আমার মৃত্যু
জয়া চক্রবর্তী সোমা
আমার বাঁচার খোঁজ রেখেছে সবাই
আমার মরার রাখেনি কেউ খোঁজ
কেমন করে নিত্য আমি মরি
কেমন করে মরছি আমি রোজ।
অপমানে মরছে আমার মন
মরছে শরীর লোভের চোখে চোখে
বোঝাপড়ায় মরছে নৈতিকতা
মরছি আমি মৃত আমির শোকে
মরার পরের গলিত এই দেহ
বয়ে চলি তোমরা বল বাঁচা
পাখি তো নেই কেউ জানে না সেটা
সবাই খুশী রয়েছে শুধু খাঁচা
আমার বাঁচার খোঁজ রেখেছে সবাই
আমার মরার রাখে নি খোঁজ কেউ।
একটা সাগর সেও তো বেঁচে আছে
কে খোঁজ রাখে মরছে কত ঢেউ।
প্রেমিক চোখে চেয়েও মরি আমি
কে খোঁজ রাখে কোন সে চৈত্রমাস,
ভরসা ভাঙে তখন বোঝে নি কেউ
সেই মরাতে নীরব হাহুতাশ।
প্রেম মরেছে আবেগ পুড়ে খাক
আমার মৃত শরীর টেনে যাই
শ্বাস প্রশ্বাস গুণে গুণে বাঁচা
দীর্ঘশ্বাস উড়ছে কালো ছাই।
আমার মরণ বিশ্বাসটার মরা
আমার মরণ ক্ষুদ্র আমি ঘিরে
মৃত্যুর খোঁজ কেউ রাখোনি জেনো
বোঝে নি কেউ জীবন গেছে ফিরে
এমনি করে টুকরো টুকরো আমি
রোজ মরেছি মরছি প্রতিদিন
আমায় দেখে ভাবছ বুঝি বাঁচি
জীবণ আমার মৃত্যু চাওয়া ঋণ।
মান অভিমান
অরুণোদয় কুন্ডু
আজকে ভোরে আনমনে ওই
শিউলী তলার কাছে,
গিয়ে দেখি ফুলে ফুলে
নিচটা ভরে আছে।
শিশির পরে চিকচিকে ওই
ফুলের চোখের জল,
দিন ফুরোলেই আজকে কেন
ফিরবি মা তুই বল?
তোর জন্যে নীল আকাশে
পেঁজা তুলোর ভিড়,
কাশের বনে দোলা দিয়ে
হাসছে নদীর তীর।
তোর জন্য আজকে ভোরে
নীলকন্ঠ পাখি,
লুকিয়ে আছে কোন কোঠরে
থামিয়ে ডাকাডাকি।
সোনালী রোদে জ্বলছে হিরে
এখনো দূর্বাদলে,
কোন পাষাণীর হৃদয় রে তোর?
ফিরবি এ- সব ফেলে!
ফিরেই যদি যাবি সবার
মনটা খারাপ করে,
হিয়ার মাঝে ঢেউ তুলে
তুই আসিস কেন মারে?
নরম হাসি মাখিয়ে গালে
সন্তানে তার বসিয়ে কোলে
মা সুধোলেন "ছেলের আমার
কিসের অভিমান?
মা তো ফিরে ফিরে আসে
সারাবছর প্রতি মাসে,
সেদিক পানে তাকিয়ে থামা
কান্নাকাটির গান।
কোজাগরীর রাতে ঘরে
লক্ষ্মী হব কদিন পরে,
পক্ষ শেষে আঁধার রাতে
আসব নর মুন্ড হাতে,
আবার এঘর আলো করে
জগদ্ধাত্রী রূপে আসব ফিরে।
ধান পাকলে অঘ্রায়নে
আসব ওই নিকোনো উঠোনে,
সিদ্ধ ধানের মেদুর ঘ্রাণে
দিবি রে অঞ্জলী,
পরের মাসে উঠলে মূলো
হব পৌষ কালি।
মাঘ পয়লায় তোর আঙিনায়
অঙ্গন লক্ষ্মী হব আলপনায়,
কড়ি আর ধান, পায়েস পিঠে
মূলো আর সরষে ফুলেতে,
জ্বলবে সাঁঝের দিয়া।
তারপরে ফের বাসন্তী গাঁদায়
হব পলাশ প্রিয়া।
চৈত্র মাসের উদাস হাওয়ায়
দশ ভূজা হব বাসন্তী পূজায়
কখনো শীতলা, কখনো লক্ষী
নয় মঙ্গল চণ্ডী,
দক্ষিনা কালি, সুভদ্রা বা
মনসা, নয়ত ষষ্ঠী।
আসব ফিরে বারে বারে
চিন্তা করিস না,
সন্তানেরে ফেলে দূরে
কেমনে থাকে মা?
ঘরে বাইরে পথে ঘাটে
নগরে বন্দরে,
সন্মান ফুলে দিস পুজো মোর
সারা বছর ধরে।
পাবি খুঁজে অন্তরে তোর
লুকোনো খুশির সিন্ধু,
মোছাস যদি ঐ মায়েদের
গালের অশ্রু বিন্দু।
ওই শুনে দেখ বাজছে দূরে
বিসর্জনের ঢাক,
জগৎ জুড়ে সব মায়েদের
দুঃখের যত মূর্তি
আজ বিকেলে তোদের হাতেই
ভাসান হয়ে যাক।
পাশে থেকো
রত্না চক্রবর্তী
যদি তোমার আর কোন ক্ষমতা না থাকে
কারো জন্য কিছু করার,
যদি শুধু আঙ্গুলটুকু নড়ার মতো
ক্ষমতা থাকে
তবে অন্তত বুড়ো আঙ্গুলটা তুলো
জয়ের সংকেত হিসাবে,
সে ভাবে নাড়িয়ো না
যাতে মনে হয়
কিচ্ছু হবে না,
শুধু হার শুধু হার...
জগতের নিকুঞ্জ বনে
শিউলী জাহান
মুঠো থেকে জোনাকি ছেড়ে দিলেও
আলোটুকু মেখে রাখি হাতে,
গোধূলির রঙিন আভা ক্ষণিকের যদিও
রঙটুকু মিশে থাকে সেই প্রভাতে।
সাগরের পাড় ছুঁয়ে ঢেউ সরে গেলে
বালুতট অপেক্ষার অশ্রুজল আঁকে,
পাতাহীন বৃক্ষ যদিও বিষণ্ণ হাওয়ায় দোলে
জানে সে, সৌরভে চঞ্চল হবে বসন্তের ডাকে।
যেতে যেতে আমাদেরও ফিরে আসা থাকে
মানুষ যায় মানুষ আসে জগতের নিকুঞ্জ বনে,
এই যে তুমি, ঢেউয়ে ঢেউয়ে হারাও তৃষ্ণানদীর বাঁকে
ফিরে ফিরে আসো বৃষ্টি শেষে আবার রঙধনু মনে।
অস্ট্রিচ
- এইচ বি রিতা
লোহা-পাথর হজমে অস্ট্রিচ দৌড়ে যেতে যেতে ভাবে,
বিভোর ঘুমে পৃথিবী আজ জেগে দেখেনি
বরেণ্য প্রীতিতে চন্দ্রাহত জোছনা কেমন;
আঁধারকে গিলে খায়।
পাহাড় ঘুমুবে বলে মায়াবী চাঁদ
সমতলে নেমে যায় চুপিসারে কতদিন!
প্রদীপ নিভে গেলে অপার অভিসারে,
মহুয়া বনে শুকনো পাতা মাড়িয়ে যায় টিটি পাখী
বুকের ভিতর কান্না জমার আগেই বাষ্প হয়ে উড়ে যায়
সীমানা পেরুলেই,
প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ এক জোড়া শালিক;
স্বপ্নভঙ্গে পরাঙ্মুখ বিমর্ষ কেঁদে যায়।
গতিবেগে তূখোর অস্ট্রিচ জানেনা উড়ে যাওয়ার আহ্লাদ
বিকলতা সীমিতকরণে খেয়ে যায় আত্মার অর্ধেক
দ্বায়বদ্ধ মানুষ এমনি হামাগুড়িতে কীট-পতঙ্গ ঠেসে দেয় মুখে
মেনে নিয়ে ঈশ্বর সংবিধান;
জীবন তখনো স্বস্থির ঠিকানা খুঁজে।
এভাবেই প্রকৃতি মেনে নেয় বিপর্যয়
ঘুমুতে না পারা মানুষ একদিন চিরতরে ঘুমিয়ে যায়
নিঃশ্বাস গুনে গুনে যার অভ্যাস,
সেও একদিন গোঙ্গানীতে চুপসে যায়
এভাবেই গুটি কয়েক বসন্ত পেড়োলে;
চেনা শহর অচেনা হয়ে যায়।
ফুলতলা
সাইদুজ্জামান
শিউলি তলায় হাত পেতে আছি সারারাত,
মালবিকা দাও, আমাকে দাও পুষ্পপ্রপাত।
করতলে দাও সখি, শুভ্র স্তনে দাও কমলা বৃন্ত,
ওষ্ঠে ওষ্ঠ দাও, ভোর হয়ে এলো, দাও নরম নৃত্য।
হাত পেতে আছি, ঐ আসে অঘ্রান,
আমাদের উঠোনে উঠোনে অন্নের ঘ্রান,
একবার শুনে দেখো পাখিদের গান,
পুষ্পদেবী কোন পুষ্পে ভাঙাব তোমার মান ?
হাত পেতে আছি, এসো
করতল ভালোবেসো।
টরন্টো, নভেম্বর ০৭, ২০২০