টরন্টো, ৬ই মাঘ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, নভো সংখ্যা ১৬ 
              
হোমপেজ সম্পাদকীয় পাঠক পরিষদের কথা কবিতা ছোট গল্প ধারাবাহিক পাঠাগার আর্কাইভ লেখক পরিচিতি অনুবাদ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল যোগাযোগ আবৃত্তি

কার্তিকের কুয়াশা

কবিতার পাতা

তোমাকে ভালোবাসি
শায়লা আজীম


তোমাকে আমি ভালোবাসি,আমার নিঃশব্দ নিশ্বাসের
উচচতায় আর গভীরতায়—
তোমাকে ভালোবাসি এক টুকরো মোমবাতির নরম আলোয়,
তোমাকে আমি ভালোবাসি বিশুদ্ধ বাতাসের মতো একেবারে
স্পর্শের বাইরে ,
তোমাকে আমি ভালোবাসি আমার পুরানো শোকের মাঝে আর আমার শৈশবের বিশ্বাসের সাথে ।
তোমাকে আমি নির্দ্বিধায় ভালোবাসি প্রতিদিনের সূর্য উঠার মতো ,
তোমাকে আমি ভালোবাসি বিনম্র ভালবাসার আড়ালে বেড়ে উঠা লোকালয়ে
তোমাকে আমি ভালোবাসি সুনসান নীরবতায় সাধু সন্যাসীদের ধ্যানের মতো
তোমাকে আমি ভালোবাসি লম্বা এক নিঃশর্ত কাবিননামায়❤️❤️❤️❤️

তোমাকে আমি ভালোবাসি সারাজীবনের হাসি,কান্না আর এক
শত উষ্ণ্ন চুম্বনে——-
তোমাকে আমি ভালোবাসি এখনো আরো অনেক বেশী ভালোবাসবো মৃত্যুদণ্ড পেলেও ——-তোমাকে আমি শুদ্ধ ভালবাসি❤️❤️❤️❤️❤️


ডিসেম্বরের প্রথম প্রহর ২০২০

 

অলিখিত রূপকথা

মধুবন্তী আইচ 

শীতের নিশ্চুপ দুপুরে সুর্য্যের ওম নিয়ে
একমুঠো নরম রোদ্দুর চুপিচুপি এলো নেমে...
গুটিগুটি পায়ে আসা গোধূলির একঢাল কোঁকড়ানো কালো চুলে
ছড়িয়ে পড়লো ভাঙা কুসুমের মত উষ্ণ সেই রং।
সীমন্ত রাঙিয়ে দিগন্ত ছুঁয়ে আঁকা হলো ছায়াপথ---সূর্য্যাস্তের অভিমুখে।
দু'চোখের তারার গভীরতায় গাঢ় নীলরঙের ঘূর্নির তালে বাজে আজ বানভাসি সুর,
নাম-না-জানা ফুলের রেণু মেখে অবাধ্য বাতাস
ঠোঁট রাখলো নদীর গোপন বাঁকে,
তিরতিরে ভালোলাগা ঢেউয়ের ওঠাপড়ায়
ইচ্ছের শালতি পাড়ি জমিয়েছে দূর উজানের টানে...
দাঁড়ের মাথায় জ্বলে-নেভে জোনাকির সবুজ লণ্ঠন,
জ্যোৎস্না মত্ত লুকোচুরি খেলায় মেঘেদের পাড়ায়।
ভাটিয়ালির মদিরতায় ছইয়ের আবছায়া আলো-আঁধারিতে
নেশাতুর মন বুঝি মুখ লুকোলো বুকের মাঝে!
চোখের পাতার আলতো ছোঁয়ায় রাতের শেষ প্রান্তরেও জেগে থাকে প্রেম।
বুকের ভিতর খুনসুটি মন মথিত হয় আবদারের আহ্লাদি নিষ্পেষণে।
কুয়াশার হালকা চাদরের ভাঁজে আধ-ঘুমন্ত রাত্রির
উষ্ণ প্রশ্বাসে দোলে ঘাসফুল,
তার ঠোঁটের কোণে ছড়িয়ে পড়ছে গোলাপ পাপড়ির ভোর রাতের মখমলি স্বপ্ন।
শিশিরবিন্দুর প্রতিসৃত প্রথম কিরণে জন্ম নিলো দিনের অপত্য সন্তান,
আর পাখিদের ঠোঁটে আজানের সুরে পাতা ওল্টায়
এই শহরের চুপকথার রূপকথারা...

বয়ে যাক শুদ্ধ সমীরণ
শিউলী জাহান

মানুষ এবং প্রকৃতির সালোকসংশ্লেষণের বিশ্লেষণে নিভৃতচারী মন
শব্দের জটিল বিন্যাসের আভরণে নিঃশব্দচরণে চলে তত্ত্বের গূঢ় অনুসন্ধান,
জ্ঞান-সমৃদ্ধ ডিকশনারি বোঝে না,
অনুসন্ধিৎসু অনুমান এবং সত্যের মাঝে বিস্তর ব্যবধান
সেলুলয়েড এবং বাস্তবতার চিত্রে যেমন থাকে গ্লিসারিনের রাসায়নিক উপাদান।

স্মৃতি-বিস্মৃতির প্যাঁচে গণিত বিশারদ! মেলে না সহজ সমীকরণ!
নিয়তির দুষ্ট খেলায় খাঁটি সংস্কৃতিও কৃত্রিম মুখোশের আড়ালে হয় অন্তরীণ!
প্রকৃতিমাতাও আজ পথ পরিক্রমায় ক্লান্ত খাতা। ঠিক নিয়মে ওড়ে না ঝরাপাতা।
ফাগুনে চলে চৈত্রের বিলাপ! শীতার্ত রাত করে শ্রাবণের প্রলাপ!

আলো-আঁধারের সাক্ষী বটবৃক্ষসম কবির চিত্ত বড়ই চঞ্চল
অপঠন যোগ্য কাব্যের পঠন, কলমের রিক্ত-তিক্ত স্বাদে আসে শ্রান্তি!
অমিলের মাঝে খুঁজে বেড়ায় মিলের শ্লোক। নবীনের বিস্মিত চোখে মিশ্রিত বিস্ময়।

নিয়ত প্রার্থনা তবুও--হোক এলোমেলো; ছড়িয়ে থাকা যত্রতত্র
ঋতুচক্রের শাশ্বত ঘূর্ণিতে উড়ে যাক সময় অসময়ের ভ্রান্তি, জ্বরা-গ্লানি।
প্রাপ্তি আর ক্ষমার শুচিস্নানে বয়ে যাক শুদ্ধ সমীরণ বৈশাখ থেকে চৈত্র।

 

চিচিং ফাঁক

জেবুন্নেছা জোৎস্না

গোলাপ দোলে হাওয়ার পিঠে
গলছে হাওয়ায় হাওয়াই মিঠে।
আম-জনতার শব্দ ফিঁকে—
কোদলা মঠের চড়ুইখানা
খুঁজছে ফোঁকর ইটের ভিটেয়।

দিব্য চোখে দেখতে থাকি—
ভন-ভনিয়ে দোলে পৃথিবী!
দুলছো তুমি, দুলছি আমি
উল্টো পা’য়ে হাঁটছি জানি—
কিম্ভূতকিমাকার সে ও মানি।

জগত জোড়া ভন্ড-শালা
রোদ পোহাতে শিকের গালা।
খুলবে মুখোশ, ভাঙ্গবে তালা-
চিচিং ফাঁকের আলীবাবা,
আসছে ধেয়ে এবার পালা!

 

বোধিনিরালার সংলাপ
(লকডাউন পটভূমিতে হৃদয় আর্তি)

রওশন হাসান

রোদের কন্ঠহারে মাটিতে নেমে আসে আলোর ফুল
নরম ঘাসের বনজ ব্যাকুল গন্ধে জীর্ণ অন্তঃপুর
পাথর পলকে ভ্রাম্যমান মেঘ মুমূর্ষের জানালায় আপন করে নেয় প্রহরের মন্থরতা
হে নিঃসীম নগরী, কি গভীর শূন্যতায় করো হাহাকার l
বিষন্ন কোটরে বন্দী আমি, অঙ্গসঙ্গে অসীম গগনের l
কদমে কদম মিলিয়ে হাঁটবো বদল মওশুমে
সেতু টলমল, নীচে ঝিলের ঝলমলে নিতান্ত জল
আলগা বাতাসে গা ভাসিয়ে দূরান্তে ছুটে যেতে চাই
ছুটে যেতে চাই l

একঘেয়ে বাড়ির দেয়াল, মূর্চ্ছাবিহবল বইয়ের স্তুপ
উদাস ঝরে নির্জনতা, আপোষী তৃষ্ণার ক্ষয়
গভীর কৌতূহলে ফুটে আছে টিউলিপ, ড্যাফোডিল
যেমন ফুটেছিল অজস্র রডোডেনড্রন রঙিন গালিচার মতো, পাহাড়ের পাদদেশ জুড়ে, অনাথ বালকের অন্তর্নিহিত মায়ের গল্পে ম্যানভিল ছিলো এক অদৃশ্য মায়ের রাজ্য l
বনানী বৃক্ষ ছেয়ে পাখিদের কোলাহল ধূসর, লাল, হলুদ
পালকে ভর করে এদেশ ওদেশ, দিগন্তে মিলিয়ে যাওয়া গোধূলি ওম
আকাশের শেষরেখায় চোখ রেখে শ্বাস ফুরাবার আগে অশান্ত ছুটে যেতে চাই, ছুটে যেতে চাই l

বালিয়াড়ি ছুঁই ছুঁই পুরনো দিন, ডেজার্টেট ল্যান্ড
প্রতিটি মুহুর্তের ভেতর জীবন আঁকড়ে থাকা নিঃশ্বাস
সকালগুলো বন্দী ফুলদানিতে, সন্ধ্যা ক্যান্ডেলে পোড়ে
তুমুল খোলা তীর ঘেঁষে ছুটে যেতে চাই ছুটে যেতে চাই
স্রোতের সেতারে ঝিনুকের অনন্ত চুম্বনে
একঝাঁক অতল সৈকত গর্জন কুড়াতে চাই l


মাঝেমধ্যে
সাগর জামান

মাঝেমধ্যে বড় নিস্পৃহ হয়ে যাই।
তখন কিচ্ছু ভাল্লাগে না আমার।
স্তিমিত হয়ে পড়ি।
এই মাঝেমধ্যের বাইরের সবটুকু সময় সবকিছু ভালো লাগে। ভালোবাসতে ভালো লাগে,ঘৃণা করতে ভালো লাগে।
বেঁচে থাকতে ভালো লাগে,মরে যেতে ভয় লাগে না।
'মাঝেমধ্যে'টা মাঝেমধ্যেই হানা দেয়।
ওকে আমি পরবাসে পাঠাতে পারি না।
প্রায়ই ইচ্ছে হয় ওকে দড়িতে লটকে দিতে
দীপ্র ছুরি দিয়ে খুন করে ফেলতে
পারি না।
ওর উপদ্রব আমাকে সহ্য করতে হয় নীরবে
নিস্তার পাই না কোনোভাবেই।

 


একটি দ্বিধার জলে
গোলাম কিবরিয়া


সে রাতে বৃষ্টি হয়েছিলো খুব ।
সিক্ত অরণ্য অধরে শিহরিত চুম্বন এঁকেছিলো
এলোমেলো বাতাস ।
এমন রাতগুলো
বড়ো বেশি কাছে নিয়ে আসে তোমাকে ।
মনের আয়নায় বাঁধানো ছবির মতো
স্থির হয়ে থাকো তুমি ।
এ স্মৃতির ভার কেবলি আমার ।
এ আমার তোরঙ্গে তুলে রাখা অবেলার পুঁজি ।
এ তোমার নয় ।
তুমি মালঞ্চের সুরভিত একক গোলাপ
আমার অন্ধ চাওয়ার মাঝে
পেয়েছি যার সুবাস কেবল ।
একটি দ্বিধা জলের ফোঁটার মতো
শত সূর্যের উত্তাপে কেঁপেছে থরো থরো ।
সিংহের নিনাদিত হুতাশনে
বিমনা হয়েছে আমলকী বন ।
বোশেখের বিবাগী মেঘ
ঝরেনি বৃষ্টি হয়ে পর্বতের পাথর চোখে ।
দীঘির তৃষিত জলে
ভাসেনি কোন হিজল ফুলের সম্মতি ।
বৃষ্টির রাতগুলো এতো মুখর হয় কেন!
আজন্ম গ্রন্থিত আমাকে মোচন করে
ভেজায় বৃষ্টিগ্রস্ত ইচ্ছের বারিতে ।

 

শিউলি বকুল
সাইদুজ্জামান


বকুল ও শিউলি দুটোই লাগে
দুটোই আমার চাই,
প্রেমের কথা লিখবো কিসে-
কাগজ কালি নাই।

ভেবে ভেবেই দিন ফুরোলো
জীবন টলোমলো।

চেয়েছিলাম শিউলি বকুল দুই,
বুকের ব্যথা মনের হাতে ছুঁই,
দেখেছি কম নয় মালতী আর জুঁই,
আর কটা দিন ঐভাবে থাক তুই।

দুটোই লাগে - দুটোই আমার চাই,
শিউলি বকুল কেউই আমার নাই।
কেমন করে পাই -
তোমার বুকে আমার ছোট ঠাঁই।
টরন্টো, ডিসেম্বর ১৬, ২০২০