বৃক্ষ
ফিরোজা হারুন
দিন যায়, ক্ষণ যায়
আমি যাই কোথা?
এক ঠাঁয় দাঁড়িয়ে
কাক পাখি তাড়িয়ে
কাল কেটে যায় বৃথা!
পত্র পল্লব দোলে মলয় হিল্লোলে
মধুকর মধু খোঁজে রঙিন সুবাস ফুলে।
পথিক আশ্রয় খোঁজে আমার ছায়ায়
মায়ার পরশ পেয়ে দেহটি জুড়ায়।
সাঁঝের আধাঁর নামে
ধরাধাম জড়িয়ে,
মিটিমিটি তারা হাসে
আকাশটি ছড়িয়ে।
আমি তাই, ভাবি হায়...।
গতিহীন তিমিরে,
বৃক্ষ যে আমি, বাঁধা আছে পা দু’খানি,
মৃত্তিকার গভীরে!
নভেম্বর ০৭,২০১৬
**************************************
পরিব্রাজক হয়ে উঠি প্রতিদিন
শিউলী জাহান
সিঁড়ির ধাপগুলো যেন বড় বেশি দীর্ঘ
দৃষ্টি মেলতে গিয়ে হোঁচট খেতে হয়।
আজকাল ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়াটাই
শাস্ত্র সম্মত হয়ে উঠেছে যদিও—
আমি পার হই নদী-হাওর-বিল;
প্রাচীন ঐতিহ্য চীনের কবিরা
যেভাবে লালন করেন।
জোহান্সবার্গের খনি শ্রমিকদের কথা
যেমন প্রতিদিন স্মরণে রাখি—
তার মানে এই নয় যে, আমার হাতেও
ঝরে পড়বে সোনা!
আমি নত হই প্রতিদিন
সকল সফলতা ও ব্যর্থতার শিশির নিয়ে
মিছিল ছাড়ি, পরিমিতির সিঁড়িতে পা রেখে
আমি পরিব্রাজক হয়ে উঠি প্রতিদিন।
**************************************
" উপমা "
___ আলীম আল রাজী - আজাদ
বর্ণ গুলো ভালোবাসা
শব্দ গুলো আদর
চরণ গুলো তোমার হাতের
নকশি করা চাদর!
ভাবনা গুলো টলটলে জল
স্বপ্ন গুলো পাখি
প্রাপ্তি গুলো তোমার দুটি
ডাগর কালো আঁখি!
সবুজ গুলো চোখের ছায়া
রৌদ্র গুলো আলো
বৃষ্টি গুলো দেয় ধুয়ে দেয়
জমাট সকল কালো!
দুঃখ গুলো দেয় বেদনা
কষ্ট গুলো জ্বালা
ফুর্তি গুলো হারিয়ে গেছে
সুখের ঘরে তালা!
হিংসা গুলো ধ্বংস করে
স্বার্থ গুলো কাড়ে
বিবেক গুলো চাকায় পিষে
যাকেই খুশি মারে!
(আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থঃ "ও মেয়ে"- থেকে)
শেলীনা জামান
তোমার নিত্য নুতন ধরন বরণ দেখছি কেন ?
আসছো, যাচ্ছো তোমার মত, কারণ তুমি তো তুমিই।
ছন্দহীন কেন ? তীব্র দাপট, ভেঙ্গে চুরে খানখান হতে চাও বুঝি ?
আবার শীতল পরশ দিচ্ছো।
আসছো, যাচ্ছো, এই মিশে মিলে গলে জল হচ্ছো!
ঘুম থেকে উঠতেই দেখছি অন্য ধ্যানে,
তোমার এ
তুমি অনন্য, তোমার পূর্ণতা।
যেতে চাইলে যাবে চলে, যাও চলে, কেউ কারো নয়,
আশু প্রয়োজন শুভ্র উজ্জল জোস্নার আলো,
পৃথিবীকে আচ্ছাদিত করো, বুকে আগলে রাখো।
অন্য কিছু নয়, মানুষ কখনও কখনও নিজের মনের কথা শুনতে চায়।
প্রতিদিনই আমার জন্মদিন
প্রতিদিনই আমার জন্ম হয়।
আমি আমার সত্তার ভেতর কেবল জন্মগ্রহণ
করি।
আর একটু একটু করে সম্পন্ন হয়ে উঠি।
সর্বদা সয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত
করি।
মানুষের কপটতা দেখি অকপট চোখে।
বিড়ম্বিত জীবনকে বাঁচিয়ে রাখি নবতর জীবনে।
প্রতিদিনই আমার জন্ম হয়, মৃত্যু হয়
স্বপ্নের ।
আমার জন্ম, জন্ম দেয় স্বপ্নের।
আমার মধ্যে স্বপ্নের জন্ম যেমন
থাকে,মৃত্যুও থাকে।
স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা থাকে।
তবু তিমিরে কণ্টকময় বন্দী বলয়ে বিচরণ
করি।
চৌদিকে আমার বিষম বাধা, বিপর্যয়ের শব্দ
আমি জন্ম নিই স্থিত প্রত্যয়ে।
আমার জন্ম হয় নতুন স্বপ্নকে জন্ম দিতে,আমি
জন্ম নিই জয় করে নিতে।
বেলা_শেষে
হোসনে আরা জেমী
চলেই তো গেলো জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়
তুমিহীন একা একা
মিছামিছি তবুও স্বপ্ন দেখে মন
যে ক'টা দিন সামনে
না হয় ভাসি নীল স্বপ্নের ভেলায়।
শক্ত হাত ধরে ঘর বাঁধবার সময়
শক্ত হাত খোঁজা হয়নি
কিন্তু পড়ন্ত বেলার দিনগুলিতে
পাশে চাই শক্ত হাত বন্ধুর।
ছেলেবেলার দুরন্ত দিনে
উত্তাল প্রমের আকুলতা ছিল না
চেনা শহরের অলিগলি পেরিয়ে
দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে অচেনা শহরে
এক সমুদ্র তৃষ্ণা তাড়িয়ে বাড়িয়েছে
এক বন্দর থেকে অন্য বন্দরে
তবুও তৃষা মেটেনা!
চলেই তো গেলো জীবনের কিছু সময়
যাবে না হয় আরও কিছুটা
ক্ষতি নেই কিছু তাতে
না হয় লিখবো কবিতা
কইবো কথা দুরলাপনে
স্মৃতিকে ভর করে
বন্ধু হয়েই রইবো পাশে অবিরত
চলেই তো গেলো জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়।
_______________________
জেমী/টারন্টো/জুলাই ২৪, ২০২০
**************************************
ছুটি
নদী রহমান
সত্যি বলছি বিদায়, তোমায় দিলাম ছুটি
সেঁধে সেঁধে বহুদিন হল, হয়ত করছ ভ্রুকূটি।
আর আসব না ফিরে
তোমার সবুজ বনে
হয়ে টিয়া পাখি
করব না ডাকাডাকি।
অবুঝের মত আসবে না বাণ
সংগে নিয়ে পরানের গান
প্রানহীন পড়ে থাকবে বসতবাটি,খেলনা
ভুলে যাবে দুমুঠো স্মৃতি, মনে রবে না।
কেউ গাইবে না গান
উঠোনের ঘাস কেঁদে ফিরে যাবে
না পেয়ে অরুন্ধতী
খুঁজে পরিচিতি চরণ দুটি।
***
সমর্পিত হৃদয়
অপরাজিতা অর্পিতা
একদিন আমিও ঠিকঠাক পাড়ি দেবো বাসন্তী নদী
প্রচন্ড অভিমানে সমুদ্র ছোঁবো নতজানু প্রার্থনায়,
দেওয়াল লিখন মলিন হলে
প্রতিবাদী প্রেমিকার মতো মিছিলের সম্মুখে এসে দাঁড়াবো।
মুষ্টিবদ্ধ হাতে নিস্ফল আকাঙ্খা আঁকড়ে ধরার অভিপ্রায়ে
মুহুর্তে রূপ বদলাবো ক্ষণে ক্ষণে,
ঝড়ের রাত্রির দাপটে ঠিকঠাক বদলে যাবে জোয়ার ভাঁটার হিসেব
শীতল জলের আবেশে পাহাড়ী বাঁকে শোনা যাবে অদ্ভুতুড়ে সব ডাক।
আমিও একদিন পৌঁছে যাবো
বৃষ্টিস্নাত চিলেকোঠায়
অথবা মেঠো পথের নিঃসঙ্গ সন্ধ্যায়,
টি এস সি, চারুকলা পেরিয়ে শাহাবাগের ফুলের দোকানে,
রেশমি চুড়ি, রক্ত রাঙা সিঁদূর, লাল পেড়ে সাদা শাড়ির ভাঁজে।
জানিতো,
কারফিউ এখনো শেষ হয়নি
তবুও কিছু অর্থহীণ স্লোগান জমেছে ভাষণের মঞ্চে,
বৈশাখী বাতাসে উড়ছে নীলাম্বরী প্রেম
তোমার যুদ্ধ ক্ষেত্রের প্রতিটি কৌশল
খুব কাছ থেকে দেখতে আমিও ঠিক পৌঁছে যাবো রনাঙ্গনে,
সেটা হতে পারে আজ
কিংবা অন্য কোন দিন।
***
রোদ উঠেছে চাঁদে
সাইদুজ্জামান
মনে পড়ে ব্রুকলিন ব্রিজ পার্কে বহুদিন পর আবার,
একসাথে তিনজন ভেবেছিলাম “পৃথিবীতে কে কাহার”
মিল-মিলন আছে তাই, কোথাও কাছে,
বিচ্ছেদও আছে, চলে যাওয়া আছে।
শুকনো পাতার আগুন নিভে আসে হায়,
অভিমান বুকে সূর্য সরে যায়,
যখন রোদ ওঠে চাঁদে,
সরে গেলে বিমানের সিঁড়ি – মন কাঁদে।
লক্ষ্মী সোনা চাঁদের কণা, আবার কবে?
তোমার সাথে আমার দেখা হবে ।।
টরন্টো, জুলাই ২৮, ২০২০