উপলব্ধির গভীরে আবিষ্কৃত এক মহাজীবন
- অরুণোদয় কুন্ডু
ইদানীং একটা অভ্যাস হয়েছে। কোনও বই পড়া শেষ করলে তাই নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করি। কিন্তু আজ যে বইটা শেষ করলাম সেটা নিয়ে কি লিখব সেটা ভাবতেই কোথায় হারিয়ে যাচ্ছি জানিনা। এই মাপের বই নিয়ে কিছু লিখতে যাওয়া আমার জন্য ঔদ্ধত্য। তবু লিখছি। কারণ কেউ যেন আমায় লেখাচ্ছে। কারণ হয়ত এটা কোনও বই না। একটি চরিত্র। বই একজন বন্ধু একথা আমরা শুনি। কিন্তু জীবনে আসলেই সেটা দেখেছি কিনা জানিনা। বন্ধু কে বা প্রাণের মানুষকে ছেড়ে থাকতে যেমন কষ্ট হয়। ঠিক তেমন ভাবেই বইটার পাতাগুলো যত ফুরিয়ে আসছিল। তত যেন পড়ার গতিতে লাগাম লাগিয়ে আগে পড়ে আসা পাতা গুলোর কথা ভাবতে ভাবতে সময় কাটছিল বেশি। এ বই সেরকম বই যা এক নিশ্বাসে পরে ফেলার প্রেরণা দেয় বটে কিন্তু সেই প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এক নিশ্বাসে পড়ে ফেললে মজাটাই মাটি। আসলে তাতে বইয়ের মানুষটার সাথে দিনযাপন হয়না যে। কয়েক পাতা পড়ে সেই পাতার প্রতিটি অক্ষরের মধ্যে যে অনন্ত সুধা লুকিয়ে আছে। নীরবে নিভৃতে তার আস্বাদনে মেতে থাকার সুযোগ কেই বা ছাড়তে চায়। যে মানুষটাকে নিয়ে তার এক চ্যালা বলেছিলেন যে তার প্রতিটা কথা কে নিয়ে এক একটা বই লেখা যায়। সেই মহাজীবন যে বইয়ে জীবন্ত হয়ে আছেন অক্ষরে অক্ষরে সেই বই যে বইয়ের বদলে একজন সর্বব্যাপী সত্তা হয়ে আমার সাথে সহবাস করেছে প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তার পরিসমাপ্তি হচ্ছে এটা ভাবতে মন চায় না। এই দেখুন, আমিও সেই ভক্তদের মত তার গুণকীর্তন করতে লেগে পড়েছি। কিন্তু বইটা তা করেনি। এতক্ষণে আশা করি বোঝা যাচ্ছে আমি কোনও মহাপুরুষের জীবনীগ্রন্থ পড়ছিলাম। সাধারণত এই ধরনের বই লেখেন তারই কোনও অনুগামী ভক্ত। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই সেই ব্যাক্তির গুণকীর্তন করেই বইয়ের অধিকাংশ পাতা খরচ হয়। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে এখানে সেটি হয়নি। বরং বইটা পড়লে মনে হবে লেখক যেন একজন বিজ্ঞানীর মত সব দিক থেকে যতরকম সমালোচনা বা বিরুদ্ধ কথা মানুষটা কে নিয়ে হতে পারে বা ইতিপূর্বে এই ধরনের জীবনীগ্রন্থ গুলিতে হয়ে এসেছে তার সবকিছুর হাটে হাঁড়ি ভেঙেছেন এই গ্রন্থে। চুলচেরা বিশ্লেষণ দিয়ে অন্যান্য মহান মানুষদের সাথে তুলনায় এনে দেখতে চেয়েছেন নিজের গুরুর জীবনকে। এখনকার লোকদেখানো ভক্তেরা তো এই ধরনের তুলনার কথা কেউ ভাবলেই তার পিছনে মার মার করে তেড়ে আসত। কিন্তু এখানে তা হয়নি। কারণ যে মহাজীবনের আলোচনা এখানে হয়েছে তাকে আলাদা করে বড় করে দেখানোর কিছু নেই। তিনিই একসময় বলতেন ফুল যদি ফোটে, ভ্রমর আপনি এসে জোটে। তাই হয়ত আজ একশো বছর পরেও আমার মত অর্বাচীন ভ্রমর সেই দেড় শতাব্দী প্রাচীন ফুলের গন্ধে মাতাল হচ্ছে। আর আমার বিশ্বাস আরো কয়েক শতাব্দী পরেও একই ভাবে মাতাল হবে। তাই গুণকীর্তনের আড়ম্বরে মাতাল না হয়ে অবকাশ আছে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সেই জীবন কে বিশ্লেষণ করার। অন্য জীবনের সাথে তুলনা করে তার মহত্ব উপলব্ধি করার। আর সেই জীবন গঠনের পদ্ধতির বিস্তৃত আলোচনা হৃদয়ঙ্গম করে সেই প্রেরণায় জীবন গঠন করবার। আমরা তার নখের কোটি কোটি ভাগের একভাগ হতে পারলেও তা আমাদের কোটি জন্মের তপস্যার ফল। এই দেখুন আবার গুণকীর্তন করছি। না ঠাকুর তোমায় নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা আমার নেই। আর বলব না। খালি ভাবব। বলার কাজটা স্বামী সারদানন্দ মহারাজ যা করেছেন তা হৃদয়ঙ্গম করার শক্তি দাও। খালি সেই 1886 সালের পয়লা জানুয়ারিতে তোমাকে প্রণাম না করতে পারলেও কৃপা করো আমার চৈতন্য হোক।