টরন্টো, ডিসেম্বর ২৩, ২০২১, নভো সংখ্যা ২৭  
              
হোমপেজ সম্পাদকীয় পাঠক পরিষদের কথা কবিতা ছোট গল্প ধারাবাহিক পাঠাগার আর্কাইভ লেখক পরিচিতি বিশেষ নিবন্ধ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল যোগাযোগ আবৃত্তি / কণ্ঠসঙ্গীত

কার্তিকের কুয়াশা

 

কবিতার পাতা

 

 

 

 

 

 

হীরের আংটি

 

রত্না চক্রবর্তী
১৭.১২.২১

 

কালো মেয়েটা বিদেয় হবে এবার
মা বাপ মরা ঘাড়ের উপর বোঝা,
"ওমা সেকি! মন্দ ছেলে ও যে!"
"হুঁ! হীরের আংটি বাঁকা আর সোজা। "

 

 

 

 

 

শীতের রূপ

মধুবন্তী আইচ

ঋতুর রাণী শরতের মতো সুন্দরী যুবতী তুমি নও;
বর্ষার নবঘন শ্যামলতা কিংবা উচ্ছ্বল কিশোরীর
চপলতা নেই তোমার বিভঙ্গে;
বসন্তের ন্যায় ঢলঢল যৌবন লাবণ্যও নেই তোমার অঙ্গে;
তুমি স্বতন্ত্র গম্ভীরা --- শান্ত সমাহিতা শ্বেতকায়া শীত।

ঝরা-পাতার গালিচায় মর্মরধ্বনি বাজে
যোগিনীরূপী তোমার ধীর গভীর চরণস্পর্শে।
হিমশীতল বাতাসের ফুৎকার নিমেষে গ্রাস করে নেয়
পূর্ণ-যৌবনা প্রকৃতির রঙিন সমাহার।
কুয়াশার চাদরে আচ্ছাদিত জনজীবন যেন
অপার্থিব কোনো জগতে কায়াহীনদের ক্ষীণ পদচারণা।
তুষারপাতের অশ্রুত অস্পষ্টতায় বুঝি বয়ে আসে
সেই অজানালোকের রহস্যময় কোনো বার্তা।

রামধনুর সাতরঙের সমষ্টিরূপ তোমার শীতল শুভ্রতা।
দিগন্তবিস্তৃত শূন্য সাদা আঁচলে রচিত তোমার প্রেক্ষাপট।
সারা বছরের ঝরে যাওয়া, সঞ্চিত শুকনো চিতাভস্ম
দুই হাতে সমাধিস্থ করো তোমার হিমানির জঠরে।
কমলা-কোয়ার পেলব ছোঁয়ায় স্তিমিত হয়ে আসে
মধ্যাহ্ন সূর্যের প্রখর দম্ভ।
মজে আসা খেজুর রসের মদিরতায়
ঝিম ধরে তারাদের সান্ধ্য মজলিসে।
সৃষ্টির আদিকালের স্থিরতার প্রতিমূর্তি তুমি,
রিক্ত প্রান্তর মাঝে সর্বত্যাগী তপস্বিনী তুমি ধ্যানমগ্না।
তোমার অন্তরের অন্তঃস্থল তবু নতুনের স্বপ্নে বিভোর বিহ্বল;
আদিম ঈপ্সার ওম্ জড়িয়ে, আশার কিরণে বিকশিত হয় বসন্তের বার্তাবাহক নবপল্লব...।

 

 

 

 

ঘোর লাগা জীবন

ফেরদৌসী বেগম

রাজশাহী/ ১০.১২.২০২১

 

ঘোরের মধ্যেই থাকি বেশি
আবছা আবছা শহর দেখি, লাল নীল বাতি দেখি
আবছা আবছা মানুষ দেখি
সরু একটি গলি দেখি, গলি জুড়ে স্মৃতি ভাসে-
ফ্রক পড়া সেই মেয়েটি বেনি দুলিয়ে স্কুল পথে
কাধের ঝোলা ব্যাগের সাথে
মায়ের হাতের টিফিন থাকে।
ঘোরের মাঝেই আবার দেখি
অবাক হয়েই ভাবতে থাকি
যা ছিলো মোর সব কি আর আছে তেমন!
মানুষ কি আর আগের মতোই থাকতে পারে!
বয়স বাড়ে চালসে আসে
আবছা আবছা পেছন দেখে
পেছন পথে মায়া থাকে আলো থাকে
চোখ বুঝলে বুঝতে পারে
ছুঁতেও পারে অনুভবে,
পারে না শুধু টাইম মেশিনটা উল্টে দিয়ে
ছোটবেলার পাখি হতে।
মানব জীবন এমন কেন!
ঘোরেই কাটে সারা জীবন।

 

 

 

 

বিজয়ের সুখ

সামিদা খাতুন

 

ডিসেম্বর মানে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে মাতৃভূমিকে রক্ষা করার চেষ্টা আপ্রাণ
ডিসেম্বর মানে গভীর অন্ধকারের মাঝেও খুঁজে পাওয়া এক ছটা আলোর সন্ধান।
ডিসেম্বর মানে দুশমনের ক্যাম্প আর জলপাই রঙের ট্যাংক উপড়ানো তরুনের স্পৃহা
ডিসেম্বর মানে কবির কবিতায় আজ মুক্তির নেশায় উন্মাদ হয়েছে তার মানুষ প্রিয়া।
ডিসেম্বর মানে মুক্তির চিঠি মুক্তিযোদ্ধার হাতে যেন নতুন ভোরের, নতুন সূর্যোদয়।
ডিসেম্বর মানে জয় ধ্বনি, জয় বাংলা, বাংলা আমার বাংলার জয় হবে নিশ্চয়।
ডিসেম্বর মানে বাঙালীর গৌরবান্বিত জয়, পাকসেনাদের পরাজয় স্বীকার ও আত্মসমর্পণ
ডিসেম্বর মানে লাল সবুজ পতাকা হাতে বিজয়ের স্লোগান শহিদ স্মরণে পুষ্প অর্পণ।
ডিসেম্বর মানে নয় মাস শ্বাসরুদ্ধকর, প্রাণনাশ,অতর্কিত রক্তক্ষয়ী নৃশংস যুদ্ধের ইতি
ডিসেম্বর মানে লাখো শহিদের আত্মত্যাগের মহিমায় অর্জিত ইতিহাসের পাতায় রক্তাক্ত স্মৃতি।
ডিসেম্বর মানে বুঝি বিজয়ের বার্তায় বীরাঙ্গনা মায়ের আত্মতৃপ্তির আনন্দ অশ্রু জল।
ডিসেম্বর মানে মুক্তিসেনার হাতে শক্তিশালী মিলিটারি ও আজ অক্ষম আর দুর্বল।
ডিসেম্বর মানে লাল সবুজ পতাকা হাতে মুক্তযোদ্ধার খালি পায়ে ছুটে চলা।
ডিসেম্বর মানে মুষ্টিবদ্ধ হাতটা আকাশ ছুঁয়ে জয় বাংলা জয় বাংলা চিৎকার করে বলা।
ডিসেম্বর মানেই পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধিন ভূখণ্ড উল্লাস আর বিজয়ের সুখ
ডিসেম্বর তাই প্রশান্তিতে ভরে যাক ধরনীর প্রতিটি ঘরে বিজয়ের সুখ নেমে আসুক।

 

 

 

 

 

বিজয় দেখেছি

নাস্রীন জেরিন সুলতানা

 

আমি বিজয় দেখেছি,
দেখেছি একনদী রক্তের বন্যা।
পঁচিশে মার্চ কালোরাতের
বিভীষিকা থেকে শুরু করে
দীর্ঘ নয় মাসের তান্ডব দেখেছি।
বিজয়ের শুরুতে
রাজারবাগ পিলখানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
রক্তে রঞ্জিত দেখেছি।
হাত-পা, চোখ বেঁধে
ব্রাশ ফায়ার করা দেখেছি।
ঐতিহাসিক ৭মার্চের ভাষণে
বাঙালীরর ঐক্য বদ্ধতা দেখেছি।
কৃষক-শ্রমিক, মুটে-মুজুর থেকে শুরু করে,
সর্বস্তরের বাঙালী স্বাধীনতা রক্ষায়,
মেতে উঠেছে দেখেছি।
জীবন বাজী রেখে
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে
মাতৃভূমি ও মাতৃভাষাকে বাঁচাতে
প্রাণপণ যুদ্ধে মেতেছে
বীর বাঙালী দেখেছি।
পাকবাহিনীর বর্বরতা,
রাজাকারের সহযোগীতায়
গ্রামের পর গ্রাম জ্বলতে দেখেছি।
পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলে রক্তের বন্যায়
ভেসেছিল প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ দেখেছি।
দু'লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর বেদনা
ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ দেখেছি।
আমি বিজয় দেখেছি।
বীর বাঙালী জীবন দেবে,
তবু দেবে না
মাতৃভূমি বাংলাকে এবং মাতৃভাষা বাংলাকে
শত্রুর কাছে বিকিয়ে।
প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে,
রেখে যাবে প্রিয় মাতৃভূমি
এবং প্রিয় মাতৃভাষা বাংলাকে।
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে
বিধ্বস্ত বাংলার জনপদ দেখেছি।
মুক্তি বাহিনীর গেরিলা যুদ্ধ
সম্মুখ যুদ্ধ দেখেছি।
রাজাকার আলবদরের
বিশ্বাস ঘাতকতা দেখেছি।
মুক্তিযোদ্ধাদের বোম্বিংয়ে
পাক-বাহিনীর ঘাটি ধ্বংস দেখেছি।
১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী নিধন দেখেছি।
রেসকোর্স ময়দানে নিয়াজীর স্যারেন্ডার দেখেছি।
১৬ ডিসেম্বর মুক্ত বাংলায়
বিজয়ের লাল সূর্যচাকে দেখেছি।
আমি বিজয় দেখেছি।
আমি বাংলার বিজয় দেখেছি।

 

 

 

 

ধুলোয় গড়া মানুষ

 

সাইদুজ্জামান

 

জলে পড়িনি, ধুলোয় পড়ে আছি প্রভু,
ধুলোয় গড়া মানুষ- তাইতো জানি,
কাছেই আছো তাই ডাকিনি কভু,
তুলোর মতো ধুলো - চোখে পরায় ছানি।

সিঁদুরে মেঘ ভয় করে, রাঙা ভালোবাসা ভয় করে.
মানুষের কোমল করমর্দনে আমার বড়ো ভয় করে।

টরন্টো, ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২১