টরন্টো, ২১ শে মার্চ, ২০২১, নভো সংখ্যা ১৮ 
              
হোমপেজ সম্পাদকীয় পাঠক পরিষদের কথা কবিতা ছোট গল্প ধারাবাহিক পাঠাগার আর্কাইভ লেখক পরিচিতি প্রবন্ধ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল যোগাযোগ আবৃত্তি

কার্তিকের কুয়াশা

কবিতার পাতা

অলীক বসন্ত

মধুবন্তী আইচ

মেঘ বলে যদি ডাক পাঠাই জ্যোৎস্নামাখা রুপোলি রাতে,
পলাশের আবিরে রাঙ্গানো শাদলের মাঠে মাদল তানে কিংবা
আলো - আঁধারির কাটাকুটি ছায়া ছায়া বনের প্রান্তে...
কথা ছিল অঝোর ধারায় ভিজবো দুজনে সবুজের গালিচায় অকাল বর্ষণে।
আঙুলে আঙুল জড়াবে- সরে যাবে বৃষ্টিফোঁটাদের স্ফটিক আবরণ,
যুগ্ম নিঃশ্বাসের উত্তাপে কিছু অপত্য বৃষ্টিকণা উবে যাবে,
বাষ্পীভূত মেঘ হয়ে আশ্রয় খুঁজবে
আবেশে আধবোজা চোখের পলকে।
আদরের তিরতিরে ভালোলাগায় ঝরে পড়তে চাইবে তোর
চুলে, গালে, তৃষ্ণায় উদ্ধত ঠোঁটে অথবা হাতের তালুর উষ্ণতায়...
ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধে সিক্ত হবো, রিক্ত হবে মন,
আবার কানায় কানায় উঠবো ভরে তোর হাতের মুঠোয় হাত রেখে।
গহীন জলের অতল তলে তুই হারাবি পথ,
লাল পাহাড়ি, খোয়াই পাড়, মেঘমল্লার কিংবা রাগ সপ্তক।
বানভাসিতে কূল হারাবি, ঠিক আগের মতই ঘুম ভাঙ্গানিয়া গান শোনাবি...
তোর গানের শহর, প্রাণের শহর - সাতরঙা সেই প্রেমের শহর
অর্ধেক জীবন অপেক্ষারত চাতক পাখি বৃষ্টির শহর;
বসন্তে যার সীমন্ত আজও গুলালে রাঙা,
কালবোশেখী আজও বৃষ্টি নামায় আকাশভাঙা।
মেঘ, যদি তোকে আকাশ বলি
সব অভিমান যাবি ভুলে?
মেঘ, যদি তোকে দোসর বলি
আনিস তবে রং তুলি।
মেঘ, যদি তোকে নয়ন বলে ডাকি - তোর নীল রঙে
ডুবিয়ে ঠোঁট সবুজের সীমানায় দিগন্ত আঁকি!
মেঘ তোর বুকের নরম-
শীত-দুপুরের মিঠে রোদে পেঁজা তুলোর ওম।
মেঘ তোকে আজ জড়িয়ে থাকি - আগুন ফাগুন মাখামাখি।
সেই আগুনে তোর নিঃশ্বাস, হাত রেখে দ্যাখ মনের আশপাশ।
পুড়ছে মন, পুড়ছিস তুই -
আর জ্বলছে চিতায় প্রেম যা রয়েছে বাকি।
চিতাভস্ম থেকে শিৎকারে ওঠে অনুভুতির ফুলকি আর
লেলিহান শিখায় ভর করে ডানা মেলে আগুন-পাখি।।

 

বসন্ত বালিকা এসো

ড. ফেরদৌসী বেগম 

বসন্ত বালিকা এসো
চৈত্রের উঠোনে মাতো বৈসাবী নৃত্যে
শ্যামল আঁধার ঘুচিয়ে
তোমার বসন্ত শাড়ীর রক্তিম পাড়ে
তপ্ত করো ভূমি
হলুদ ভূমিতে আজ হাহাকার
আকাশে উড়ে একচোখা চিল
মাটিতে তুষারদল।
এখানে এখন রাজহাঁস দুপুর ঘুমিয়ে আছে চৌকাঠে
চৈতালি হাওয়ায় ছিটকে যাবে পদ্ম সরোবরে
আগুন পলাশ এসো আগুন শিমুল এসো
কান পেতে আছে তক্ষক
গেরুয়া বিকেলের আশায়।
বাতাসে নক্ষত্রের গণ্ধ
বসন্ততরাজ গেয়ে যায়
কিশোরী পাতার মর্মরে ফোটা বসন্ত ফুল
রাস্তার মোড়ে ল্যাম্প পোস্টে শোভা পায়
শহরের কপালে এঁটে রয়
দীপ্ত-তিলক।

তুমি চলে যাবে
- তাপস কুমার দাস

তুমি চলে যাবে,
সময় কড়া নাড়ছে
কত কথা রয়ে গেল বাকি,
কত কিছু হল না করা
আজ এই বিদায়লগ্নে
হিসেবের কাটাছেড়া

তুমি চলে যাবে
সময় যাবে পেরিয়ে
হয়তো আর আসবে না
হয়তো ভুলে যাবে
হয়তো বকবে প্রলাপ
নয়তো অজুহাত মনগড়া।

 

অপেক্ষা
শায়লা আজীম

দেখো তো সেজেছি কেমন ,দেখো না কেমন সেজেছি।কেমন লাগছে আমায়?

এই দেখো কত বড় লাল এক টিপ পরেছি ঠিক কপালের মাঝ খান টায়।

দেখো দেখো দু হাতের মেহেদির কি জটিল এক আলপনা, একেবারে টকটকে লাল -

দেখো না রেশমী চুড়িও পরেছি। শুধুমাত্র শাড়ীটাই বাকী আছে ।

খোলা জানালায় দাড়িয়ে সকাল দুপুর আর রাত

বিড়বিড়িয়ে কথা গুলো বলে যায় মেয়েটি ।

আমায় নিয়ে স্বপ্ন বেধেছিলে কিনা, আমার তা জানা নেই..

কিন্তু আমার স্বপ্ন নীড়ের একচ্ছত্র আধিপত্য যে ,

সেই কবে থেকেই অধিকার করে ফেলছ তা যদি তুমি জানতে..

যখন শহর জুড়ে রাত্রি নেমে আসবে..

তমসায় ছেয়ে নিয়ে যাবে সবটুকু আলোক দৃপ্তি..

তখন আমি শহরতলীর একপ্রান্তে নিশ্চুপে তোমায় নিয়ে আলো জ্বালবো..

রোদসী ক্রন্দসী জুড়ে কিরণ ছড়াবে সেই মৃদু নরম আলো..

আর আমি তোমার ঘরে ফেরার অপেক্ষায় থাকবো।

সে আর ফিরে আসে না , সে আর কোনদিন ও ফিরে আসবে না -


প্রত্যুষের শিশির স্নানে সিক্ত ঘাসের উপর- উন্মুক্ত পায়ে ছুটে চলা মেয়েটি ,

অপার্থিব উল্লাসে এক অপেক্ষায় আছে - সে ফিরে আসবে

মনের গহীন কোণে আশার কুঠিরে আলো জ্বালিয়ে সে অপেক্ষায় থাকে ।

সে আর ফিরে আসে না , সে আর কোনদিনও ফিরে আসবে না

 

ঐতিহ্য নতশির
ড. পরমেশ ঘোষ

ছিন্ন মূল-
সেলাম কমরেড নজরুল!
মাত্রাবৃত্ত মুক্তক ছন্দে ধূলিসাৎ ভয়ঙ্কর প্রতিকূল!

লক্ষ্য স্থির-
দুঃখী প্রতিজন পৃথিবীর!
জল-মাটি-বায়ু মোদের আয়ু সমান দান এ ধরিত্রীর!

স্বামী-স্ত্রীর,
অসন্তোষে ঘেরা বদ্ধ নীড়
ভাঙিয়া গড়িব বিবাহবিহীন সমব্যথী সমষ্টির।

কর্ম-বীর-
লক্ষ্য অর্জুন-সম স্থির!
দৃঢ়তা মোদের চুর্ণিল সমাজের ঐতিহ্যের ভিত্তির!

জয় সত্যির-
যত কুসংস্কারের শৃঙ্খল ছিঁড়ি,
গড়িব বেনিয়ম সত্যেরই সিঁড়ি -
পৃথিবীর সত্যবাদীরা মিলিয়া
ধর্ম্মান্ধতার মুখোস ছিঁড়িয়া,
নিসংশয়ে ধ্বংস ক’রিব ছদ্ম সপ্তপদীর;
অনায়াসে মোরা রেনেসাঁ আনিব মানুষের ধরিত্রীর!

উচ্চ শির-
মোরা কর্ম্মী এপৃথিবীর!
আমরা দুর্দম, দূর্বিনীত, দূরদর্শী,
মোরা পরিবর্ত্তনে পারদর্শী, প্রতি মানুষের মর্ম্মস্পর্শী!
মোরা সুনিশ্চয়, নির্ম্মূল ক’রি কুসংস্কার,
মোরা প্রহ্লাদ,
চূর্ণ ক’রি দুর্নীতির যত প্রাসাদ!
মোদের সত্য সুনির্ম্মল,
ছিন্নভিন্ন ক’রি বন্ধন যত, নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!

সত্যের খোঁজে অচঞ্চল,
মিটিয়ে দিই সব সীমারেখা, ক’রি আইনের রদ-বদল;
মানি না কোনো আইন মোরা ভিসার,
উপগ্রহে চড়ি চন্দ্রে-মঙ্গলে চলি, প্যারাগ্লাইডে বিদেশ আবিষ্কার।।
মোরা সুনামী রুখিবো, বাঁচাবো যতো দান প্রকৃতির;
নিঃশেষ করি করোনার মোরা, জয় মানব জাতির।
মোরা বিদেহী প্রতিবাদী সন্তান বিশ্ব-বিধর্ম্মীর!

কর্ম্ম-বীর-
সদা জাগ্রত এ শিবির!
ঘুমোতে পারিনি বহুদিন,
অতীতের এই অতৃপ্ত ঋণ,
কবে স্মৃতির কঠোর বন্ধন-ডোর ঊর্ণনাভ রজ্জুতে বাঁধিবে না?
চোখে চোখ মিলি, ক’বো মন খুলি, কোনো জটাসুর রুখিবে না?
বেদনা বাঁটিবো মোর,
ঘুমাইব নিশ্চিন্ত দিন-ভোর!
দুঃখ ঘুচাইব পৃথিবীর!
শিকল-মুক্ত, নির্ভয় চিত্ত, চির-উদ্ধত শির!

লক্ষ্য স্থির-
দুঃখী প্রতিজন পৃথিবীর!
জল-মাটি-বায়ু মোদের আয়ু সমান দান এ ধরিত্রীর!

মহা পরিশ্রমী, চির-অক্লান্ত!
বধি মিথ্যারে, সত্য অভ্রান্ত।
যবে বিনা ক্রন্দনে উৎপীড়িতেরা চুপিসাড়ে গুমরি মরিবে না,
বিশ্বাসঘাতকের গোপন কুঠার তিলে তিলে জীবন বধিবে না -
সত্য-সিপাহী অক্লান্ত,
মোরা হবো তবে নিশ্চিন্ত!
মোরা সত্য-উপাসী বীর -
মোরা বিশ্ব জুড়িয়া উঠিয়াছি জাগি, উপাসক মুক্তির!

সত্য বীর-
ওঙ্কার জয়ধ্বনির!
নেহারি দীপ্তি মোদের ধিকৃত যত ঐতিহ্য নতশির!

 

 

পরবধূ 
 সাইদুজ্জামান

 

ভালো তো বাসো না,
কাছেও শুধু আসো না,
সঙ্গে আসে, অঙ্গে ভাসে কামনা-বাসনা,
আমি আর যাবোনা, আর যাবোনা
মিছেমিছির প্রেম-তলা,
অন্য কিছুর জন্য এখন মন উতলা।

কিছু দূরত্ব থাকা ভালো,
আলোর ভেতর কিছু কালো,
সুখের ভেতর যেমন চাই পদ্মরাগ-দুঃখ,
পরবধূ, তুমি ঘরে-বরে থাকো, ও নয় এখন মুখ্য।
কখনোই থাকেনা করতলে মধু-গন্ধি সব কটি ফুল,
আঙুলের ফাঁকে গলে যায় কিছু শিউলি-বকুল।