টরন্টো, ৪ঠা কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, নভো সংখ্যা ১৩
              
হোমপেজ সম্পাদকীয় পাঠক পরিষদের কথা কবিতা ছোট গল্প ধারাবাহিক পাঠাগার আর্কাইভ লেখক পরিচিতি মার্জিনে মন্তব্য  যোগাযোগ আবৃত্তি

কার্তিকের কুয়াশা

কাব্য সমালোচনা 

-ফিরোজা হারুন, মহাখালী, ঢাকা 

 

কার্তিকের কুয়াশা –নভো সংখ্যা ১২
প্রকাশকালঃ সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০
অনেক প্রতীক্ষার পর সাহিত্য পত্রিকা কার্ত্যিকের কুয়াশার আগমন সাহিত্য অংগনে নতুন জাগরণ সৃষ্টি করেছে। এই ম্যাগাজিনের মাধ্যমে যারা কাব্য চর্চা পিপাসু তারা একটি জানালা খুঁজে পান। ঐ বাতায়ন পাশে বসে তারা বিশ্বকে অবলোকন করতে পারেন। দেখতে পান আকাশ, বাতাস, ফুল, ফল, পাখি এবং নানাবিধ জানা আজানা বাস্তবতা। দেখতে পান মানুষের জীবনের হাজারো রকম ভাবনা, আনন্দ, দুঃখ, বিরহ, ভাললাগা, ভালবাসা, জীবনের জয়গান, নদীর কলতান এমনকি সাগরের দিবারাত্রির বিরহি গর্জনের মধ্য দিয়ে তার অনন্ত জিজ্ঞাসা।
কার্তিকের কুয়াশা এবারের সংকলনে সুন্দর সুন্দর কবিতার সংযোজন ঘটেছে। আলীম আল রাজী –আজাদ রচিত ‘উপমা’ কবিতাটিতে যেন শব্দ ও বর্ণের মেলবন্ধন একটি সৌন্দর্য স্নাত কল্পনার জাল বুনে তৈরী করা আনন্দ বেদনার নকশী কাঁথা।
শিউলী জাহানের ‘পরিব্রাজক হয়ে উঠি প্রতিদিন’ কবিতা ইংগিত দেয় জীবনের গূঢ় সত্যের, যখন সিড়ির ধাপগুলো কেউ কেউ মিলাতে পারেনা। ব্যর্থতা, সফলতা নিয়ে তাই সে যেন চলতে থাকে আবৃত্ত অনেকের মত।
‘অন্য কিছু নয়, মানুষ কখনও কখনও নিজের মনের কথা শুনতে চায়’ –শেলীনা জামানের বিলাপ বিলাসের শেষ কথাটি যেন খুব সত্য একটি কথা যা খুব সাবলীল ভাবেই প্রকাশিত। তারপরও কেউবা সাধ করে দুঃখ পেতে ভালবাসে। তাই বিলাসী হৃদয় কারোর জন্য বিলাপ করে জীবনের পথ খুঁজে চলে।
কারো সত্তা প্রতিনিয়ত জন্মলাভ করে নতুন কিছু সৃষ্টির আনন্দে উল্লাসিত হয়ে। সাগর জামানের ভাবনায় তাই- ই প্রতিফলিত হয় তার ‘প্রতিদিনই আমার জন্মদিন’ কাব্যে । যে ভাবনা নব নব আলোকে উদ্ভাসিত করে চারপাশ। সুখের সন্ধান করে নতুন জীবনের।
অস্তাচলের পানে চেয়ে চেয়ে কেউবা ফেলে আসা দিনগুলির সন্ধান করে। হোসনে আরা জেমীর ‘বেলা শেষে’ পড়ে মনে হয় এ সন্ধানে তাতে তেমন লাভ নেই। যার যাবার সে যাবেই। তার চেয়ে অস্তগামী গোধূলীর নরম আলোয় জীবন স্নিগ্ধতায় ভরে উঠুক –এ টুকুই তার চাওয়া।
নদী রহমান এর ‘ছুটি’ কবিতাটি অভিমানী প্রিয়ার অবুঝ মনেরই ঝর্ণাধারা। সবুজ বনের সবুজ টিয়া পাখি আর নাই বা ডাকলো, নাই বা করলো ছুটোছুটি, তবুও তো একদিন সে ছিল, সেই আনন্দই বুকের কুঠুরিতে ভরে রাখবো। আবার তেমনি এক অভিমানিনীর হৃদয়ের বেদনা অপরাজিতা অর্পিতা তার ‘সমর্পিত হৃদয়’ কবিতায় ব্যক্ত করেছেন। সমর্পিত হৃদয় কখনো পরাজিত হয়না । কখনো সে জেগে উঠে প্রবল আক্রোশে, কখনো নত হয় প্রবল ভালবাসায়।
সাইদুজ্জামান রচিত ‘রোদ উঠেছে চাঁদে’ কবিতাটি স্মৃতি মুখরতায় ভরপুর। মনে পড়ে ব্রুকলিন ব্রিজের স্মৃতি। স্মৃতি মানুষকে কাঁদায় বিচ্ছেদের দহনে । তবুও বলে যায় , ‘কা তব কান্তা’ –তুমি কার কে তোমার? হয়তো কোনদিন ব্রুকলিন ব্রিজের পাশে নয়, হয়তো বা সেই ধানসিঁড়ি নদীটির তীরে এই বাংলায় দেখা হবে কোন এক সোনালী ঊষায়।
মহীরূহ –বৃক্ষ । বনের রাজা। তবুও কাজের অন্ত নেই। তার জন্য এই পৃথিবী এত সুন্দর, এত মধুর, এত আনন্দের। কিন্তু সে যে কত অসহায় তার কথা কি আমরা কখনো ভেবে দেখি। ফিরোজা হারুনের ‘বৃক্ষ’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে এ ভাবনা অনবদ্য রূপে।
কার্তিকের কুয়াশার ১২ তম সঙ্কলন বেশ সময় নিয়ে বের হলেও বের হোক। কারণ এর প্রকাশ অনেক পাঠককে উৎসাহিত করবে। লেখার প্রেরণা যোগাবে, আনন্দ দেবে। কারণ আনন্দই জীবনের তৃপ্তি।