টরন্টো, অক্টোবর ২২, ২০২১, নভো সংখ্যা ২৫  
              
হোমপেজ সম্পাদকীয় পাঠক পরিষদের কথা কবিতা ছোট গল্প ধারাবাহিক পাঠাগার আর্কাইভ লেখক পরিচিতি বিশেষ নিবন্ধ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল যোগাযোগ আবৃত্তি / কণ্ঠসঙ্গীত

কার্তিকের কুয়াশা

কবিতার পাতা

এসো মা

রত্না চক্রবর্তী
৯.১০.২১

শিউলি মাখা এই প্রভাতেও
কারা ফোঁপায় কান্না চেপেও
ও মা আমরা ভীত ভয়ে
এখনও রইবে শুধুই চেয়ে।
এস গো মা গো মা দুঃখনাশিনী
শোক হারিনী, বিপদতারিনী,
দশ প্রহরণে নাশ গো মারী
তুমিই যে গো মা সন্তাপহারী,
অভাব ঘোচাও অন্নপূর্ণা
ধরণী হোক সুখে ধন্যা।
এসো মাগো মা আনন্দময়ী
অ-সুখ নাশ করো মা জয়ী,
আমরা আছি অপেক্ষাতে
আজিকে এই শরৎ প্রাতে।।

 

শরৎ মানেই

মধুবন্তী আইচ

শরৎ মানেই বর্ষা শেষে আলো ঝলমলে একরাশ দিন।
শরৎ মানেই প্রাণের মাঝে বাজে অকারণ খুশীর বীণ।
শরৎ মানেই কাশের বনে মিঠে বাতাস - খুনসুটি,
শরৎ মানেই ভোরবেলায় শিউলিতলায় ঝরছে শিশির - লুটোপুটি।
শরৎ মানেই নীল আকাশে মেঘের ভেলা ভাসালো এক দস্যি দামাল,
শরৎ মানেই ধানের ক্ষেতে আলো আঁধারির লুকোচুরি - মেঘবালিকার হৃদয় মাতাল।
শরৎ মানেই বুকের মাঝে উপল কুড়োয় খুশীর ঢেউ,
শরৎ মানেই মন রয়েছে অপেক্ষাতে - হঠাৎ করেই আসবে কেউ!
শরৎ মানেই হিম হিম ভোরে আলতো ওমে জড়িয়ে থাকা ভালোলাগার চাদর...
শরৎ মানেই উৎসবের আমেজে মেতেছি আজ সবাই মিলে ভুলিয়ে দিয়ে আপন পর।।

 

শরত বিলাস

 ফেরদৌসী বেগম

২৮..০৯.২০২১

অনেক কষ্টে অর্থ জমিয়ে কিনেছি
শরতের এই নীল আকাশ
এ আকাশটা আমার
কোন রকম দখলদারিত্ব ছাড়াই
মঞ্চে নৃত্যরত নারীর নীল শাড়ীর উল্লাস।

আমার নভনীল ক্যানভাসে শুভ্রতার আকিঁবুকিঁ
যত রং মেশাই সব মিশে
এক হয়ে মিশে যায় রাজহাঁসের শুভ্র ডানায়,
বলাকারা উড়ে যায়, গাংচিল মেলে ডানা
বালুকনা চিক্ চিক্ করে।

এত নীল! এত শুভ্রতা! এত তুলোট তুলোট আকাশ!
আমার আয়েসী নৌকা শুধুই ভেসে যায়
কন্ঠে ভাসে মরমিয়া সুর
আমি বিহ্বলতার অতলতায় ডুবি,
এ আমার আকাশ, শরতের আকাশ
এক ফালি সুখ, একটুকরো বিলাস।

জমিনের কাশফুল, তুমি কেন উঁকি দাও?
কী মায়ায় সেজেছো এ প্রাতে?
তোমার হেয়ালী শুভ্র দোলায় হৃদয় উপচিয়ে যায়
আমি অবগাহন করি মর্ত্যলোকের
সুবিস্তৃত রেশমী পালকের স্বর্গ সুখে,
শরতের আকাশ নুইয়ে পড়ে কাশের বনে
শুধুই শুভ্রতায় ডুবি।

দিবা অবসানে
সপ্তমির জোসনায় ছেয়ে যাওয়া কাশবন
উড়াউড়ি করে,
উঁকি দেয় মধ্যরাতের জানালায়।
আমার খরিদকৃত শরত আকাশ
ছেড়ে যায় মধ্য রাতের অশ্বরাহে
আমি হত বিহ্বল,শুধু দেখি-
নীলে মাখামাখি
একটি শুভ্র রুমাল।

 

ডাকছে শরত
অরুণোদয় কুণ্ডু

ও ছেলে তুই পড়লি অনেক
শেষ রাত্রে জেগে।
বইয়ের পাতা ছেড়ে খানিক
গাছের পাতায় দ্যাখ;
শিশির মাখা ঘাসগুলো সব
লালচে রোদের সাজে,
কাঁপছে লাজে আবছা সাদা
ঘোমটা টেনে নিয়ে;
স্যাঁতস্যাঁতে সেই বৃষ্টিদিন
আর ভ্যাপসা ঘামের শেষে
জাগছে সকাল আলতো
শীতের জিয়ন কাঠীর ছোঁয়ায়।
নদীর কোলে রেশমি সাদায়
ঢেউ তোলে ওই হাওয়া;
পা ধুয়ে যায় সোনার স্রোতে,
জল আর আলোর খেলায়।

দ্যাখ চেয়ে ওই নীল ইজেলে
পক্ষীরাজের পাখা।
পালক গুলো মেঘ হয়েছে
আকাশ গাঙে মাঝি,
কাশের সাথে খুনসুটি তার
লুকিয়ে রোদের সাজ,
দিগন্তের ওই দূর নিরালায় মিলন প্রেমে রাজি।

ও ছেলে তুই পাস না কি ওই
সোঁদা মাটির গন্ধ,
দেখিস না কি কুমোর পাড়ায়
সাজো সাজো রব।
তন্বী মেয়ে শিউলি কুড়োয়
আলতা রাঙ্গা পায়ে;
দিঘির জলে নুইয়ে পরা
ওই গাছটার ডালে,
পা ছুয়ে যায় পদ্মকুঁড়ি,
গলায় শিউলি মালা,
শান্ত চোখের না বলা কথায়
ভাসিয়ে খুশির ভেলা।
নীরব মুখরতার ভোরে
গাইছে পাখী গান,
হৃদয় বীণার সুরের সাথে
আঁকছে ঐকতান।

 

চরম প্রতিশোধ

জয়া  চক্রবর্তী সোমা


জমা কথায় আকাশ ছোঁয়া পাহাড় জমেছিল
পাহাড় তো নয় দিগন্ততে কালো মেঘের সারি
সারাটা রাত বৃষ্টি হল ডুবল যে দুই কূল
সারাটা রাত অভিমানের বৃষ্টি হল ভারী।
ভীষণ জ্বালা জ্বালায় জ্বালায় বিষের বিষে নীলে
নির্জনতার একা দ্বীপে তুমিও একা ছিলে
প্রতিশোধের আগুণ ছিল আগুণ পাহাড় মনে
চেয়ে দেখিনি মেঘ জমেছে কখন ঈশান কোনে
বৃষ্টি হল বৃষ্টি ভীষণ ভিজল চোখের পাতা
ভিজুক ভিজুক আজকে না হয় হিসেব নিকেশ খাতা
ভিজে মাটির ভিজে বুকে জন্ম নিল বোধ
ক্ষমাই আমার তোমার প্রতি চরম প্রতিশোধ।

 

কাদা মাটির খেলা........

সামিদা খাতুন

 

আমি আমাকে ভেঙেছি যতনে গড়েছি
মরমে মরেছি ততবার
বিন্দু বিন্দু করে নিজেকে নিয়েছি জুড়ে
গড়েছি ততই ভেঙেছি যতবার।
আমি হাঁটতে হাঁটতে দেখেছি
হারতে হারতে শিখেছি
হারের মাঝেই সুপ্ত আছে গুপ্ত জয়।
তবু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করি নাই
অন্যের নিকট হারি নাই
অসৎকে কখনো করি নাই ভয়।
আমি চারপাশ হেঁটেছি হেঁটে হেঁটে দেখেছি
চাতুর্য ভরা নোংরা মানসিকতার বিশাল ফাঁদ
আমি হাঁটতে হাঁটতে দেখেছি পদে পদে শিখেছি
ভালো মন্দ আর সাদা কালোর তফাৎ।

 

সম্পূর্ণ আকাশ
সুমি বালা
 
সম্পূর্ণ আকাশ আমার
দাবিদার শুধুই আমি
বলতে পারো এ আমার কুপমন্ডুকতা
আবার বলতে পারো এ আমার অজ্ঞতা
আমায় বলতে পারো অন্য কোনো কথা
আমি সকল কিছুই মানতে রাজি
আমার আকাশে আমি পাখি হয়ে উড়ব
মেঘ হয়ে ভাসব বৃষ্টি হয়ে ঝরব
রোদ হয়ে হাসব গাছ হয়ে তাকিয়ে রব
হব আমি ইত্যাদি ইত্যাদি
মনের অজান্তে মন ঘুরে বেড়াবে আকাশের পথে-প্রান্তরে
খুঁজতে থাকবে সমস্ত অজানা রহস্য
মিলাতে থাকবে জানা সমস্ত তথ্য
ফলরূপে বের হতে থাকবে প্রমাণিত সত্য
হব আমরা আকাশের মত মুক্তমনা
তাই আকাশের কাছে এই প্রার্থনা
আকাশের উদারতা দেখে ঘুঁচে যাক চিন্তার ময়লা-আবর্জনা
হয়তো বলবে তোমরা এ আমার পাগলামি
আমার কাছে সকলেই ভাল্লাগামি
সম্পূর্ণ আকাশের আমি স্বপ্নচারিনী।

 

 

আমাকে একাই থাকতে দাও

 

সাইদুজ্জামান

 

আমার সমস্ত বেদনা নিয়ে যদি তোমাকে স্পর্শ করি
তুমি গভীর সমুদ্রের মতো নীল হয়ে যাবে
তাই স্পর্শ করিনি।
আমার সমস্ত বেদনা নিয়ে কাঁদতে হলে
জলের বদলে আগুন ঝরবে
তাই কখনো কাঁদিনি
আমার সমস্ত বেদনা নিয়ে লিখতে গেলে
কালির বদলে রক্ত বেরুবে কলমে
তাই কাব্য লিখিনি।
আমার সমস্ত বেদনা নিয়ে
আমাকে একাই থাকতে দাও
আমি বেদনা ভালোবাসি
তুমি আনন্দ নিয়ে থাকো।