এই শহরে এই শরতে
(অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের ১৪৫তম
জন্মবার্ষিকীতে আমার বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি)
-সাইদুজ্জামান
এই শহরে এই শরতে শরৎ ছাড়া কীইবা মনে পড়বে
প্রথম পাতা প্রথম কথা বুকেই আমি লিখেছিলাম শৈশবে
'আমার এই ‘ভব-ঘুরে’ জীবনের অপরাহ্ণ-বেলায়
দাঁড়াইয়া ইহারই একটা অধ্যায়
বলিতে বসিয়া আজ কত কথাই না মনে পড়িতেছে!'
কেইবা পারে এমন করে লিখতে কেউ অদ্যাবধি পেরেছে?
গদ্য লেখা কলা কৌশল আর নারীর সহজ মন বুঝতে
আর লাগে না কোথাও যেতে পথে প্রান্তে এ রহস্য খুঁজতে।
হাসি-রাশির দিন ছিলোনা, এখনো নেই, আছে শুধুই দুঃখ,
শ্রীকান্ত ও রাজলক্ষী তাদের প্রেম স্থুল নয়, সূক্ষ্ম।
“বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলিয়া দেয়” - ভেবেই হাত
বাড়াও,
দুটোই লাগে, দুটোই আছে, মানুষতো না শুধুই ফুল, কাঁটাও।
অশ্রুকণা নারীকে যত সুশ্রী করে কুমারিকা সাজেই,
ততটা আমি কিছু দেখিনি কুসুমকলি লতা-পাতার ভাঁজেই।
ভালোতো লাগে বেলীফুল ও গন্ধরাজ কাশফুলও সাদাই
সাদা থান কি দৃশ্যকটু বিধবা নারী তাকেই কেন কাঁদাই ?
ক্রন্দসীও কাঁদে আকাশ পাতাল কাঁদে অশ্রুপাত মন্দ?
অমর কিছু রেখে গেছেন শরৎবাবু কিছু গদ্য গন্ধ।
টরন্টো, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২১
গুপ্তকথার সন্ধানে
নীলাঞ্জনা সরকার
কালোবাসাতে সাঁঝবাতি টিমটিম,
মনের মোমবাতি দহনে কাঁপছে,
দুরু দুরু বুকে খালি হৃদপিণ্ডের ওঠানামা,
সেখানে ভালোবাসা অপেক্ষায়।
স্মৃতিটুকু বয়ে নিয়ে চলেছে রোজ রোজ,
যেখানে পদ্ম পাতায় বৃষ্টির ফোঁটা,
খবরের কাগজে রক্তের দংশন,
আর ভোর রাতে পূর্ণিমাকে খোঁজে সমাজ,
সেখানে ভালোবাসা অপেক্ষায়।
একটা ছোট্ট গুপ্তকথার অপেক্ষা মনে মনে,
সিগারেটের ধোঁয়ায় কুয়াশাচ্ছন্ন দৃষ্টি,
মনের দহনে ধর্ষিতার নোনতা বারিধারা,
সেখানে ভালোবাসা অপেক্ষায়।
শান্ত স্নিগ্ধ ঢেউয়ের মাঝে মন্থনের দলাদলি,
আর কলঙ্কিত রাতের পর মাতাল শহর,
কণ্ঠস্বর অপরিচিত যেখানে,
সেখানে ভালোবাসা অপেক্ষায়।
অভিশপ্ত আঁচড়ে সুপ্ত ফেনিল ঢেউ মলমল,
তবু গুপ্তকথার আকাঙ্খায় জীবন,
নিঃসঙ্গতা বটবৃক্ষের মতো আঁকড়ে জমি,
চাওয়া পাওয়ার সম্ভাবনায় বৃষ্টির মেঘ,
আজ বোধহয় শেষ ভালোবাসার অপেক্ষা,
উপেক্ষিত সকল অন্তরায়,
গুপ্তকথা বলছে একলা আকাশ।
ছোট্ট ভুলের গল্প
জয়া চক্রবর্তী সোমা
গল্প হয়ে ঠোঁট ছুঁতে চাই
চোখের পাতা স্বপ্ন হয়ে
ঘুমিয়ে থেকো আপন মনে
বাতাস হয়েই যাচ্ছি ছুঁয়ে।
এলোমেলো অবাধ্য চুল
আলতো ছুঁয়ে গন্ধ আনুক
আড়াল থেকে দেখব আমি
আমার কথা নাই বা জানুক।
সন্ধ্যে যদি খোলা ছাদে
তুমি তখন অন্য মনে
সন্ধ্যাতারা একলা আমি
দেখব তোমায় সংগোপনে।
শিউলি ঝরা সকালবেলা
ঘাসের বুকে পা রেখেছ
পা ভিজেছে শিশিরে নয়
চোখের জলে, ভুল বুঝেছ।
বুক ভরা শ্বাস গন্ধ আনে
লেকের ধারের ছাতিম ফুলের?
ঠিক বুঝেছ, গল্প লিখি
ছোট্ট কোন মিষ্টি ভুলের।
মন মাঝি
সামিদা খাতুন
ঘাটের মাঝি ভীষণ পাজি
আড়ে আড়ে চায়,
ভাটির দিকে না বেয়ে
সে যে উজান দিকে ধায়।
খোলা চুলের মোহ মাঝি
ছাড়তে নাহি পারে
নানান ছলে গভীর জলে
তাকায় বারে বারে।
মিটিমিটি হাসে মাঝি
মুখে দিয়ে পান
ক্ষণে ক্ষণে গায় মাঝি
মন ভুলানো গান।
দুষ্ট মাঝির মিষ্টি কথায়
দেয় না কন্যা কান
পাকা ধানে মই দিল যেই
কন্যা হেসেই খান-খান।
কথার জাল বোনে মাঝি
ঢেউয়ের তালে তালে
ঢেউয়ের ভাঙ্গা গড়ায়
কন্যার হৃদয় বুঝি দোলে।
কালো চোখের মায়ায় মাঝি
হারায় আপন মন
কন্যা জানে ভালোবাসা
হৃদয়ের বাঁধন।
দিন বদলের পদধ্বনি
ফেরদৌসী বেগম
দিগন্ত বিস্তৃত ঝকঝকে্ নীল আকাশ
কতদিন দেখিনি, ইচ্ছেও হয়নি।
ইচ্ছেরা কখনও কখনও অভিমানী হয়
গাল ফুলিয়ে বসে থাকে বারান্দায়,
কখনও প্রজাপতি ডানায় ভেসে বেড়ায়,
কখনও খুনসুটিতে মাতে,
থাকে ঈশ্বর প্রদত্ত ছোট শিশুটির
মুখে লেপ্টে থাকা স্বর্গীয় হাসিতে।
ঝুল বারান্দার গ্রিলে ঝুলে আছে আকাশ
ইচ্ছে হলেই ধরা যায় কিন্তু ছোঁয়া যায় না,
নিত্যদিনের এই ব্যন্জনহীন আকাশটা
হয়ে গেছে হাতে বেলা রুটি।
নেই সেই উদারতা৷ আর প্রসারতা
সেই নীলে মাখামাখি নীলকন্ঠ পাখিটা
আর শিস্ দেয় না,
রাতের আকাশের তারাগুলোও
ভেসে গেছে দূর অজানায়।
চশমার পাওয়ারটা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে
আগের মতো আর কিচ্ছুটি নেই
শৈশব ঘুমিয়েছে আ্যান্ড্রয়েডের স্ক্রীনে,
খেলার মাঠে বহুতল ভবন
ঘুড়িরা একা একাকীত্বে,
লাটাইটা এখনও তোলা আছে
শুধু সুতাটাই কেটে গেছে।
ঘড়ির কাঁটায় এখন আহ্নিক গতি
সময়টাতে কী সীমাহীন বৈরীত্ব?
নাকী আগত ফাইভ জি
অনাগত সিক্স জি এর প্যাঁচে বন্দী।
কোষে বন্দী মানুষ সবই
যন্ত্র তার অনু সঙ্গ
বুলেট ট্রেনে, রিমোট রুমে সবই সদা প্রস্তুত
চাইলেই পেতে পারে
আকাশের নীচে আরেক আকাশ,
ইচ্ছে বৃষ্টির ফোঁটা যত।
কেনই মাখি ঘুড়ির মতো সস্তা আবেগ
মস্তো মস্তো আকাশ জুড়ে
যত সব নস্টালজিয়া!
দিন বদলের পালা এখন।
শেষ চিঠি
-রত্না চক্রবর্তী
৮.৯.২১
তাকে লেখা শেষ চিঠি
পোস্ট করা হয় নি,
অভিমানে চলে গেছে
ঠিকানা দিয়ে যায় নি।
এত বছর সে ঘুমিয়ে আছে
আকাশী শাড়ির ভাঁজে,
কৈফিয়ৎটা চাপাই রইল
আমার মনের মাঝে।।
ভালো-মন্দ
সুমি বালা
ভালো আর মন্দ,
এই নিয়ে দ্বন্দ্ব ।
দুটি থাকে দুই মেরুতে,
নেই কোনো সন্দেহ ।
ভালো যা তা রাখবে ধরে,
মন্দটাকে দূরে ফেলে।
ভালো বলে আমি আলো,
মন্দ তুমি জম কালো।
ভালোর জন্য সবই খোলা,
মন্দটাকে দে-রে তালা।
ভালোর জয় চিরকাল,
মন্দের ক্ষয় নিত্যকাল।
ভালো যা তা সবই সেরা,
মন্দ যতো নষ্টের গোড়া।
ভালোটা যে সবাই চায়
মন্দটা নাইরে ঠাঁই,
ভালোর ফল ভালই হয়,
মন্দের ফল মন্দই রয়,
ভালো-মন্দের এই বিচারে আমরা সবাই অসহায়।