নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা
সন্মাত্রানন্দ
অতীশ থেকে অসীমের পথে,,,,
- অরুণোদয় কুন্ডু
এক ঘোরলাগা অনুভূতি নিয়ে শেষ করলাম ' নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা ' । অনুভব গুলো তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। মন কে যেন এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে বইয়ের লাইন গুলো। যে মানুষটা শুধু ইতিহাসের পাতায় একটা অক্ষর হয়ে ছিলেন এতদিন। আজ থেকে যেন তিনিই জীবনের ধ্রুবতারার জায়গা নিতে চলেছেন। তিন রকম সময়ের পরিমণ্ডলে লেখা এই উপন্যাস। যুগ থেকে যুগে সাবলীল যাতায়াত। তার সাথে বদলে যাওয়া ভাষার চলন, সেই সময়কে জীবন্ত করে তুলেছে মানসপটে। আজকের বাস্তবতায় সৃজনশীল, আত্ম অনুসন্ধিৎসু মনের নিজেকে খুঁজে পাওয়ার আর্তি যেন এক লহমায় মিশে যায় হাজার বছরের পুরোনো এক শ্রমনের জীবন চর্যার সাথে। সব শেষে যেন সেই চলার পথেই পা ফেলার হাতছানি দিয়ে কোথায় হারিয়ে যায় শব্দ গুলো। লেখা শেষ হয়, শেষ হয় বইয়ের পাতা কিন্তু উপন্যাসের শেষ হয়না। মনের মধ্যে একজন অতীশ শুরু করেন দিনযাপন। চিরন্তন নারীসত্তাকে অনুভব করতে করতে সেই শ্রমনের জীবন কথা কখন যেন আমাদের রোজকার জীবনে আসা নারীদের আবেগ ও অনুযোগের সাথে একাত্ম হয়ে যায়। তাই চন্দ্রগর্ভ আর কুন্তলা অন্তরে থেকে যেন কথা বলে যায় অবিরাম। যে কথা প্রতিটা সাধারণ ছেলে মেয়ের কথা, যেকথা আমাদের রোজকার অনুভূতির কথা। কিন্তু সেই কথার অলিগলি দিয়ে কখন যে আমাদের নিয়ে চলে যায় চরম আত্ম উপলব্ধির দোরগোড়ায় তার হদিস পাওয়া আমাদের মত সাধারণের কম্মো নয়। তাই আমরা শুধু ঋদ্ধ হতে পারি তাদের চিরন্তন উপলব্ধির বারিধারায়। কথকতার এমনি অভিনব ধরন একটা ঐতিহাসিক চরিত্রের জীবনকে হাজির করেছে হালের সিনেমার থেকেও অভিনব কায়দায়। সাথে ইতিহাস, প্রত্নতত্ব আর উপকথা মিলে মিশে গিয়ে এটিকে একটি উপন্যাস থেকে এক রুদ্ধশ্বাস অভিজ্ঞতার অনুভব হিসাবে হাজির করে পাঠকের কাছে। দাঁড় করিয়ে দেয় সামান্য মানুষ থেকে অতীশ দীপঙ্কর হয়ে ওঠার এক অনন্ত সোপান শ্রেণীর পাদদেশে। সেই সিঁড়িতে ওঠার জন্য আহবান করে চন্দ্রগর্ভ বা যোবোজে। অমোঘ হাতছানি দেয় স্বয়ংবিদা, সাথে জাহ্নবী। সমতল থেকে পাঠকের মন ছোটে হিমালয়ের উচ্চতায়। সেই উচ্চ মার্গের পথে ফেলে যায় সব বৈভব, অহং বোধ। শেষে অসীম শুভ্রতার কৈলাসে মানস সরোবর এর গহীন নীলের মাঝে হারিয়ে যায় উত্তরণের পথে। আজকের প্রতিনিধি হয়ে শাওন অমিতায়ুধরা বলে যায় এই অতীশ হাজার বছর পরেও একই ভাবে বর্তমান আছেন আমাদের পাশেই। তাই চাগ লোচাবা থেকে বিনয়ধর থেকে মোলাতেব মিঞা সকলেই হয়ে ওঠে সমসাময়িক চরিত্র। চিরন্তনী সুরে ত্রিকালকে এক সুতোয় বেঁধে এক নতুন অনুভবের দুনিয়ার পাঠককে পরিভ্রমণ করিয়েছেন লেখক। গভীর উপলব্ধিময় সে ভ্রমণ। সেই পথে সকলকে ভ্রমণ করার অনুরোধ রইল। যে পথের শেষে আপনার সহযাত্রী হতে অপেক্ষা করে আছেন স্বয়ং অতীশ দীপঙ্কর। হয়ত আপনার অন্তর থেকেই ডাক দিয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। শুধু সভ্যতার কোলাহলে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার গোলক ধাঁধায় ঘুরে সেই ডাক আপনার শোনা হয়ে ওঠেনি।