রওশন হক
-কুহু তোমার পেছনে কে দাড়িয়ে !
-না কেউ নেই ।
তোমার পেছনে কে?
কুহু কোন উত্তর দেয় না।চুপ করে থেকে রাতের ফাইল পত্র দেখতে থাকে।তার
ডিউটি বুঝে নেয় ।সামারার ফাইলে নোট লেখা আছে সে দিনে তেমন কিছু খায় নি
এবং আনরেস্ট ছিল। কুহু সিসি টিভির মনিটর চেক করে অন্য রোগিদের দেখে
নেয়।খুশি হয় দেখে যে সবাই খুব শান্ত এবং অনেকেই ঘুমিয়ে পরেছে ।
কুহু হু ইজ বিহাইন্ড ইউ ?
-আরে মা ! আমার পেছনে কেউ নাই
-হু ইজ বিহাইন্ড ইউ?
-আরে আমার দাদী আমার পেছনে কেউ নাই। আজকে আমি একাই তোমাদের দশ জন কে দেইখা
রাখব।
-কুহু লিসেন ,হু ইজ বিহাইন্ড ইউ!?
-ইউ লিসেন ,নো বডি উইত মি । টুডে আই এম দ্য অনলি পার্সন ফর দিস রুম।বাকিরা
ছুটিতে।
প্লিজ ডিয়ার ট্রাই টু স্লিপ ।
করোনা বেডেছে বেশিরভাগ নার্স ছুটিতে।অন্য রোগিরা সবাই বেশ শান্ত মেজাজে
আছে ।তবে সামারাই আজ বেশি অস্তিরতা করছে ।গত কয়েক মাসে পরিবারের কেউ তাকে
দেখতেও আসে নাই।এদেশেও বয়স্ক দের সিনিয়র সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দিয়ে
তেমন একটা খোঁজ খবর কেউ রাখে না ।
হয়ত সামারা আজ তার সন্তানদের দেখতে চাইছে।তাদের কে মনে পরছে তাই হয়ত এমন
অস্তিরতা করছে।হয়ত সন্তানদের চেহারা মনে ভাসছে।
কুহু কে আজ রাতে সামারার পাশেই বসে থাকা লাগবে ।সামারার বয়স পঁচাত্তর ।সব
সময় চুপচাপ থাকে ।তবে তার কথা আর ক্রমাগত প্রশ্ন করা শুনে মনে হচ্ছে আজকের
রাতে এই বুড়িটা তাকে বেশ কষ্ট দিবে ।
সাধারনত বৃদ্ধাশ্রম নামটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ধরা দেয় ক্রন্দনরত
মায়ের মুখ, ম্রীয়মান বাবার দুর্বল চাহনি। এ যেন জীবনের পরম অভিশাপ। তবে
তা আমেরিকার মত উন্নত দেশের জন্য তা নয়।এখানে তারা খুশিমনে থাকে। সারাজীবন
নিজের ছেলে মেয়েদের বড় করে তুলে শেষ জীবনে সন্তানকে অবলম্বন করে বাঁচার
চেষ্টা যেন সত্যিই এদেশে অন্যায় । এখানে সন্তান এডাল্ট হলেই পরিবার থেকে
দুরে থাকে। তবে এখানে ও বৃদ্ধরা পরিবার কে মিস করে । গত মাসে সামারার
জন্মদিন গিয়েছে করোনার সংক্রমনের জন্য তার সন্তানেরা কেউ দেখতে আসতে
পারেনি ।ভিডিও কলে নানান জায়গা থেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।
-কুহু প্লিজ কাম বাই মি
-আই এম হিয়ার ।
কুহু সামারার হাত ধরে পাশের চেয়ারে টেনে বসে।
-হু ইজ বিহাইন্ড ইউ ?
কুহু পাত্তা দেয় না । সে তার হাত ধরে হাল্কা মালিশ করে আর গুন গুন করে গান
ধরে ,"বড়লোকের বেটি লো লম্বা লম্বা চুল, এমন মাথায় বেঁধে দিব লাল
গেন্দা ফুল"
-কুহু নাইস সং বাট হু ইজ বিহাইন্ড ইউ।
-লিসেন সামারা দাদি আমার পেছনে বা ডানে বায়ে কেউ নাই । তুমি ঘুমাও সোনা
পাখি ।
-কুহু নাইস সং । কেন ইউ সিং দ্যা আদার ওয়ান ?
-কুহু গাইতে শুরু করে ,
"যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে ।একলা চলো একলা চলোরে ।
এই গান টা এখানের সবার পছন্দ ।
কুহু তাদের কে ইংরেজী অর্থ বুঝিয়ে দিয়েছে।
If they pay no heed to your call walk on" your own.
Walk alone, walk alone, walk alone, walk all alone.
If none speaks, o wretched one,
If all turn their face away and cower in silence—
Then open out your heart
dear one, speak out your mind, voice alone.
গান শুনে সামারা ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে।এক সময়ে ঘুমিয়ে পরে। কুহু তার
অন্য রোগীদের দেখে এসে ব্রেক নিতে যায় ।
কুহু ছোট বেলায় কিছুদিন গান শিখেছিল তাই সব সময়ই গুন গুন করে গান গায় ।
রুগিরা খুশি হয়।রুগিদের সাথে সে কখনো কখনো সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় কথা
বলে ।সিলেটি বিয়ের গীত শুনায়। ওরা হাতে তালি দেয়।এমন ভাব করে যেন সবই
তারা বুঝে। এখানে এদের বয়স এত বেশি যে অনেকেই মেশিন ছাডা কানেও শুনতে পায়
না।তাই এদের কাছে কুহুর ভাষা তেমন জরুরী না। তার হাতের ছোঁয়াটাই
জরুরী।কুহুর এত বছরের হাতের স্পর্শ এদের সবার কাছে পরিচিত ।এখানের রুগিরা
কুহুর গায়ের গন্ধ চেনে। একদিন কাজে না আসলে এরা অন্য নার্সদের অস্থির করে
তুলে।
দশ মিনিটের ব্রেকে নিয়ে ফিরে এসে
কুহু সামারার পাশে বসে আবারো তার হাত ধরে বসে গুন গুন করে গান গায় ।
"বড়লোকের বেটি লো লম্বা লম্বা চুল, এমন মাথায় বেঁধে দিব লাল
গেন্দা ফুল ।"
এই গান অনেক পুরানো ।এত দিন গান টা ভালো মত শুনি নাই কেন!? কে জানে ।যেই
রিমিকস হলো এখন সবার মুখে মুখে ।
কুহু আট বছর ধরে এই সিনিয়র সেন্টারে কাজ করে। সে শুরু থেকেই রাতের শিফটে
কাজ করে। রাত দশটা থেকে ভোর সাতটা পর্যন্ত কুহুর ডিউটি ।কোন দিন কেউ মারা
গেলে কুহু ঘন্টা দুয়েক বেশি কাজ করে।কুহুর স্বামী রাহাত দিনে কাজ করে । সে
ও রেজিস্টার্ড নার্স । কুহু রাহাতের সতের বছরের সংসারে অনেক চেষ্টা করেও
কোন সন্তান হয় নি ।তাদের সন্তানবিহীন জীবন বড়ই একাকীত্বের । তবে তাদের এ
নিয়ে কোন অশান্তি নেই।এই হাসপাতালের বৃদ্ধ মানুষগুলি তার কাছে সন্তানের
মতই মনে হয় ।তাই সে যত পারে কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে।রাহাত অনেক দেশে যেতে
চায়,কিন্তু কুহু এই সিনিয়র সেন্টার ফেলে দেশে যেতে চায় না।বেশ কয় বার
রাহাত একাই দেশে থেকে ঘুরে এসেছে।
কুহুর ডিউটি রুমের পাশেই আছে হিমায়িত লাশ রাখার ঘর । ঘর তো না মানে বিশাল
ফ্রিজ ।প্রতিদিনই কেউ না কেউ কে কুহুরা গোসল দিয়ে ঐ ফ্রিজের ড্রয়ারে
রেখে আসে।কুহু লাশ ধোয়ানোর সময় মনে মনে দোয়া পড়ে ।দেশে তার নানীর
মৃতদেহ গোসল দেয়ার সময় সে পাশে ছিল । মুসলিম নিয়ম মতে নারীদের মৃতদেহ
গোসল করানোর কিছু নিয়ম সে শিখেছে ।সেই শেখা নিয়ম এখানে এদের উপর
প্রয়োগ করে । কুহুর ধারনা মানুষ মারা গেলে সবার আত্মা একই জায়গায় যায়
।
মাঝে মাঝে কুহুর কাছে এদের দেহ মৃত বা জীবিত সমানই মনে হয়।যাদের নিশ্বাস
আছে তারা ও কথা বলে না ।চুপচাপ শুয়ে থাকে। শুধু শ্বাস নালী টা উঠানামার
কারনে বুঝা যায় কে জীবিত। এই রুমে সব রুগীরা সিরিয়াস ।কেউই ভালো হয়ে
উঠে না।এ যেন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষায় থাকা ।
কেউ মারা গেলে পরিবার কে একটা কল দিয়ে কর্তৃপক্ষ জানায় সাথে ফাইলে রাখা
ঠিকানায় একটা চিঠি পাঠায়। দশ পনের দিন পর কারো ছেলে মেয়ে বা ভাই বোন
আসে ।অনেকেই না এসে ক্লিনিকের বিল পাঠিয়ে দেয়। এখান থেকেই কবর দেবার
ব্যবস্হা করা হয়।
এই সিনিয়র সেন্টারের রুগিদের বয়স পঁচাত্তর থেকে একশর উপরে ।কুহু এখানে
সবার প্রিয় নার্স ।কুহু ছাডা এখানের বয়স্কদের কেউ পরিস্কার করতে পারে না।
রুগিরা রাজি হয় না ।এমনিতে এরা কথা কম বলে । কিন্ত কেউ গায়ে হাত দিলে
কুহু কুহু করে ডাকা শুরু করে । তাই এদের গা পরিস্কার, চুল আচঁড়ানো , নোখ
কাটা সব কাজই কুহু হাসি মুখে করে যায় । তারা হাসি দিয়ে জানান দেয় তারা
হ্যপি। জীর্ণ শীর্ণ দুর্বল রগতোলা হাত তুলে কুহুর মাথায় হাত রাখে।তারা
বিশ্বাস করে কুহুর হাতে যাদু আছে।সে তাদের শরীরে হাত দিলে তাদের ক্লান্তি
দুর হয়ে যায়।কুহুর নিজের মায়ের জন্য মন খারাপ হয় । কুহুর ছোট বেলায়
বাবা মারা যায় আর মা মারা যায় একা ঘরে নানার বাড়িতে ।কুহু সেই থেকে দেশে
যায় না ।
সেদিন "যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে " গান শুনে সামারা যে ঘুমিয়ে
পড়েছিলো , তার সেই ঘুম ভাঙেনি ।সামারা আর জেগে উঠেনি ।তাহলে কি সত্যিই
সামারা কাউ কে কুহুর পেছনে দেখতে পেয়েছিল?কুহুর মাথায় আসে না তাহলে
সত্যিই কি আজরাইল কে মৃত্যুর সময় দেখতে পাওয়া যায়? কুহু ভাবতে থাকে
,সেদিন কুহু দশ মিনিটের ব্রেক না নিলে কি সামারাকে আরো কিছু দিন সে গান
শুনাতে পারতো !?কুহুর ব্রেক টাইমে সামারা কে একা পেয়ে আজরাইল তার জান কবজ
করেছে?
সেই থেকে কুহু এখন নিজেই নিজের পেছনে কাউকে টের পায়।
সে এখন সবার পেছনে কেউ কে দেখতে পায়।সে টের পায় তার পেছন পেছনে কেউ হেটে
চলে।কেউ এখন তার ছাঁয়া সংগী ।কুহু তার সাথে কথা বলে । কুহু সেই ছায়ার
সাথে গান করে।
রাহাত কে বলে হু ইজ বিহানড ইউ?
রাহাত তাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করায়।কুহু এখন নাচে গানে মুখর করে রাখে
হাসপাতালের অন্য রোগীদের।
নীহার সুলতানা
মনিজা রহমান
’নজরুল ইসলামকে চিনতে তো তুমি, তাই না!’ সজল ভাইয়ের প্রশ্নের মধ্যেই যেন
উত্তর লুকিয়ে আছে। উনি প্রায় নিশ্চিন্ত হলেও আমি শুরুতে ঠাহর করতে পারি না
‘নজরুল ইসলাম’ কে? নামটা এত সাদামাটা আর কমন যে প্রথমে শুনে কবি কাজী নজরুল
ইসলাম ছাড়া আর কারো নাম মাথায় আসে না।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে সজল ভাই আবার সরব হন। ‘ওনার ডাক নাম সুমন। উনি গান
গাইতেন তোমাদের সংগঠনে! চিনতে পারছ না?’
’ও সুমন ভাই! চিনব না কেন? আপনি এমনভাবে নজরুল ইসলাম বললেন, বুঝতে পারছিলাম
না- কে না কে!’
’মঞ্জরী’ নামে আমাদের একটা গানের সংগঠন আছে জ্যামাইকাতে। পুরনো দিনের বাংলা
গান গাই আমরা। নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে আছে আমাদের দলের
শিল্পীরা। তবে কুইন্সের জ্যামাইকার বাসিন্দা বেশী। আমার নিজের বাসাও
জ্যামাইকার পারসন বুলভার্ডে। সুমন ভাইও আশেপাশে কোথাও থাকতেন। হাসি খুশী
অতি আবেগী ধরনের মানুষ। আজকালের দিনে এত আন্তরিকতা কারো মধ্যে দেখা যায় না।
এমন একটা মানুষকে আমেরিকার সরকার ডিপোর্ট করে দিতে পারে ভাবাই যায় না।
’ওনাকে কেন ডিপোর্ট করা হয়েছিল জান?’ সজল ভাই জানতে চান।
’ আমি যত দূর শুনেছি, ওনার বৈধ কাগজপত্র নাই সেই কারণে।’ উত্তরে বলি আমি।
’কিন্তু এত বছর পরে এসে হঠাৎ ওনার বৈধ কাগজপত্র নিয়ে টানাহ্যাচড়া পড়ল কেন?’
সজল ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তরে কি বলব বুঝতে পারি না! আমি আসলে ওনার
ডিপোর্টশনের ব্যাপারটা এতটা খতিয়ে ভাবিনি।
’আমি খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি, উনি মিথ্যা নাম নিয়ে আমেরিকান সরকারের কাছে
রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন!’ সজল ভাইয়ের কথাটা আমার কানে রীতিমত বোমার মতো
বিস্ফোরিত হয়।
’ কিন্তু, কিন্তু ওনাকে তো তেমন মানুষ মনে হয় না!’ আমার কণ্ঠে এবার হালকা
অনিশ্চয়তা কাজ করে। পরমুহূর্তে ভাবি আসল এইটুকু পরিচয়ে একজন মানুষকে কতখানি
চেনা যায়! উনি আমাদের দলের কোরাস গানের শিল্পী। তাল-লয় জ্ঞান বেশ ভালো
ওনার, তবে কণ্ঠে সুর তেমন লাগে না। আমি নিজে মধ্যম মানের শিল্পী। যদিও
নিউইয়র্ক শহরে যারা অনুষ্ঠানাদিতে নিয়মিত আসে আমাকে সবাই এক নামে চেনে।
কণ্ঠ যেমন হোক, আমার চেহারা খারাপ না। বিশেষ করে সাজলে একদম চেনা যায়না!
সেখানে সুমন ভাই বলতে গেলে সবার কাছে অচেনা ছিল। কিন্তু ডিপোর্টেশনের খবরটা
তাকে রাতারাতি বিখ্যাত বানিয়ে দিয়েছে। সেই বিখ্যাত হবার আনন্দ তিনি উপভোগ
করতে পারেননি। তাকে চলে যেতে হয়েছে বাংলাদেশে।
নিউইয়র্ক শহর থেকে প্রকাশিত সব বাংলা পত্রিকা নিউজটা লিড করেছে।
প্রতিবেদকরা এমনভাবে লিখেছেন যে পাঠকের মনে সহানুভূতির উদ্রেক ঘটবেই। আমার
নিজেরও মন আর্দ্র হয়েছে। সুমন ভাইকে নিয়ে ছোট খাট আনন্দের স্মৃতি মনে
পড়েছে। নিউইয়র্কে থেকে যাওয়া ওনার স্ত্রী ও তিন পুত্রের জন্য মন খারাপ
হয়েছে।
’তোমাকে কাল কিছু ছবি দেখাতে চাই। তোমার লাঞ্চ টাইম দুপুর একটায় না?’ সজল
ভাই জানতে চান।
ঢাকায় থাকতে কলেজে পড়ার সময় সিদ্ধেশ্বরীতে একটা কোচিং সেন্টারে পড়তাম আমি।
সজল ভাই সেই কোচিং সেন্টারে পড়াতেন। নিউইয়র্কে এসেও তিনি কোচিং সেন্টার
নিয়ে আছেন। উচ্চাকাঙ্খাবিহীন, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে বেড়ানো মানুষের
তালিকা করলে- সজল ভাইয়ের নাম এক নম্বরে থাকবে। এখন নাকি আবার মানুষকে
ড্রাইভিং শেখান। প্রতি আধ ঘন্টা লেসনে পঁয়ত্রিশ ডলার নেন। কিন্তু, আমাকে
ফ্রি শেখাবেন বলেছেন।
আমার ডাক্তার অফিসে সারাদিন উপচে পড়া রোগীর ভিড় থাকে। শুধু বাঙালি না,
হিসপ্যানিক, আফ্রিকান, গায়ানিজ, শিখ, নেপালী সবাই আসে। লাঞ্চ টাইম এক ঘন্টা
হলেও সেটা উপভোগের সুযোগ নেই। তবে কাজের পরিবেশ ভালো হওয়াতে গত সাত বছর ধরে
এখানে মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে আছি। আজকে মোবাইলে এরোপ্লেন মোড দিয়ে
বের হলাম। কেউ আমাকে ফোন করলে পাবে না। অবশ্য এ্যালার্মও দিয়ে রেখেছি। এক
ঘন্টা হবার মিনিট পাঁচেক আগে মনে করিয়ে দেবে।
সজল ভাই দুই বাক্স জায়রো আর পানি নিয়ে এসেছেন। নিউইয়র্ক শহরে সব জাতির
মানুষের মধ্যে জায়রো খাবারটা খুব প্রিয়। ছেলে-বুড়ো সবাই খায়। আমার অবশ্য
খেতে খেতে আর ভালো লাগে না। সজল ভাই মন খারাপ করবেন দেখে কিছু বললাম না।
বেচারার চেহারা কালো, তারওপর মাথার চুল আগে থেকে কম। এখন তো কয়টা চুল গোনা
যায়। চেহারাটা কালো হওয়াতে একটা ভালো দিক হল বয়স কত বোঝা যায় না।
’তোমাকে আজ একটা চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের খবর বলব। ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৬ সালে।
বিচিত্রায় তখন এটা নিয়ে কভারস্টোরি করেছিল। পুরো দেশে আলোড়ণ তুলেছিল সেই
স্টোরি।’ সজল ভাই জায়রোর প্যাকেট খুলতে খুলতে বলেন। ১৯৭৬ সাল! সে তো প্রায়
চুয়াল্লিশ বছর আগের ঘটনা। সজল ভাই তখন বিচিত্রা পড়তেন! ওনার বয়স তাহলে কত!
আমার মেডিকেল অফিসের সঙ্গে একটা পার্কে বসেছি আমরা। সময় বাঁচাতে কোন
রেস্টুরেন্টে যাইনি। এটা সজল ভাইয়ের বুদ্ধি। ওনার মধ্যে একটা পাগলামি আছে,
সেটা আমার মতো কেউ জানেনা। অদ্ভুত সব বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি করা ওনার স্বভাব।
’১৯৭৬ সালে আপনার বয়স কত ছিল সজল ভাই? আপনি তখন বিচিত্রা পড়তেন?’ আমি সত্যি
বিস্মিত। আমার বিস্মযে সজল ভাই সারা শরীর দুলিযে হাসেন। ওনার চেহারায় একটা
লালচে আভা খেলে যায়। শেষে বেশ লাজুক একটা হাসি দেন। আসলে ওনার আজাইরা গল্প
শোনার মতো মানুষ আমার মতো খুব বেশী নেই।
‘আরে না না তখন আমি প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র। বড়দের নিউজ পড়ার মতো সময় তখনও
হয়নি। আমার আম্মা সব বিচিত্রা জমিয়ে রাখতেন। শুরুতে আমি শুধু পাতা উল্টে
ছবি দেখতাম। পুরো লেখাটা পড়ি ১৯৮৭ সালে। টানা ছয় মাস ধরে হত্যাকান্ড নিয়ে
টানা ফলোআপ বের হত। সজল ভাই একটু দম নিয়ে দুই চামচ খাবার মুখে চালান দিয়ে
বলে ওঠেন, ‘ ৪০ নম্বর পাতায় একটা কংকালের ছবি ছিল। ছবিটা নীহার সুলতানার।
ওকে খুন করা হয়েছিল।’
’নীহার সুলতানা কে?’ সজল ভাইয়ের যে আবেগ নিয়ে আমাকে কাহিনী বলতে ছুটে
এসেছেন, তাতে যাতে আঘাত না লাগে এ কারণে অত্যন্ত মনোযোগী শ্রোতার মতো
প্রশ্ন করি আমি।
’নীহার সুলতানা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন দ্বিতীয় বর্ষে পড়তো। পুরো
ক্যাম্পাসে সবচেয়ে সুন্দরী ছিল ও। নীহার সুলতানার বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ
হয়েছেন। বড় বোন ডাক্তার্ ছিল। নীহার সুলতানাকে ভালোবাসতো ওর এক সহপাঠি
সুমন। সেও বড়লোকের ছেলে ছিল। ও সবার কাছে নীহার সুলতানাকে প্রেমিকা পরিচয়
দিত। কিন্তু নীহার ওকে সেই চোখে দেখতো না।’
’ তারপর কি হল?’ ক্রমে কৌতুহল বেড়ে যাচ্ছে আমার।
’ নীহারকে সুমন ওর বাসায় এক পার্টিতে ডেকে বন্ধুদের নিয়ে হত্যা করেছিল।
আসলে কেউ ওরা পেশাদার খুনী ছিল না। শাড়ির আঁচল নীহারের গলায় পেঁচিয়ে ওকে
সুমন বলেছিল- বিয়েতে রাজী হতে। নীহার রাজী হয়নি। তারপর ফাঁসের জোর বাড়াতে
থাকে। বুঝতে পারেনি নীহার মারা যাবে। নীহারের শ্বাসবন্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে
ঢোলে পড়লে ওরা দিশেহারা হয়ে যায়। সুমনের বাড়ির নাম ছিল আমিনা মনজিল। বাড়ির
পিছনে মাটি খুড়ে নিহারের লাশ পুতে ওপরে সিমেন্ট দিয়ে দেয়। পরে সুমন পালিয়ে
বিদেশে চলে যায়।’
’ পরে কিভাবে নীহারের খুনীরা ধরে পড়ল?’ আমার কণ্ঠে রহস্য রোমাঞ্চকর গল্প
পড়ার উত্তেজনা।
‘১৯৭৬ সালের ২৭ জানুয়ারি নীহার সুলতানাকে খুন করা হয়। জুনের দিকে লাশ ওঠানো
হয়। বাংলাদেশে আলোড়ণ তুলেছিল হত্যার ঘটনা। তখন প্রায় সবাই এই খুনের ঘটনা
জানাতো। সারা দেশে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল হত্যাকারীদের প্রতি।।
হত্যাকারী তিনজনের মধ্যে শরীফুল হক নামে একজন ছিল। সে রাজস্বাক্ষী হতে রাজী
হয়। ওই সব কিছু বলে দিয়েছিল। আর সুমনের সঙ্গী শামীম আহমেদ মিলু ধরা পড়েছিল।
ওর ফাঁসি হয়।’
’কি বলেন! আসল আসামীর বাদ দিয়ে বন্ধুর ফাঁসি হয়েছিল?
’সুমন বিদেশে পালিয়ে যাবার কারনে বেঁচে যায়। মিলু ধরা পড়ার পরে চারবার
সুযোগ পেয়েছিল পালিয়ে যাবার। কিন্তু সে পালায়নি। সে বলতো, আমি তো কোন অপরাধ
করিনি। আমার ফাঁসি হবে না। কিন্তু ১৯৮২ সালে মার্শাল ল আইনে প্রেসিডেন্ট
এরশাদ গালকাটা কামালসহ কয়েকজনকে ফাঁসি দিয়েছিল। তখন শামীম আহমেদ মিলুর
ফাঁসি হয়ে যায়।
’সুমনের খোঁজ কেউ দিতে পারেনি?’
’’১৯৮৭ সালে যখন বিচিত্রায় নিহার সুলতানার হত্যার খবর পড়ি তখন আমি ঢাকা
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের ছাত্র। ওই বয়স থেকে সুমনের ওপর আমার খুব রাগ
ছিল। পরে নানাভাবে আমি ব্যাক্তিগতভাবে চেষ্টা করেছি সুমনকে খুঁজে বের করার।
একটা জলজ্যান্ত মানুষ সারা পৃথিবী থেকে হাওয়া হয়ে যেতে পারে না। সে মারা
গেলেও তো মানুষ জানবে। কেউ বলে সে সুইডেনে গেছে, কেউ বলে জার্মানী, কেউ
আমেরিকা- কিন্তু আসল খবর কেউ দিতে পারে না। যুদ্ধপরাধী ট্রাইব্যুনালে সরকার
পক্ষে প্রসিকিউটর ছিলেন এনামুর রেজা দিপু। উনি আমার বন্ধুর বড় ভাই ও
চট্টগ্রাম শহরের মানুষ। নীহার সুলতানা হত্যা মামলার ঘটনায় উনি আসামী
পক্ষের উকিল ছিলেন। ওনাকে বহুবার বলেছি ঘটনাটা নতুন করে তদন্ত করার। কিন্তু
উনি এড়িয়ে গেছেন।’
‘এই ঘটনার সঙ্গে ডিপোর্টেড হওয়া সুমন ভাইয়ের সম্পর্ক কি?’ জায়রো পছন্দ না
করেও এতক্ষণে আমার প্যাকেট খালি। প্রচন্ড খিদে লেগেছিল বুঝতে পারি। সজল
ভাইয়ের অর্ধেকও খাওয়া হয়নি। কথা বলতে বলতে খাওয়ার কথা উনি ভুলে গেছেন।
’সেটা বলার জন্যেই তোমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। নীহার সুলতানার হত্যাকারী
নজরুল ইসলাম সুমনের সঙ্গে কারো ভালো নাম, কারো ডাক নাম, কারো বা মিডল নাম
মিলে গেছে। কিন্তু পুরো নাম মিলেছে এমন মানুষ বিরল। কিন্তু তোমাদের গানের
দলের সুমন ভাইয়ের সঙ্গে পুরো নাম এক। অবাক ব্যাপার হল দুজনের বয়সও
কাছাকাছি। দুজনের দেশের বাড়ি চট্টগ্রামে একই এলাকায়। দুজনেই আবার চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।’
’অবাক কান্ড! অনেককিছু দেখি মিলে যাচ্ছে!’ যদিও আমার বিশ্বাস হয় না আমাদের
ডিপোর্টেড সুমন ভাই নীহার সুলতানার খুনী হতে পারেন! আমার ভাবনাকে খান খান
করে মোবাইলে দেয়া এ্যালার্ম বেজে উঠে। আমি তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়াই। সজল ভাই
আমাকে খালি হাতে বিদায় দেন না। নীহার সুলতানা হত্যার ঘটনায় বিচিত্রার
রিপোর্টের কয়েকটা ফটোকপি দেন। নীহার সুলতানা আর খুনী সুমনের কয়েকটা
সাদাকালো ছবিরও প্রিন্ট আউট দেন।
ডাক্তার অফিসে ফিরেও নীহার সুলতানা আমার পিছু ছাড়ে না। বাসায় যাবার পরেও।
দিনে রাতে, এমনকি ঘুমিয়ে স্বপ্নের ভিতর নিস্পাপ মেয়েটার মুখ দেখি। নাচ
শিখেছে ছোটবেলায়। তারপর ছবি আঁকতো। বাড়ির সামনে বাগান করতো। এত সুন্দর
সম্ভাবনাময় একটা মেয়ে। এভাবে খুন হয়ে গেল! তার হত্যাকারী এখনো নিখোঁজ।
এই প্রথম সজল ভাইয়ের কোন কাজের যথার্থতা খুঁজে পাই। অতীতে উনি কখনো এভাবে
আমাকে প্রভাবিত করতে পারেননি। এমনকি সেই কলেজে পড়ার বয়সেও নয়। তখন তো ওনার
চেহারা আজকের চেয়ে একটু ভালো ছিল।
’আপনি কি আর কিছু জানতে পেরেছেন সজল ভাই?’ সন্ধ্যাবেলা এই বিষয়ে দুজনের কথা
বলা এখন নিয়মিত রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
’ঘটনাটা ঘটেছিল আজ থেকে ৪৪ বছর আগে। তখনকার চেহারার সঙ্গে নিশ্চয়ই এখন কোন
মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবু আমি চেষ্টা করছি।’ সজল ভাই জানান।
’ওই যে প্রসিকিউটর দীপু ভাই উনি কোন সাহায্য করতে পারবেন না?’ আমি জানতে
চাই।
’উনি রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। ওনার সময়
নেই।’ সজল ভাই উত্তর দেন।
’কাউকে পাওয়া যায় না যিনি এই নজরুল ইসলাম সুমনকে ব্যাক্তিগতভাবে চিনতেন?’
আমি বিষয়টার গভীরে যেতে চাই। আসলে আমি ও সজল ভাই দুজনে নিউইয়র্কে থাকাতে
ঘটেছে বিপত্তি। নয়তো দুজনে চট্টগ্রামে গিয়ে সরাসরি বিষয়টা তদন্ত করতে
পারতাম।
বিচিত্রায় তখন সিরিজ রিপোর্ট করেছিলেন দৈনিক বাংলার সেই সময়ের রাজশাহী
প্রতিনিধি শফিকুর রহমান মন্ডল। সজল ভাই ওনার সঙ্গেও যোগাযোগ করে ডিপোর্ট
হওয়া সুমন ভাইয়ের ছবি পাঠিয়েছেন। শফিক ভাই বলেছেন, উনি ছবি দেখে নিশ্চিত
হতে পারছেন না।
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পুরো বাংলায় আলোড়ণ তুলেছিল তখন এই হত্যার ঘটনা।
কিন্তু কেউ কোনভাবে হত্যাকারীকে ধরতে পারল না। আমি নানাভাবে ডিপোর্টেড সুমন
ভাইয়ের সঙ্গে হত্যাকারী সুমনের চেহারা মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করি। হত্যাকারী
সুমনের কম বয়সের সাদাকালো ছবিটা বারবার দেখি। মুখটা চারকোনা আকৃতির। আমাদের
সুমন ভাইয়ের মুখটা একটু লম্বা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখের গঠন পাল্টে
যেতে পারে। নয়তো দুজনের এত মিল। একই নাম। একই এলাকার মানুষ। আবার একই
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন।
সারাদিন খুটিয়ে খুটিয়ে ভাবতে থাকি আমাদের সুমন ভাইয়ের আচরণগুলি। কোথাও কোন
অস্বাভাবিকতা চোখে পড়েছে কিনা! আঁতিপাতি করে খুঁজেও কিছু পাই না। তবে উনি
বেশ আবেগপ্রবণ মানুষ ছিলেন। গান গাইতে গাইতে একদম তন্ময় হয়ে যেতেন। আবেগের
মাথায় মানুষ অনেক কিছু করতে পারে! আর তাছাড়া খুনী সুমনের আগের কোন অপরাধের
রেকর্ড ছিল না।
প্রকৃতিতে এখন রঙের মৌসুম চলছে। মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়ির মতো সেজেছে চারদিক। এ
যেন নিভিবার আগে প্রদীপ জ্বলে ওঠার মতো। আর কিছুদিন পরে শীতে শুস্ক ও
পত্রহীন হয়ে পড়বে সবকিছু।
আমার ডাক্তার অফিসের পাশে সেই পার্কে আমরা বসেছি দুইজন। সজল ভাই দুই কাপ
স্টারবাকস কফি নিয়ে এসেছেন। উনি কখনও খালি হাতে আসেন না। এখন আমার কাজ শেষে
বাড়ি যাবার সময়। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আবার আমার অনলাইনে নার্সিংয়ের ক্লাস
শুরু হবে।
’সজল ভাই, কালকে আমি সুমন ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলাম। ভাবীকে আগে বলেছিলাম
আসব। রবিবার ভাবীরও ছুটি থাকে। ওনার তিন ছেলের জন্য অনেক খাবার দাবারও নিয়ে
গিয়েছিলাম।’ কথাগুলো বলতে বলতে কেমন অপরাধে আক্রান্ত হই। ভাবী ভেবেছেন আমি
ওনাদের স্বান্ত্বনা দিতে গিয়েছি। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য যে গোয়েন্দাগারি,
সেটা তো তাকে বলা যাবে না। আমি এমনকি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছি সুমন ভাইয়ের তিন
ছেলেকে। কারো সঙ্গে খুনী সুমনের চেহারায় মিল আছে কিনা! ছেলেদের সঙ্গে অনেক
সময় বাবার কম বয়সের চেহারার মিল থাকে।
’কিছু পেয়েছ সেখানে?’ আমাকে চুপ থাকতে দেখে সজল ভাই বলে ওঠেন।
’ভাবীকে বলে ওনাদের পুরনো এ্যালবাম দেখলাম। সুমন ভাইয়ের কম বয়সের ছবি ছিল
সেখানে প্রচুর। কোন ছবির সঙ্গে নীহার সুলতানার হত্যাকারীর চেহারায় কোন মিল
নেই। আমি সাদাকালো ছবিই দেখেছি। আর তাছাড়া আমাদের সুমন ভাই নিউইয়র্কে
এসেছেন ১৯৮২ সালে। মানে ওই ঘটনার ছয় বছর পরে।’ আমি আস্তে আস্তে বলি।
’হত্যাকারী সুমন ছয় বছর অন্যান্য দেশ ঘুরেও নিউইয়র্কে আসতে পারেন।’
মন্ত্রীর ফিতা কাটার মতো আমার কথার মধ্যে বলে ওঠেন সজল ভাই।
’বিষয়টা আমারও মাথায় এসেছে। উনি ওই ছয় বছর বাংলাদেশে ছিলেন। সবার নাকের
ডগাতে ছিলেন। আর উনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্সও সম্পন্ন
করেছেন। ওনার বিয়েও হয়েছিল চট্টগ্রামে। সেই ছবিও দেখেছি।’ গোয়েন্দার
সহকারীর মতো কথাগুলি বলি আমি।
’তাহলে কোন সন্দেহ নেই। গ্রেট। আমার মনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে একটা সংশয়
ছিল। তোমার কথাতে কেটেছে। আর শোন তুমি কিন্তু একটা ভালো কাজের জন্য
গোয়েন্দাগিরি করেছ। এতে অস্বস্তিবোধ করার কিছু নাই।’ সজল ভাই আমার শ্যামলা
শীর্ণ হাতের ওপর আলতো চাপ দিয়ে বলেন।
বাতাসে ঝরা পাতাগুলি উড়ে এসে জমে আছে আমাদের বেঞ্চির সামনে। মনে হচ্ছে
প্রকৃতির গালিচা। আমি সেই গালিচায় পা রেখে মচমচ তুলে সজল ভাইয়ের দিকে
তাকিয়ে হাসলাম।
আমার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে সজল ভাই বলেন, ‘বাদ দাও ওই সব। আচ্ছা, তুমি যে
কত বিভিন্ন জায়গায় গান-টান গাও। কই আমারে তো একদিনও গান শুনাইলা না!’
সজল ভাইয়ের কথায় আমার হাসি আরো বেড়ে যায়।