা আর পুঁথির পাতা খেয়ে!
অফিসে সে এক সুরেতেই সাত রাগিণী গায়!
বনের পাখি দিয়েছে ধরা সোনার খাঁচাটিতে,
খাঁচার পাখির সাথে দানা আর পুঁথির পাতা খায়।


এমনি করেই পড়লে বেলা জলকে চলে যাই;
তবু কাব্য কথায় শুধু তোমায়ই ফিরে পাই।
গঙ্গাজলেই গঙ্গাপূজা প্রতি বছর করি,
শুধুই অনুকরণ, কোন অনুসরণ নাই।
এত দেখেও করুনা কি আজ হয়না ওগো কবি?
প্রণাম করি তোমায় সেকি শুধুই তোমার ছবি? ।

 

‘করোনা’ সমাচার

 

~ ফিরোজা হারুন

 

কোথায় আল্লাহ্‌,কোথায় যীশু,
কোথায় ভগবান?
কোথায় খোদা, কোথায় স্রষ্টা
কোথায় শয়তান?
কোথায় ইবলিশ, কোথায় নমরুদ
কোথায় কামান, কোথায় বারুদ!
কোথায় জ্বীন, কোথায় পরী?
কোথায় বাদশাহ্‌, কোথায় সম্রাট?
কোথায় কালাপাহাড়, কোথায় লুকিয়ে বিখ্যাত চেঙ্গিস
কেউ কি পারে না
করতে বিনাশ কোভিড ১৯-বিশ?
কোথায় ফেরেশতা, জ্বীনের বাদশাহ্‌
কাজ করে কিছু দেখাও তোমরা
হাজার বছরের প্রতিশ্রুত সুরক্ষা।
কেউ আছে কি –
কেউ কি আদৌ
ছিল কোনদিন?
সবদিকে চেয়ে, দেখি আজ যেন
ব্যর্থ ট্রাম্প ও পুতিন।
সুচতুর তারা আনতে ব্যস্ত
ফলস্‌ ভ্যাকসিন।
কেউ থাকবেনা আর শুধু মবিচীকা
মানুষের পাশে দাঁড়াবার।
নির্মম ভারী, নিষ্ঠুর আড়ি, বড়ই নিলাজ,
বড়ই কঠোর।
কেউ নেই কোনখানে,
কেউ ছিলনা
কখনো কোনদিন
শুধু আছে প্যানডেমিক
বধিবারে প্রাণ, নির্বিঘ্নে নিশ্চিত।
করোনা কোভিড, হবে সেই দিন, দুঃসহ শান্ত
রইবে না এ গ্রহে একটি মানুষও যখন জীবন্ত।


শেষ ইচ্ছে
- তাপস কুমার দাস

আমাকে তোমার চোখ দুটো দেবে?
তোমার চোখ দিয়ে দেখবো নিজেকে l
আমাকে তোমার মন টা দেবে?
বুঝবো কতটা থাকি আমি তোমার হৃদয় জুড়ে l
আমাকে তোমার নখ গুলো দেবে?
যাতে আছে আমার স্পর্শ -
আমাকে তোমার দু ফোঁটা অশ্রু দেবে?
যাতে আছে আমার অবহেলা অনন্ত l
আমাকে তুমি তোমার সবটা দাও-
সেই বঞ্চনা, সেই আঘাত, সেই অবহেলা,
যা পেয়েছো তুমি আমার থেকে-
তোমার ভালোবাসার বিনিময়ে l
শুধু নিয়ে যাও তোমাকে, আমার থেকে-
কারণ আমি না থাকার যন্ত্রনা, তোমাকে স্থবির করে দেবে l
সে যে,আমার সইবে না লাগছে

 

 

প্রেম (অণুকবিতা )
-রত্না চক্রবর্তী

নদী ফেরে না তো
শুকনো খাতে,
প্রেম মরে গেছে
অপেক্ষাতে।

 

কথা ছিল
-মধুবন্তী আইচ

কথা ছিল ফিরে আসবে কবিতার খাতা,
ঝরা পাতার গালিচা বিছানো পথে/
লিখবো বসে আরও একবার
জীবনযাপনের কবিতা/
বন্ধুর খাতে বয়ে চলা যেন
বহমান এক নদী তা/
কথা ছিল ফিরে পাবো কবিতার খাতা,
শীতঘুম ভোরের ওমে কিংবা জলছবির ভাঁজে...

 

 

 

রঙ্গময়ী, কিছু রঙ্গ দে
-সাইদুজ্জামান

রঙ্গময়ী, কিছু রঙ্গ দে না,
অচেনা কিছু পথ চেনা।
বড়ো কালো লাগে সব অধুনা,
অন্ধ চোখে অল্প কিছু আলো দে না !

রঙ্গময়ী আয়, চোখে প'রে রাতের কাজল, ঠোঁটে গোলাপের রং, শরীরে শাড়ি,
হে চকিত-রসনা, চকিত-নয়না, কথা ছিল সহস্র সমুদ্র আমাদের দিতে হবে পাড়ি।

কথা ছিল প্রেম ছাড়া জীবন যাবে মরে,
ওলোট-পালোট খড়-কুটো দ্রুতগামী নির্ঝরে।
কিছুই তেমন যায়নি যেমন গিয়েছে কেটে বহু কাল,
লতার মতো পেঁচানো শাড়ি, চোখের কাজল, ঠোঁটের লাল।
ধুয়ে মুছে গেছে কোনো ঝর্ণা নয়, দুচোখ ভরা জল,
একলা আমি ডুবে ডুবেও পাইনি খুঁজে দুঃখ-নদীর তল ।
আমি জানি, তিনিও জানেন যিনি অন্তর্যামী,
যাত্রী আমি একাই ট্রেনের দূরগামী।


রঙ্গময়ী, কিছু রঙ্গ দে না এঁকে,
এই তরঙ্গ-ক্ষুব্ধ বুকে।

টরন্টো, মে ৪, ২০২১