যখন কষ্টেরা ঝরে বৃষ্টি হয়ে
মোঃ মহিবুল ইসলাম
কষ্টদের কোন ঘুম নেই
নাওয়া নেই খাওয়া নেই,
দিনশেষে পাখিরা ফিরে যায় নীড়ে
কষ্টেরা ফেরে না।
ওদের ঘর নেই নীড় নেই,
ওরা আমার কাছেই থাকে,
ওরাই আমার আপনজন,
বহুকাল ধরে একসাথে খাই একসাথেই ঘুমাই,
কখন শুরু হয়েছিল আমাদের যুগল পথচলা মনে নেই,
স্বর্ণলতার মত ওরা আমাকে পেঁচিয়ে থাকে,
সারাক্ষণ লেপ্টে থাকে আমার শরীরের সাথে,
ওদের শিকড় আমার শরীরের গভীরে।
প্রখর রোদের উত্তাল দুপুরে,
কিংবা নিঝুম রাতের শেষ প্রহরে,
কিংবা যখন খুশি তখন—
বিষাদের ঘনকালো মেঘ থেকে
অঝোর ধারায় কষ্টেরা ঝরে বৃষ্টি হয়ে,
আমাকে ভীষণভাবে ভিজিয়ে দেয়,
আমি বেরোতে পারি না তুমুল বৃষ্টির ধারা থেকে;
যুগ যুগ ধরে আমি ভিজতে থাকি কষ্টের বৃষ্টিতে॥
আমরা বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম...
মধুবন্তী আইচ
আমরা বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম...
টাপুর-টুপুর কিংবা রিমঝিম ধারার বৃষ্টি নয়,
অবিরাম বারিবর্ষণ ছিল সেই দিনটিতে।
আমরা কারা?- দুজন মানুষ...
যারা বন্ধু হতে চেয়েছিল একে অপরের,
যারা বন্ধু বলে ডেকেছিল দুজন দুজনকে ।।
আমরা বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম...
শহরের মাথায় তখন ঘন কালো মেঘ
ঝড়ের সাথে গলাগলি দাপাদাপি করছে,
আর আমাদের দুটি ভিজে কাক মনে
শৈশব প্রেম সারল্যে মাতামাতি করছে ।।
আমরা বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম...
জলস্রোতে তিলোত্তমা কল্লোলিনী, পথে যানজট,
সারি সারি গাড়ি আর হাঁসফাঁস ছটফট।
দু’জনে দু’জনার দুটি হাত ধরি ধরি,
ছুট্ ছুট্ ছুট্ জল ছই ছই পড়ি কি মরি ।।
আমরা বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম...
সময়ের হিসেব নেই, ছিলোনা ঘরে ফিরবার তাড়া;
দু’টিতে দু’পাত্তর ভদকা গলায় ঢেলে,
শহরের চৌমাথায় দু’হাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে
ঝড়কে সাক্ষী করে বলেছিলাম 'উড়ে যাবো তোর সাথে দূরে...'।।
আমরা বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম...
দু’জন মানুষ---খুব কাছের
বন্ধু ছিলাম একে অপরের।
আজও ঝড় ওঠে, অঝোর বৃষ্টি’তে
চুপ করে ভেজে আমাদের শহরটা,
বারিধারায় স্নান করে চেনা রাস্তা,
একা ল্যাম্পপোস্ট আর
মেঘলা আঁধার কোণে অপেক্ষা করে
ফেলে আসা বন্ধুত্ব--- আজও...।।
বিপন্ন ধরায় হরিৎ তৃষ্ণা
ফেরদৌসী বেগম
০৬.০৬.২০২১
অভিমান! সে তো ছিলো কিছু
মাটির সাথে বর্ষার সাথে
বৃষ্টিভেজা একটা সবুজ পাতার জন্য।
দেড় যুগ আগে
এই খোলা আকাশের নীচে
বপিত অশত্থ চারাটি
ডালপাতা ছড়িয়ে ঝুরিতে ঠেস দিয়ে
মাথা উঁচু করে ঠায় দাড়িয়ে-
আমি শুধু শুকনো পাতা কুড়াই।
ধুলি ঝড়ে ওড়া পাতা ঘুড়ির মতো ওড়ে
সন্ধ্যে হয়ে আসে
একে একে জ্বলে নিয়ন বাতি
শহরের প্রতিটি ব্যস্ত সড়কে।
বর্ণিল এ শহরে কেউ কি দেখেছো
একটি শুকনো পাতা?
অনেক অনেক দূর থেকে ভেসে এসেছিলো
কেউ কি জানো তার খোঁজ!
আমার শুধু একটি সবুজ পাতা চাওয়ার ছিলো
বাতাস দুলানো সবুজ পাতা।
পানির নীচে ডুবে থাকা মাছেরা দেখেছিলো
সবুজ বিটপে ক্ষত, কুঁড়িতে ক্ষত
চিৎকার করে রাতের পাখিগুলো বলেছিলো
আমরা বাঁচতে চাই।
আমি তো মানুষ!
আমার প্রয়োজন ছিলো সবুজ পাতা
দীঘল সূর্য্যের আলো আর একটু জল।
হে বিপন্ন পৃথিবীর বিপন্ন পরিবেশে
বেড়ে ওঠা বৃক্ষরাজি,
আমার আজম্ম লালিত সাধ
একটি অক্ষত সবুজ পাতার।
অসুস্হ বাতাস ডানা ঝাপটায়-
চারিদিকে শুধু
হলুদ শুকনো পাতা উড়াউড়ি করে
শন্কিত হই, কুন্চিত হই
নেশাগ্রস্হ চোখ অতসী গ্লাসে ঢাকা
দুষক আর দুষনে জর্জরিত শরীর।
আমার একটি সতেজ হরিৎ পাতা চাই
চাই শ্যমল ধরিত্রী
বুনে দিয়ে যাবো একটি সাদা ঘাসফুল
বাসযোগ্য ভূমিতে
আমি থাকি আর না থাকি
প্রজম্ম জানবে আমরাও জেগেছিলাম
সবুজের প্রত্যাশায়।
কেনো বৃষ্টি আসেনা...
- অরুণোদয় কুন্ডু
জানলা দিয়ে বৃষ্টি বিলাস, বৃষ্টি কাঁদা হাসি,
বৃষ্টিতে মন অকূল পাথার, কাব্যি রাশি রাশি।
ছাদের নাট্যমঞ্চে নৃত্য, চোখের জল বা খুসিতে সিক্ত
কাঁপ ধরা জামা গা।
উদাসি হৃদয়ে রোজ রোজ কেন বৃষ্টি আসেনা!
ডাকাবুকো সব মাঝি মাল্লা, সাগরের ঝড়ে দেয় পাল্লা,
জীবন তুচ্ছ, খড়ের গুচ্ছ বাঁচার পরোয়ানা।
বীরত্বটা শানিয়ে নিতে প্রত্যয়ে ভেজা গা।
নাবিক বলে, রোজ রোজ কেন বৃষ্টি আসেনা!
সংসার খাটে, ঢেউ লাগে পায়ে, খাটিয়া দ্বীপবাসী;
মাথার উপর টপ টপ জল, বাটি নালায় নিকাশি।
এঁটোকাঁটা খেয়ে ঘাম নদী বেয়ে, দুপয়সা পাওয়া কাজে,
এই ভূখণ্ডে দ্বীপবাসী ওরা, সমাজ সাগর মাঝে।
বৃষ্টিতে তার ভেজে পাঁজর, ময়লা আদুর গা।
আকাশের চোখে রোজ রোজ কেন বৃষ্টি আসেনা!
নিঃস্ব মেয়েটার গল্প
- আরশাদ ইমতিয়াজ
ঈশান কালো মেঘের শেষে অন্ধ কোনো বিষের রাত
সব হারানো চোখের তারায় বর্ষা মোছে নিঃস্ব হাত।
শুন্য চোখে অসীম পানে স্থির হলো দৃষ্টিভ্রম
বুকের ভেতর ব্যথার পাথর শরীর জুড়ে ক্লান্তশ্রম।
হতাশ নদীর স্রোতের টানে রাত উপোসীর অশ্রুগান
ঝড়ের হাওয়ায় উড়িয়ে নিল কল্পলোকের শয়নযান।
রাত্রি তখন চার প্রহরে, ঠায় দাঁড়ানো কাজল চোখ
বৃষ্টি ভেজা অপেক্ষারা মুছিয়ে দিল মৃত্যুশোক।
নিভে যাওয়া সন্ধ্যা আলো ভুলিয়ে দিল সূর্যতাপ
শুকতারাটার চলার পথে ছড়িয়ে দিল মনখারাপ।
বুকের ব্যথা ভুলিয়ে দিল অপূর্ণতার মৃত্যুকূপ
চাঁদের আলোয় ঝলসে ওঠা দুঃখি মেয়ের বন্যরুপ।
পাথর চাপা বিষন্নতার বুদবুদে ভরে ঠোঁটের কোন
বুকের ঝড়ে সুর সেধেছে গুমোট মেঘের বিস্ফোরণ।
স্রোত থেমে যায় চোখের নদীর চিত্ত থাকে নির্বিকার
হাতের মুঠোয় মৃত স্বপ্ন, শুণ্যতায় বোবা চিৎকার।
সব হারিয়ে ঘুম জানালায় জেগে থাকে অন্ধকার
ভোরের সাথে মিলিয়ে গেল ফুরিয়ে যাওয়া গল্প তার।
উপসংহারে পড়ে ছিল নষ্ট হৃদয়, টুকরো শোক
নিঃস্ব মেয়েটার গল্প জুড়ে একটু প্রেমের বৃষ্টি হোক।
এক একটা দিন উদাসীন
-রত্না চক্রবর্তী
২৯.৬.২১
এক একটা দিন উদাসীন
মন কেমন করা,
ছায়া ছায়া বিষণ্ণতা
কেমন অধরা।
এক একটা দিন শুধু নিজের,
নিজেকে একা চাওয়া
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকি,
নিজেকে ফিরে পাওয়া।
এক একটা দিন হারিয়ে ফেলি
আমার আমিকে,
পাগল আমি হাতড়ে ফিরি
স্মৃতির ধূসর বাঁকে।।
বাতাসকে চিঠি
জয়া চক্রবর্তী সোমা
বাতাস তুই এমনি থাকিস,পাগল প্রানখোলা
এমনি না হয় আসিস কাছে উদাসী পথভোলা।
আমি যে গাছ তোর ছোঁয়াতে শিহরিত প্রাণ
তোর শরীরে ছড়িয়ে দেব ফুলের আঘ্রান।
তোর ছোঁয়াতে কখন যেন অভিমানী মন
পাতায় না হয় ঝরিয়ে দেব শিশিরটা তখন
কখন আবার আদর দিয়ে কুঁড়ির থেকে ফুল
না না আমি ঠিক বুঝেছি হয়নি আমার ভুল।
মাঝে মাঝে কি যেন হয় দখিন উদাস হয়ে
কিসের যেন বিরহ তোর দীর্ঘশ্বাস বয়ে
আসিস তখন আমার কাছে কি সে মনে পরে
তোর বিরহে জানিস না কি আমার পাপড়ি ঝরে।
আবার যখন হোস উদাসী কিছুই যে নেই মনে
শুষ্ক আমি পাতা ঝরাই পাতা ঝরার বনে।
বুঝিস না তুই উড়িয়ে নিয়ে লালচে পথের ধুলো
চেয়ে দেখেছিস সঙ্গে ছিল শুকনো পাতাগুলো।
কখন যেন ফুঁসে উঠিস কিসের ভীষন রাগে
আমার প্রতি কেন যে তোর ভীষন হিংসা জাগে
ইচ্ছে করে ভেঙেই দিবি ফুলে ভরা ডাল
বৈশাখী ঝড় প্রলয় নাচিস তুই যে মহাকাল।
তোর সে আঘাত জানিস না তুই আমার ভীষন প্রিয়
মনে মনে বলি এমন অনেক আঘাত দিও।
আমি জানি কেউ জানে না তুইই বাঁশীর সুর
আমার শিকড় মাটির বুকে তোর আছে সুদূর
সেই সুদূরের বার্তা শোনাস হাজার কাজের মাঝে
তুইও জানিস গাছটা যে তোর অপেক্ষাতে আছে।
ক্লান্ত হয়ে ফিরিস যখন বুকে অনেক ভার,
দম বন্ধ কষ্ট বুকে শক্তি যে নেই আর
সেদিনটাতেও পাশেই পাবি কষ্ট শুষে নেব
বাতাস তোকে কথা দিলাম বিশুদ্ধতা দেব।
জমুক জমুক আমার বুকে স্মৃতির কার্বন।
বাতাস তুই পাগল থাকিস প্রানখোলা এক মন।
ফেরারি মন
নীলাঞ্জনা শেলী
তুমি যদি আমায় নির্বাসনে দাও,আমি সংগে কিছুই নেব না,
শুধু তোমার অরক্ষিত স্মৃতি আর স্পর্শগুলো মনের গহিনে সুরক্ষিত করে
রাখবো,
তুমি যদি আমার হৃদপিন্ডটাকে পোস্টমোর্টেম করে দেখো,
তাহলে দেখবে রক্তাক্ত হৃদপিন্ডটায় শুধু মাত্র তোমারই নাম লেখা আছে,
তোমার আমার মাঝে যতটুকু বিরহ ছিল,
তার আড়ালে ছিল শুধু ভালবাসা আর ভালবাসা,
আমাদের মাঝে যা কিছু ছিল, তার একটাই অর্থ,
আজও আমরা শুধু, দুজন দুজনকে এখনো ভালবাসি।।
হঠাৎ বৃষ্টি
নূর-ই- হাফিজা খানাম (আক্ষিপ্তিকা নির্মাল্য)
ও রে, অ-সময়ের দুষ্টু-মিষ্টি বাদল
এই হিমে, বহে ধীর সমীর শীতল
কেন বাজালি মাতাল মদির মাদল?
তুই হয়েছিস উন্মত্ত, নাকি পাগল?
এ কি! নিঃশ্বাসে তোর এ কেমন উষ্ণতা
রূপে যেন অপরূপ মগ্ন মাদকতা
হঠাৎ হলো কি মন উতলা-চঞ্চল
উড়িয়ে দিলি বৃষ্টির ও ভীরু অঞ্চল।
চকিতে নেহারি অঙ্গ মাধুরি স্নিগ্ধতা
লাগে চোখে ঘোর,এ কোন মোহ মুগ্ধতা?
কি শিহরণ তনুকায় দিলি জাগিয়ে!
লাস্যময়ী রিমঝিম ঝরা বৃষ্টি মেয়ে
বধূ বেশে এসে মৌন রাতের বাসরে
নিবি নাকি নির্দয়া, এ প্রাণটা বেঘরে!!
আবর্ত
সঞ্জয় কুমার
এই নিয়ে বেঁচে আছি যান্ত্রিকতায়,নিলামে,গন্ধে,প্রতিশ্রুতিতে।
বিস্মৃতির মেঘময় আকাশের কোনে
আদিম মানুষ দের বসবাস।
আমরা সেখানে চলে যাব একদিন হয়তো, কাব্যসূত্রিতায়।
তুমি আর আমি,আমরা যারা বাঁচতে চেয়েছিলাম অলিক শ্রাবণের বৃষ্টির ফোঁটায়
ফোঁটায়,পবিত্রতায়।
পুবের ব্যালকনিটা নভোঃদর্পনের ন্যায়
আকাশ হতে আকাশের দিকে নীল আলোয় ম্রিয়মাণ।
মাধব বলে যে লোকটা ছিল না!
সেই বলছিল সেদিন-
স্বার্থের যান্ত্রিকতায় নিষ্পেষিত হতে হতে
তুমি আমি নাকি থাকবো না।
ষটচক্রের ভেদ যাবে মুছে।
কেবলি প্রতিচ্ছবি তৈরী হবে আবেশের।
এ শহরের ল্যাম্পপোস্ট,কংক্রিটের ফাঁকা হতে
ফাঁকাতর রাস্তার বাঁকে আর দেখা পাবো না প্রেমিকার।
তোমাকে আর আমাকে হতে হবে নগ্ন,জীর্ণ,ব্যধিগ্রস্ত।
এ কলুষের অট্টহাস্যের দাস্য।
এ যে বড় নির্দয় বেদনা,পারবোনা সইতে আজ
চলো আমরা ফিরে ফিরে যাই।
চলো পালাতে পালাতে আড়াল হই
শ্রাবণের ধারায়।
চলো লুকিয়ে পড়ি আদিম পাথরে।
সময়চক্রের এ আবর্তে আবার ও ফিরতে হবে
জানি মানুষের হাতে মানুষেরই হাত হতে।
তবু আমরা না হয় ধ্বংসাবশেষ হয়েই থেকে যাবো
চিন্তায়,চেতনায়,আত্মস্থ বিকারহীন মানুষের আবরনে।
চোরা স্রোত
-সাইদুজ্জামান
সময়ের চোরা স্রোত কেন বয়ে গেলো এতটাই দ্রুত?
চমকে দেখি, খুঁটিনাটি কিছুই হয়নি দেখা বস্তুত।
জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, কলা-কৌশলে, নরতে নারীতে তফাৎ,
খানিক দেখেছি, খানিক বুঝেছি, পুরোটা দৈবাৎ।
বুকের কপাটে হু-হু করে লাগে হাওয়া,
তোমাকে তোমার মতো যায়নি পাওয়া।
পাথুরে মাংস, ইটের মশলা, পাথরকুচির লুচি,
মনে কি পড়ে না, মালবিকা, অমৃতে অরুচি?
খেলা ভেঙে তুমি ফিরে যাও তোমার নিজের ঘরে,
একাভোগা, একা ছিলাম, একা আছি মাটি ও পাথরে।
বুকের ভেতর একটা কিছু পোড়ে,
ছোট্ট ব্যথা মাছির মতো ওড়ে।
বুকের ভেতর হঠাৎ যখন লাফিয়ে ওঠে বল,
জনান্তিকে উপচে বহে সুখদুঃখের জল ।
টরন্টো, জুন ১, ২০২১