টরন্টো, আগস্ট ১৫, ২০২১, নভো সংখ্যা ২৩  
              
হোমপেজ সম্পাদকীয় পাঠক পরিষদের কথা কবিতা ছোট গল্প ধারাবাহিক পাঠাগার আর্কাইভ লেখক পরিচিতি সাহিত্য সংবাদ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল যোগাযোগ আবৃত্তি / কণ্ঠসঙ্গীত

কার্তিকের কুয়াশা

কবিতার পাতা

"বিশ্বকবি"
-নাস্রীন জেরিন সুলতানা।
জোড়াসাঁকোর সেই দাদু,
জানতো নাকি অনেক জাদু।
তাই ছোট বড় সবার জন্য,
গল্প- কবিতা লিখে ধন্য।
তাঁর লেখায় এঁকেছে কাব্যগাথা ছবি,
তাই সে আজ বিশ্বকবি।।
রচনাঃ ১৯৭২ সাল।

 

 

থাকতে পারি আঁকতে পারি
মুনমুন আজাদ

 

আঁকতে পারি শঙ্খনদী
শাপলা ফোটা বিল,
নীল আকাশে ডানা মেলা
দুরন্ত গাঙচিল।
আঁকতে পারি সূর্য, শিশির
কোমল দূর্বাঘাসে,
ফুলের বনে প্রজাপতি
পাখনা মেলে হাসে।
আঁকতে পারি আকাশজুড়ে
নানান রঙের খেলা,
রিমঝিম ঝিম বৃষ্টিভেজা
ক্লান্ত দুপুরবেলা।
আঁকতে পারি ঘন সবুজ
একটা গভীর বন,
হলুদ বিকেল উদাস করা
রাখালিয়া মন।
আঁকতে পারি সন্ধ্যাতারা
আকাশ প্রদীপ জ্বালা,
মিটিমিটি জোনাক পোকার
লুকোচুরি খেলা।
আঁকতে কেন পারি না যে
একটা নতুন দিন ?
বুকের ভিতর কষ্ট চাপা
ব্যথায় চিনচিন।
একটা নতুন সুস্থ পৃথ্বী
হয় না যে আর আঁকা,
বন্ধু, স্বজন সবাই মিলে
যায় না ভালো থাকা।
আবার কবে আসবে সেদিন
থাকি অপেক্ষায়,
ঘুমভাঙা এক সকাল যেন
জানান দিয়ে যায়।
৫ আগষ্ট ২০২১

 

তোমার মতো কেউ হয় না
দালান জাহান

তোমাকে দেখলেই মনে পড়ে
সেই রঙ মিস্ত্রির কথা
যে কি-না জাদুর রঙ দিয়ে
পুরাতন সবকিছু নতুন করে দিতো।

তোমাকে দেখলেই মনে পড়ে
সে-ই শিক্ষকের কথা
যে কি-না বছরের পর বছর ধরে
একখানা আগুনের দলা
বগলে বইয়ে স্কুলে নিয়ে যেতো
বছরের পরে বছর ধরে।

তোমাকে দেখলে
আরও অনেক কিছু মনে পড়ে
কিন্তু তোমার মতো কাউকে মনে পড়ে না
তোমার মতো কেউ হয় না।

 

ক্ষমা করো—

মোঃ মহিবুল ইসলাম

 


এই মধ্যবয়সে
তোমাদের শরীর মনে,
বসন্তের হিল্লোল
দিনে রাতে।
আমারতো মিতালী
হেমন্তের সাথে,
আমি তো একেলা হাঁটি
পাতা ঝরা হেমন্তের নির্জন প্রাতে।
বলো!
এতটা ব্যবধান মাড়িয়ে
কিভাবে হাত ধরি
তোমাদের হাতে!
ক্ষমা করো আমাকে।

 

 

জোছনায় পোড়ে ব্যালকনি

ফেরদৌসী বেগম

 


আমার ব্যালকনিতে চাঁদ হাসে
গড়িয়ে পড়ে জোছনা
বাগান বিলাসের গায়ে,
পাতায় পাতায় কথা বলে
রাত বাড়ে-
গান গায় সুরে, বেসুরে
হিল্লোরিত হয় একাকী রাত
ক্রমশঃ ভোর হয়।
আমার ব্যালকনিতে বৃষ্টি আসে
ভিজিয়ে দেয় মাধবীলতার ডাল
বৃষ্টির ফোঁটায় উল্লেসিত পাতা
পাঁপড়িগুলো হাত বাড়িয়ে দেয়
ভাটিয়ালি গায়
আমি শুনি, কান পেতে শুনি
হৃদয়ের দুকূল ছেপে যায়।
আমার ব্যালকনিতে গ্রীষ্ম আসে
প্রচন্ড তাপদাহে
আমি পুড়ি আলু পোড়া হয়ে
দগ্ধ হই সকাল, দুপুর, সাঁঝ
অবিরত ঝলসিত হই বজ্রপাতে
পুড়ে পুড়ে ভস্ম হয়ে যাই
আবার ফিরে আসি কলাপাতার ডানায়।
আমার ব্যালকনিতে বসন্ত আসে
আমি ভাসি গোলাপের সুবাসে
রেকর্ড প্লেয়ারে সর্বোচ্চ ভলিউমে গান শুনি
মনে বাজে বিসমিল্লাহ'র সানাই
আমি শুনি, চোখ বুজে শুনি
ভেসে যাই মেঘের দেশে।
গ্রীষ্ম,বর্ষা, শরৎ কোনটাতেই আমার
কষ্ট নেই, বিরহ নেই, নেত্রবারি নেই
আছে শুধু একটি শিমুল কাঁটার বেদনা,
নিঝুম রাতে উড়ে চলা পাখির শব্দ
আর নিহারিকার আর্তনাদ,
অস্তগামী সূর্য হয়ে ডুবে গিয়ে
ভোরের রাঙা সূর্য হওয়ার বাসনা।

রাজশাহী/ ০৭. ০৮. ২০২১

 

এক দুপুরে এক নূপুরে
- আরশাদ ইমতিয়াজ

মনে হলো কারও একটা নূপুর গেছে খুলে,
তার পাশেই ইচ্ছে করে বাঁশি রেখেছি ভুলে ........
বুক দুরু দুরু, প্রতিক্ষা প্রহর, চোখের জলে ঢেউ,
বাঁশির পাশে নূপুর নিতে আসেনি আজো কেউ ........

 

 

চিঠি
-রত্না চক্রবর্তী
৬.৮.২১

 

আমার চিঠি রাজার কাছে
পাঠিয়েছি বারবার,
ডাকঘরে চিঠি হারিয়ে গিয়েছে
উত্তর আসে নি আর।
তবু কে যেন বলছে মনে
আসবে এবার চিঠি,
তাই প্রিয় রয়েছি বসে
তাকিয়ে পথের দিঠি।

 

বেহিসেবীর কাব্য

জয়া চক্রবর্তী সোমা

 

এবার চলো বেহিসেবী
আর কতকাল হিসেব কষে?
ঠোঁট ছোঁয়ানো মিষ্টি সুখে
আলতো আদর ক্যান্ডি ফ্লসে।
অংক কষা ভালোবাসায়
ভাগের শেষে থেকেই গেল
ইচ্ছেরা সব বন্ধ মনে
জীবনটা, ছিঃ পানসে জোলো।
তার চেয়ে বরং নিয়ম ভাঙি
সংক্রমণের ভালোবাসা
জীবন জুয়া তোমায় ছুঁয়ে
এই ফেলেছি প্রণয় পাশা।
ঘোর লেগেছে ঘোর কাটে না
নষ্ট চাঁদে হৃদয় রাখি
ভুল করেছি? বেশ করেছি
কলঙ্ক নয় কাজল আঁকি।
সেই কাজলে বৃষ্টি নামে
মেঘ ভেসে যায় তেপান্তরে
একবারটি তখন এসো
ঘর বলি নি, এ অন্তরে।

 

জল নূপুর  

নীলাঞ্জনা শেলী

 

আমি ফিরে যেতে চাই আমার নিজ বাসভূমে,
বৃষ্টিস্নাত ভেজা মাটির সোদা গন্ধ নেব বলে,
মেঘের বাড়িতে তোমার বসবাস
আমি আলতো পায়ে ভেজা ভেজা পায়ে তোমার কাছে যাবো।
বৃষ্টির শব্দগুলোকে মনে হবে কোথাও যেন
নিক্কণের তাল ভেসে আসছে।
তুমি অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে থাকবে,
বৃষ্টির নিক্কণ গুলো তোমার আত্মার অলিন্দে
খুব কাছে অথবা দূরে অসীম আকাশে স্বপ্নের মতো ভেসে আসবে।
তুমিও ভেজা পায়ে আমার দিকে এগিয়ে এলে
মনে হবে আকাশের বুকে জলছবি এঁকে যাচ্ছে
অথবা স্বপ্নগুলো পাখির মত ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে!

 

অপেক্ষা
সামিদা খাতুন

দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়
রাত্রি ফুরালে ভোর।
ভোরের আলো ফুটবে যখন
মনটা হবে তোর।

আঁধার কেটে জাগবে আকাশ
ফুলের পরাগ নিয়ে
মৌমাছি সব এদিক ওদিক
ছুটছে ওপাশ দিয়ে।

হাটে যাচ্ছে হাটের মানুষ
কৃষক যাচ্ছে মাঠে
তার কথা কেউ জানে কি-না
যে বসে রয় ঘাটে।

সেই মেয়েটার বুকের ভিতর
কে আসে যায়
চোখের পলক রোদের ঝলক
কি জানি চায়

পথ পানে সে চেয়ে থাকে অবিরত
রঙের আকাশ ছবি আঁকে শত শত।

হাত বাড়িয়ে চায়না কিছুই
কাটে অনিদ্রায়
ঘাটে বসে সারাবেলা
থাকে অপেক্ষায়।

 

আক্ষেপ-প্রাপ্তি

সুমি বালা


কবিতা তোমায় দিলাম অজানা এক ছুটি
মনটা আমার বৈরী ভারী কোনো পথ দেয় না পারি
নিঠুর সময় আমায় নিয়ে করলো একি বঞ্চনা
বুঝি তাই সময় স্রোতে আমায় খুঁজে পাইনা
দেনা-পাওনার হিসাব গুলো কষছি যখন বসে
সময় এসে নীরবে কয় যাচ্ছে সময় মিছে
একটু থামি ভাবি আমি করছি আমি কি
দেখি ভাবনাগুলো ছন্দে ছন্দে হৃদয়ে বুনছি
আমি যারে দিলাম ছুটি সেই যে আমায় নিল লুটি
এটাই বুঝি জীবন মাঝি কবিতার কারিশ্মা

শূন্য আমি

শাহনাজ শারমিন

শূন্যতা বুকে শূন্য আমি,
শূন্যতায় বেঁধেছি ঘর,
পূর্ণতায় আমি অভিশপ্ত বলে
আজ সবাই হয়েছে পর।
শূন্য আমি শূন্য হৃদয়
শূন্য কুটিরে বাস।
শূন্যতার মাঝে হারিয়েছি শত
চাওয়া পাওয়ার অভিলাষ।
নিয়তি আমাকে করেছে শূন্য
চারিদিক শূন্যতায় ভরা।
শূন্যতাকে আর করিনা ভয়
শূন্যতায় জীবন গড়া।
শূন্য হৃদয়ে ভালোবেসে কেউ
আসেনি প্রদীপ হাতে,
অভিমানী ফুল পড়েছে ঝরে
অরুণ প্রভাতে।
যার সুখের জন্য আজও
শূন্যতায় বসে কাঁদি।
পূর্ণতা পেয়ে সে তাকায়নি ফিরে
নেই কোন আর দাবী।
শূন্য বুকে হৃদয়কে আজ
পাথরে দিয়েছি চাপা।
বুঝেছি এই বিধির বিধান
এতটুকু ভাগ্যে মাপা।।

 

একটা 'আমি'র খোঁজে
নীলাঞ্জনা সরকার

ঠিকানা ভুলেছে অনেকবার...
চলতি পথের বাঁকে,
পরিচিত কোনো ডাকে,
বহুবার চাঁদ ছিল মেঘের আড়ালে।
প্রেম ছিল অবেলার স্বপ্নে।
তিলে তিলে গড়েছে তোমার জন্য একটা আমিকে,
যাতে অনুভবে মিষ্টি হাসি খুঁজে পায়!
তবু, প্রেম তো গানে আসে না।
খাতার পিছনের পাতায় আঁকা প্রজাপতিতেও নয়।
সে আসে চুপিসারে অভিমানী ফুলের রঙে,
সে আসে চোখের জলে চিলেকোঠার ঘরে,
বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না প্রেমের!
একটা গল্প হয়ে তোমার বুকে তিন দশক থাকলেও-
কবিতা হয়ে মেয়েটির ঠোঁট হাসায় না।।
তাই সে এখন ছবি আঁকে, গান গায়!
সময় ভুলে থাকতে চায়।
এক পশলা বৃষ্টির ফসল যে বিস্তর স্বপ্ন
তাকে বুনে নিয়ে চলে সে দিনবদলের বাঁকে।
কত মেঘ গর্জায়, কত জল জমে...
তার সামনের উঠোনে।
তবু সে শুধুই মুহূর্ত গোনে মনে মনে,
বাউল সুরে আকাশকেও মাতায়।
মিথ্যে করে ঝড়ের বিশ্লেষণ।
সে ঘুমোয় না...বলা যায় তার ঘুম আসে না।
শরীরের ব্যথা মরলেও মন এখনও অতৃপ্ত,
সে ফিরে পেতে চায় শত শত ফেলে আসা মুগ্ধতা।।

 

প্রিয়তমা
-সাইদুজ্জামান

সব প্রেম শেষে হায় নিদারুণ বিচ্ছেদে এসে মেশে,
নীরবতা আর বিষাদিনী নদী, মানুষ পাথুরে বেশে।
ভোর হয়ে এলো, সব কথা শেষ, এখন সময় হলো
দুজন দুদিকে ফিরে যাবো দ্রুত, শুকনো চোখের জলও।

 

প্রিয়তমা বলো কখন আবার ফুলের মতন তুমি
ফুটবে দারুণ, ডাকবে আমায়, কখন কোন সে ভূমি?

 

প্রিয় বান্ধবী, সেই কথা দাও যা দেয়নি আগে কেহ,
কথা দাও তুমি ফুলের মতন ফুটবে তখন দেহ।

কথা দাও কথা রাখবে তোমার, রাত্রি নেমে এলে একা,
পড়বে তখন প্রেমের পত্র তোমায় আমার লেখা।

 

সীট বেল্ট বাঁধা, নেভিগেটরেও নতুন ঠিকানা, সরে
যাচ্ছে তোমার বাড়ি গাড়ি থেকে দূর হতে দূরে, নড়ে
উঠি - টের পাই আমাদের মাঝে এইতো জন্ম নিলো
অতল গহিন গহ্বর এক, বুকেও বেদনা ছিলো।

 

না সমবেদনা আমার চাইনা, চাইনা সুকথা ভাই,
গাছের কাছের সেই নদীটিই আমার এখন চাই।
হঠাৎ যদি সে, কুয়াশা ছিন্ন ক'রে শেষে জ্বলে ওঠে,
আগুন যেমন, ভাবুন দেখিতো আমার নামই ঠোঁটে!

 

প্রিয়তমা বলো কখন আবার ফুলের মতন তুমি
ফুটবে দারুণ, ডাকবে আমায়, কখন কোন সে ভূমি?

 

টরন্টো, ২৪শে জুলাই ২০২১