টরন্টো, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০ নভো সংখ্যা ১২
              
হোমপেজ সম্পাদকীয় পাঠক পরিষদের কথা কবিতা ছোট গল্প ধারাবাহিক পাঠাগার আর্কাইভ লেখক পরিচিতি প্রবন্ধ যোগাযোগ আবৃত্তি

কার্তিকের কুয়াশা

সৃজন সোপান

-অরুণোদয় কুন্ডু

 

বাংলার বাইরে বাঙালিদের নিয়ে একটা কথা চলতে দেখেছি যে বাঙালিমাত্রেই নাকি কবি হয়। সেটা আসলে হোক বা না হোক , ভেবে দেখলে দেখব সকলেই কম বেশি সৃজনশীল। নিজের কথা বা নিজের অভিজ্ঞতা অথবা কোন বিষয় নিয়ে নিজের মতামত নিজের মতো করে বলতে আমরা সবাই পারি। সেই নিজের কথাটাকে ভাষায় হোক বা অন্যকোন মাধ্যম রূপান্তরিত করা গেলে এবং তাঁর বক্তব্য সার্বজনীন করে তোলা গেলেই তাকে সৃজনশীল সৃষ্টি বলা চলে। কিন্তু প্রায়ই দেখতে পাই অনেকে সৃজনশীলতার অভাব নিয়ে অভিযোগ করেন। সেই কথাটা যদি কিছুটাও সত্যি হয় তাহলে তার কারন কি কিছু আছে? সৃজনশীলতা কি মানুষের জন্মগত বা দৈব প্রতিভা? নাকি সেটা অভ্যাসগত, অর্থাৎ চেষ্টা করে সৃজনশীল হওয়া যায়?

 

সৃজনশীলতার জন্য দরকার একটা কল্পনাশক্তি যা আমাদের সকলের মধ্যই কমবেশি আছে। তাহলে বলাই যায় যে আমরা সকলেই সৃজনশীল হতে পারি কোন না কোন মাধ্যমে। কিন্তু সকলকে আমরা সৃজনশীল বলি না। কারন সৃজনশীলতা আমাদের মধ্য থাকলেও তার পরিপুষ্টি বা বিকাশে আমরা খুব একটা মনযোগী নই। এটাকে আমরা করো কারোর ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা বলে ধরে নিয়ে চেষ্টা না করে বসে থাকি। এটা পরিষ্কার যে কোনবিষয়েই কোন কিছু সৃষ্টি করার জন্য লাগে একটি মন, যা কল্পনা করবে, নতুন করে ভাববে। এখন কথা হল এই ভাবার সময় কি আমাদের মনের কাছে আছে? এই ব্যাস্ত রুটিনে আমরা সব সময়য়েই ছুটছি। তাহলে ভাবব কখন। তাই সৃজনের জায়গা নিচ্ছে অনুকরণ। সাহিত্যের কথা ধরলে দেখব সকলের সময় নিয়ে লেখা পড়ার থেকে ছবি বা ভিডিও দেখার প্রবনতাটা বেশি তার কারন কি? সহজ উত্তরটা হল মানুষের হাতে সময় কম তাই সহজের প্রতি আসক্তি। আমাদের কোন জিনিসকে গ্রহন করার ভঙ্গিই হচ্ছে আমাদের আগেকার জানা দিয়ে নতুনকে ব্যাখ্যা করে নেওয়া। তাই জন্যই আমাদের জানার বা কোন নতুন জিনিসকে গ্রহন করবার প্রবনতার উপর একই জায়গা বা একই বিষয় আলাদা মানুষের কাছে আলাদা হয়ে ওঠে। বৈচিত্র বাড়ে। যা কিনা ওই ছবি বা ভিডিওতে পাওয়া খুব কঠিন। কারন সেখানে যা বস্তু তাই আমরা দেখে নি। কল্পনা করে সেই দৃশ্যের প্রতিরূপ যা আমরা আগে মনের মধ্য আঁকতাম এবং আমাদের সৃজনের অভ্যাস করতাম নিজেদের অজান্তেই, তা ছবি বা ভিডিওতে হয়না। ছবি বা ভিডিও আমাদের কল্পনার ডানা অনেকটাই ছেঁটে ফেলে আবার অন্য দিকে মন খোঁজে ভাবার রসদ। আর তার কাছে আছে ইন্টারনেট। তাই চটজলদি আরো অনেক অনেক নতুন তথ্য বা বিনোদন পাওয়া তার বাঁয়ে হাত কা খেল। কিন্তু সেই সুবিধার জন্য যে অসুবিধাটা হয় তা হল আমরা এর জন্য সুযোগ সামর্থ্যে কুলোলে অনেক বেশি বিনোদনে খরচ করি আগের থেকে। আগে আমাদের কাছে তথ্য ছিল অপ্রতুল বা কষ্টে জোগাড় করা। তাই যেটুকু যোগাড় করতাম তা নিংড়ে নিতাম। কিন্তু এখন তা সহজলভ্য হয়ে গিয়ে একটা খাবার শেষের আগেই আরেকটা খাবার হাজির। সেই হুজুগে গা ভাসাতে কার না ভাল লাগে। প্রচুর ছবি প্রচুর ভিডিও কিন্তু লেখা নেই।নেই সৃজনশীলতা। কারন যে সময়টায় লিখতাম সেই সময়টা খেয়ে নিয়েছে পরের হুজুগের পরিকল্পনা। সুতরাং আমরা আরো সেই চটজলদি সমাধানের দিকে ছুটছি। হারিয়ে ফেলছি সৃজনশীলতা। যে ভাষার ঝুলিতে রয়েছে এত আন্তর্জাতিক এবং কালজয়ী সৃষ্টি যার সংখ্যা নির্ণয় দুরূহ সেই ভাষায় সৃষ্টিশীলতা নিয়ে আলোচনাটাই হাস্যকর। সৃজনশীলতা যে সময়টা দাবি করে সেই সময়টা চলে যাচ্ছে নতুন তথ্যের সন্ধানে। ব্যাপারটা ক্রনিক হয়ে উঠছে দিনে দিনে। এই স্রোতে গা ভাসিয়েই কি আমাদের দিন ফুরোবে? সাহিত্যে লেখকের হৃদয় অর্থাৎ আমার আমির সাথে আমাদের কি প্রতিদিন দেখা হয়? নাকি কবে দেখা হয়েছে শেষ ভুলেই গেছি আমরা।

 

তাহলে এবার বোঝা যাচ্ছে সৃজনের জন্য সুস্থ মন, কল্পনার সময় এগুলো দরকার যার অভাব আমাদের সৃজনশীলতায় দাঁত বসাচ্ছে। একটু স্থূলভাবে বললে বলা যায়। সুস্থ মনের জন্য সুস্থ শরীরও দরকার, আর দরকার একাগ্রতা। যাতে ভাবনাগুলোকে ধাওয়া করে তাকে কথার বা কোন শিল্পের রূপ দেওয়া যায়। একাগ্রতা বাড়াতে ধ্যানের উপযোগিতা ভারতবর্ষের মত দেশে বহুল আলোচিত এবং প্রচলিতও বটে। তবে এই সৃষ্টিশীলতার রান্নাঘর হল আমাদের মাথা। মাথার দুই গোলার্ধে(Left and right hemisphere) সৃজনশীলতার উপাদানগুলো মিলেমিশে থাকে। ডান গোলার্ধে থাকে শিল্প সচেতনতা, কল্পনা, অন্তর্দৃষ্টি, সঙ্গীত ভাবনা, তৃতীয় মাত্রার (3rd dimension) অনুভবতা, স্বতঃলব্ধজ্ঞান ( intution ), আর বাম দিকের অঙ্গের পরিচালনের ক্ষমতা। আর বাম গোলার্ধে থাকে ভাষা জ্ঞান, লেখার ক্ষমতা, বিজ্ঞান ও অঙ্ক, বিশ্লেষণ ক্ষমতা, যুক্তি বিদ্যা, সংখ্যা তত্ত্ব, আর ডান অঙ্গের পরিচালনের ক্ষমতা। এই এই দুই গোলার্ধের সুসমঞ্জস ব্যাবহার এবং একটির সাথে অন্যটির সংযোগসাধন যাকে ডাক্তারী পরিভাষায় বলে crosstalk তাই হল সৃজনশীলতার চাবিকাঠি। এছাড়াও আধুনিক গবেষণা সৃজনশীলতার কিছু বাহ্যিক উদ্দীপকের কথা বলছে। তার একটি হল রঙ। নীল বা সবুজ রঙ নাকি সৃজনের সহায়ক। এমনিতেও সবুজকে নিয়ে তো লেখার ছড়াছড়ি। আর নীল যখন অসীম আকাশের রঙ তাতে তো অসীমের বিশাল বৈচিত্র্য সৃজনশীলতার অক্ষরে বাঁধা থাকবেই। দেখা যায় যারা জঙ্গলে বা প্রকৃতির কোলে অর্থাৎ নীল আকাশ আর সবুজ বনানীর মাঝে বেশি সময় কাটিয়েছেন তাদের মধ্য সৃজনশীলতাটা অনেকটা মজ্জাগত। সে তালিকায় উপনিষদের শ্লোক রচনাকারী ঋষিদের থেকে শিকারী সাহিত্যিক জিম করবেটের উজ্জ্বল সহাবস্থান।

 

এছাড়াও ধ্রুপদী সঙ্গীতের সুর আমাদের স্নায়ু জগতের আলোড়নে তাদের করে তোলে সৃজনশীল। সঙ্গীতে আমরা কিছু নির্দিষ্ট কম্পাঙ্ককে নিয়ে বিভিন্ন বিন্যাস সমবায়ের জাল বুনি। আবার যদি আন্টেনার কথা ধরি তাহলে আমরা জানি কোন তরঙ্গের তরঙ্গদদৈর্ঘ্যর অর্ধেক দৈর্ঘ্য থাকলেই সেই আন্টেনা ওই তরঙ্গকে ধরতে পারে বা শক্তি নিতে পারে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে প্রতিটি রাগেরই একটি ভাবরূপ আছে। সেই রাগের নোট বা কম্পাঙ্কগুলি ওই ভাবের শক্তি বহন করে। আর ওদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য আবার আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্নায়ুগ্রন্থির(গ্যাংগলিয়ন) সাথে মেলে। তাই স্নায়ু গুলি আন্টেনার কাজ করে উদ্দিপিত হয়ে ওঠে আর আমাদের সৃজনশীলতার দ্বার খুলে যায়। আমাদের প্রাচীন যোগের ষট চক্রভেদের সাধনায় এসব আলোচিত। যে সাতটি চক্রের কথা বলাহয় কুলকুণ্ডলিনী থেকে সহস্রাধার অবধি সেগুলি আমাদের স্নায়ু গ্রন্থি ছাড়া আর কিছু নয়। সুর পরোক্ষে সেই উদ্দিপনের আংশিক কাজ করে। চলমানতার সাথেও সৃজনশীলতার একটা সম্পর্ক আছে। প্রায়ই দেখা যায় হাঁটতে হাঁটতে অনেক কবিতার লাইন হঠাৎ করে মাথায় আসে । সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁটা সৃজনশীলতার বৃদ্ধি ঘটায় তা বলছে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা। ইতিহাস ঘেঁটে পাওয়া যাচ্ছে অ্যারিস্টটল তার ছাত্রদের সাথে হাঁটতে হাঁটতে ক্লাশ নিতেন। রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনাও এক্ষেত্রে উল্লেখ্য। আবার চলমান ট্রেনের জানালা দিয়ে ক্রমাগত দৃশ্যের বদল হঠাৎ অনেক কিছু যেন এক সাথে মনে করিয়ে দেয়। এবার সেগুলো লিখে ফেলাটাই কাজ। অনেক ভাবনা অনেক সময় আসে আবার কাজের চাপে সেগুলো মুছেও যায়। পরে হয়তো বিষয়টা মনে থাকল কিন্তু ওই ভাবে আর ভেবে ওঠা যায়না। তথ্য মেমরি চিপে বাধা যায়। কিন্তু বাধা যায়না দৃষ্টিভঙ্গি। তাই নির্জন ভ্রমনই মনের দুয়ার খোলে। সে আমাদের শ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতে বলা নির্জনবাস হোক কি শিলাইদহের পদ্মায় ভেসে চলা রবীন্দ্রনাথ অথবা যুদ্ধক্ষেত্রের বিপুল অনিশ্চয়তার বুকে কবিতা লেখা উইলফ্রেড আওয়েন, চলমানতার সাথে সৃষ্টিশীলতা জড়িত এটা উপলব্ধি করা যায়। নইলে কি আর নাও বাইতে বাইতে ভাটিয়ালি গাওয়া যেত নাকি গাঁয়ের পথে চলতে চলতে সহজিয়া বাউল এক অতিন্দ্রিয় তত্বকে আঁকড়ে ধরার তথ্য করে ছড়িয়ে দিতে পারত হৃদয় থেকে হৃদয়ে। চলতে চলতে সকলেরই ভাবনা আসে খামখেয়ালেই কিন্তু তারাই সৃজনশীল হয় যারা নিজেদের মনটাকে ভাল গ্রাহক আন্টেনা বানিয়ে প্রকৃতির কোলে কুড়িয়ে পাওয়া সেই একটুকরো ফুলের রেনু থেকে এক নতুন গাছে ফুলের জন্ম দিতে পারে। সেখানেই অসীমের বানি সীমাবদ্ধ অক্ষরে ধরা দেয়।

 

আকাশ, সমুদ্র, পাহাড় বিশাল নদী বা জঙ্গল আমাদের মধ্য অসীমের ভাবনার একটা অবকাশ দেয়। সেই অসীম বৈচিত্রময় বিশ্ব সংসারের সৃজনশীলতার সুরে নিজের হৃদয় বীনার তান মিশে গেলেই তার ঝংকারে আমাদের অন্তরের সৃষ্টি শীলতার বাঁধ ভাঙবে। মনে পড়ে যায় প্রথম নাঙ্গা পর্বত বিজয়ী নাস্তিক হারমান বুহলের কথা। শৃঙ্গ জয়ের পর তার অভিজ্ঞতারর বইটার নাম দিয়েছিলেন, "pilgrimage to Nanga parvat". জানিনা কোন ধ্যানের সুরে বাঁধ ভেঙেছিল তার অন্তরে।

 

এবার সৃজশীলতার অনুকূল পরিবেশ না হয় হল কিন্তু কি বা ভাবব আর কি বা সৃষ্টি করব। এটা বলতে গেলেই- ঋত্বিক ঘটকের একটা কথা মনে পড়ে যায়, "ভাবো ভাবো, ভাবা প্রাক্টিস করো". কিন্তু এই প্রাক্টিস কিভাবে করব সেটা আর কেউ বলেনা। আসলে ভাবার ব্যাপারটা এতটাই অন্তরের তাই সেটা ব্যাখ্যা করা বেশ জটিল। আমাদের সবটাই বহির্মুখী কিনা। সামান্য নিজের মুখটা দেখতেই আয়না লাগে। আর ভাবার অভ্যাস তো মনকে দেখা। তেমন আয়না আবিষ্কার এখনো তথাকথিত প্রযুক্তি বিজ্ঞানের হাতে অন্তত হয়নি। তাই নিজেরা সেই চেষ্টা নতুন করে শুরু করার আগে দেখা যাক আমরা আসলে কি ভাবার কথা ভাবছি। সমস্ত সৃষ্টিই যা দেখা বা অনুভব করা যায় তাকেই নিজের মনের রঙয়ে রাঙিয়ে পরিবেশন করা হয়। রবীন্দ্রনাথ মনে পড়ে যাচ্ছে, "আমারই মনের রঙয়ে পান্না হল সবুজ, চুনি উঠল রাঙা হয়ে". এখন কথা হল এই মনের রঙটি কোথায় পাই। সকলেই বলবে, কেন? তা তো মনেই আছে। কিন্তু তখন আবার আমায় কবির কথায় বলতে হবে, "যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাইনা". মানে যে রঙ আমরা দেখছি তা আমাদের নিজস্ব কিনা তা বোঝা দুষ্কর। সৃষ্টির প্রথমে তা কারো না কারোর অনুসৃত হতেই পারে। কিন্তু সেটা থেকে বেরিয়ে এসে ধীরে ধীরে নিজস্বতায় উপনীত হওয়াই আমাদের লক্ষ্য। সেটার জন্য কি করা যায় এই নিয়ে কথাবার্তা খুব কমই বলা হয়েছে। কারন এখানে কাটাছেঁড়ার বিষয়টা হল নিজের মন। কোন কাজে আমরা কিভাবে প্রত্যুত্তর করছি, বা কোন ঘটনা আমাদের মনে কেমন প্রভাব ফেলছে সেটা আমাদের একজন বিজ্ঞানী যেমনি তার পরীক্ষার ফল লক্ষ করেন তেমন ভাবে করতে হবে। শুধু নিজেদের নয় বাকি মানুষদেরও গিনিপিগ করে এই পরীক্ষা চলতে পারে। তাহলেই মনের রঙ বোঝা যাবে আমাদের পর্যবেক্ষন ক্ষমতাকে আয়না বানিয়ে। এবার আয়নায় মুখ দেখতে পেলে যেমন আমরা সহজেই নিজেদের সাজিয়ে তুলতে পারি। তেমনই মনের প্রতিক্রিয়ার ধরন বোঝা গেলে আমরাও তাকে নিজস্বতার রঙ দিয়ে রাঙাতে পারি। অভ্যাস একটি মোক্ষম হাতিয়ার। কিন্তু সঠিক পদ্ধতির অভ্যাস তাকে আরো উপযোগি করে। এবার পদ্ধতি কোনটা সঠিক সেটা বোঝা মুশকিল। এই ব্যাপারে লেখার বা আলোচনার স্বল্পতার কারন ওই কঠিন মনের গবেষনা। কিন্তু একটা ব্যাপার আমরা সবাই জানি এই গবেষনা আমাদের দেশেই সবচেয়ে বেশি মাত্রায় এবং উচ্চমার্গে হয়েছে। হ্যা শুনতে খটকা লাগলেও এটা সত্যি। সেই বিষয়ক গবেষনার ফসলই হল আমাদের প্রাচীনতম গ্রন্থগুলি। উপনিষদের মত গ্রন্থ গুলি মনের প্রকৃতি নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছে। কিন্তু এগুলোকে লোকে ধর্মগ্রন্থ বলে সরিয়ে রাখে। আরেকটা অসুবিধে কঠিন সংস্কৃত। তাই উপনিষদ পড়ার কথা বলা যায়না সহজে। তবে এই সংক্রান্ত অনেক নতুন বইও আছে। আমি উপরে যেটুকু আলোচনা করলাম সেটুকু ওই বইগুলোর আলোকেই নিজের রঙ মিশিয়ে। কোন জিনিসের উপর কায়েম আনতে গেলে সেই বিষয়টা ঠিক ভাবে জানা আব্যশক। এই সব আলোচনা আর অভ্যাসে আমাদের মন যদি ক্যামেরা হতে পারে। আর সেই ক্যামেরায় ঘটে চলা চলচ্চিত্রের বিশ্লেষণ আমরা যদি নিয়মিত প্রকাশ করতে থাকি, তাহলে কে বলতে পারে আমাদের এই প্রকাশই একটি সময়োপযোগী সৃজনশীলতা শিক্ষার পাঠক্রম হয়ে উঠবেনা। এভাবেই আমাদের মধ্য সৃজনশীলতার স্ফুরণ হোক। আর আবার বাংলার ঘরে ঘরে জন্ম নিক সৃষ্টিশীল প্রতিভা। প্রতিভা হয়তো জন্মগত কিন্তু তার স্ফুরণের পরিবেশ এবং সেই নিয়ে সচেতনতা বাড়ুক এটাই এই আলোচনার উদ্দেশ্য। তবে শুধু আলোচনা করাই সার হবে যদিনা পাঠক নিয়মিত জিমে গিয়ে তার হাত পায়ের পেশীকে শক্ত করার মত মনের পেশিকেও নিয়মিত অভ্যাসের মধ্য দিয়ে সৃজনশীল করে তোলেন। কথা যতই বলতে থাকি আর যতই লিখি কাগজে। সৃষ্টি হবে সাহিত্য রস রান্না হবে মগজে। তাই ফাঁকা সময়ের কড়াই আর মনের হাতা খুন্তি নিয়ে, অভিজ্ঞতার তরি তরকারী একাগ্রতার আগুনে ফোটান। পাত পেড়ে বসে আছি।