টরন্টো, জুলাই ০৫, ২০২১, নভো সংখ্যা ২২  
              
হোমপেজ সম্পাদকীয় পাঠক পরিষদের কথা কবিতা ছোট গল্প ধারাবাহিক পাঠাগার আর্কাইভ লেখক পরিচিতি সাহিত্য সংবাদ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল যোগাযোগ আবৃত্তি / কণ্ঠসঙ্গীত

কার্তিকের কুয়াশা

সম্পাদকীয়

 

একবার আপনি যদি ভাবতে পারেন ভবিষ্যতের গায়ে  লাগানো আপনার একটি  হাতল আছে, দেখবেন তাহলেই শুধু ভবিষ্যৎ বদলে যেতে পারে । সেকারণেই আমরা কার্তিকের কুয়াশায়, সময় হবার আগেই, ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি, কবে দিন বদলের পালা আসবে তা অপেক্ষা করে নিছক বসে থাকিনা। একবিংশ শতাব্দীর সম্ভাব্য পরিবর্তনের এই ভবিষ্যবাচ্যতা আমাদেরকে তুমুল এক  যুদ্ধের, অতিপ্রাচুর্যের অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করায় বৈকি। বাংলা সাহিত্যের পাঠক আজ এবং আগামীতে কী পড়তে চান? আমরা কীভাবে সেই চাহিদা মেটাতে পারি? আমরা কি আরো বেশি সাহিত্যিক সৃষ্টি করবো? আমরা কি আরো বেশি পাঠক সৃষ্টি করবো? করতে হলে কীভাবে করবো ? আধুনিক লেখককে আমরা কি আরো বেশি শিশুর স্বাধীনতা দেব, নাকি আরো বেশি অভিভাবকের শাসন ?

বাংলায় প্রকাশিত অন্যতম মুখ্য সাহিত্যপত্র হিসেবে আমরা এবংবিধ চ্যালেঞ্জের অগ্রকথকের দায়িত্বপালন করে আসছি  দীর্ঘ পনেরো বছর। সাহিত্যপত্র হিসেবে আমাদের প্রথম এবং উল্লেখযোগ্য বিবর্তন এসেছিলো আমরা যখন আমাদের প্রাধান্য এবং দীপ্যমানতা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলাম অনলাইন সাহিত্যচর্চায়, আমরা যখন সঠিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছিলাম পাঠকের ক্রমবর্ধমান চাহিদার, সেই ২০০৬ সালে ।  আমরা সক্রিয়ভাবে সেই চাহিদার জবাব দিয়েছিলাম একটি স্বতন্ত্র,  ধর্মনিরপেক্ষ, রাজনীতিনিরপেক্ষ এবং অব্যবসায়িক সাহিত্য পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করে। আন্তর্জাতিক মনস্কতা আমাদের মূলমন্ত্র। প্রকৃতির বিবিধ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার চিত্রায়নই যদি সাহিত্য হয়, প্রকৃতির যেহেতু কোনো সীমান্ত নেই, শিল্প-সাহিত্যকেও সেকারণে কোনো সীমান্তেই সীমাবদ্ধ করা সম্ভব নয়।  কার্তিকের কুয়াশার প্রথম প্রকাশ যুক্তরাষ্ট্রে এবং এখন কানাডায় হলেও সম্পাদনা থেকে শুরু করে লেখক, পাঠক ছড়িয়ে আছেন সারা বিশ্বেই। কার্তিকের কুয়াশা আমাদের সময়ের অন্যতম প্রধান সাহিত্য পত্রিকা যেখানে লেখক এবং পাঠককে দেওয়া হয়েছে স্বাধীনতা বা মুক্তির উচ্চতম মাত্রা, উচ্চতম ডিগ্রী অব ফ্রিডম । 

আজো আগের মতোই আমরা জবাব দিচ্ছি, প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছি বাংলা সাহিত্যের নিত্য-নতুন চাহিদা মেটাতে।  মাসান্তে অনলাইন সাহিত্যের আসরের ব্যবস্থা করেছি, পাঠককে বুঝতে, লেখককে বুঝতে, আমাদের অবস্থানকে বুঝতে। আমাদের গ্রন্থাগারে নিয়মিত নতুন বই সংযোজনের মাধ্যমে লেখক এবং পাঠকের প্রাথমিক প্রস্তুতির চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ব সাহিত্যের সাথে নিবিড় সম্বন্ধ সৃষ্টি করতে রুশ ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। 

আমাদের লেখক এবং পাঠক সংখ্যা বাড়ছে।  প্রত্যহের ব্যস্ত সময়ের ভেতর শিল্প-সাহিত্যের জন্য সময়ের সর্বজন গ্রহণীয় ব্যবস্থাপনার একটি সাধারণ সমাধানও আমরা করতে পেরেছি। লেখক এবং পাঠক উভয়কুলের জন্যই সময়ের অভাব সব  থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।  সময়ের এই অভাবের কারণেই অসংখ্য প্রতিভাবান লেখক কুয়াশার চাদরে মুখ লুকিয়ে আছেন। বাস্তবিক আলোকপাতে সেইসব প্রতিভাবান সৃজনশীল লেখকদের আবিষ্কার করাও কার্তিকের কুয়াশার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। 

আমরা সব সময় ভবিষ্যতের দিকেই চোখ রেখে আছি। ভবিষ্যতে বাংলা ভাষার বিবর্তন, শব্দসমূহের নতুন অন্তর্ভুক্তি, বাহুল্য শব্দ বর্জন, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন, সংস্কার ও সংযোজনের প্রতিফলন এবং পাঠকের হাতে তা পৌঁছে দেওয়াও আমাদের এক দায়ভার। এটাই আমাদের অবিরাম মান-উন্নয়ন-পদ্ধতি, যাকে  আমরা বলে থাকি পাঠক-তৃপ্তির মাধ্যমে নেতৃত্ব দেওয়া। আমরা জানি আমাদের শ্রেষ্ঠ দিন আগামীকাল, আমাদের শ্রেষ্ঠ কাজ  ভবিষ্যতের পাঠক যা চাইবেন তা পৌঁছে দেওয়া। 

কার্তিকের কুয়াশার এবারের সংখ্যাকে সংগৃহীত যেসব সাহিত্য রচনা অলংকৃত করেছে তা উপরোক্ত প্রতিজ্ঞারই বাস্তব অবয়ব। 

প্রতিশ্রুতি নেহাত একটি মূলমন্ত্র বা আদর্শবাণী নয় যা আমরা শুধুই দেয়ালে টাঙ্গিয়ে রাখি, কেউ না রাখুক, কার্তিকের কুয়াশায় কথা দিয়ে আমরা কথা রাখি বারো মাস। 

 

সাইদুজ্জামান
টরন্টো, কানাডা