টরন্টো, একুশে এপ্রিল, ২০২৩, নভো সংখ্যা ৩৯   
              
হোমপেজ সম্পাদকীয় পাঠক পরিষদের কথা কবিতা ছোট গল্প ধারাবাহিক সাহিত্য সংবাদ ভ্রমণ কাহিনি নিবন্ধ প্রেমপত্র বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল আবৃত্তি / কণ্ঠসঙ্গীত পাঠাগার আর্কাইভ লেখক পরিচিতি যোগাযোগ

কার্তিকের কুয়াশা

 

কবিতার পাতা

 

 

 

 

 

 


 

প্রনব ভট্টাচার্য কবিতা

 

----আমন্ত্রণ ---

যেতে তো খুব ইচ্ছে করে
শীতের ভোরে পা বাড়িয়ে
স্মৃতিও তো তাড়া করে
ডাকছে সে ও হাত নাড়িয়ে।
জীবনের এই বিকেল বেলা
যাই কী করে পিছুর টানে
ফেলে আসা ছোট্ট বেলা
আবছা আবছা পড়ে মনে।
ছোট্ট শহর দিঘির পাড়ে
বিকেল হলে ছায়া পড়ে
বইত পাশে ছোট্ট নদী
সেই শহরে ফিরি যদি
চিনবে কি আর তেমন হলে
ডাকবে কি আর খোকন বলে?
যেতে বড়ো ইচ্ছে করে
জলভরা ওই দিঘির পাড়ে
সেথায় শাপলা পদ্ম ফুটতো
জোছনা রাতে চাঁদ উঠত
তারই ছায়া পড়তো জলে
গা ছমছমে সন্ধ্যা হলে ।
জীবনের চাঁদ অস্তের আগে
বাল্য-স্মৃতি মনে জাগে।

 

 

 

 

সাইদুজ্জামানের কবিতা 

 

টরন্টো প্রিয়তমা - ১


[চতুর্দশপদী কবিতা অক্ষরমাত্রায় ৮+১০ চালে লেখা ]
সাইদুজ্জামান
টরন্টো শহর দেখি রেখেছে আমায় বন্দী করে
ভালোবাসা দিয়ে জয় সে করেছে বাহিরে অন্তরে
আটকে গেলাম আমি, পায়ের তলায় জন্মে গেছে
শিকড় যেমন গাছে, আনন্দেতে আছি আমি বেঁচে।
হ্রদ-পার্শ্বে শায়িতা সে - নগরী সুন্দরী, আমি যত
চেয়েছি দিয়েছো তুমি, তারও বেশি মায়া অবিরত।
শীতে তাপ রোদে ছায়া বিষাদে গভীর ভালোবাসা
মেপল পাতার উষ্ণ আদরে উঠেছে জেগে আশা।
এ শহর দিতে পারে যাকিছুই চাও তার সব
দিতে পারে সুখ শান্তি দিতে পারে ভক্তি ও বৈভব।
সুখে দুখে মুখে বুকে তুমি ছাড়া বোঝে নাই কেউ
কতটা কাঙাল ছিল বক্ষে কত বেদনার ঢেউ।
হে টরন্টো তুমি ছাড়া আর কেউ নেই কোনো নারী
দুঃখ তেড়ে এলে যার বুকে ছুটে আমি লুটিবার পারি।
৩রা ডিসেম্বর ২০২২

চতুর্দশপদী কবিতা
১/৩০০

ভিড়ের ভেতর হারিয়ে গেলে তনুমধ্যা, খেলাচ্ছলে
এখন যখন বৃদ্ধ আমি গাছের কোমর ধরে
টের পাই ফলদুটো তার ফুলে ফেঁপে রাঙ্গা হলে
কাঁপছে ভ্রমর বৃন্তে বসে এতটা ক্ষণ কী করে!
তনুমধ্যা, তনু দাও করি আলিঙ্গন , অগ্নি দাও
পান করি, এইখানে এসো ভ্রূমধ্যে পরাবো আমি
সোনালী মেপল পাতা আমার যা কিছু আছে নাও
এইখানে সব আছে, এসো রোদভরা জলে নামি।
এইখানে সব আছে, নরম সবুজ ঘাস আছে,
গাছের শাখায় রাখা আছে রংধনু মণিহার,
এখানে হৃদয় নাচে। তুমিই কেবল নেই কাছে।
তনুমধ্যা, বৃদ্ধে তনু দাও - আলিঙ্গন করিবার ।
ফিরে এসো, তনুমধ্যা, এই বুকে স্মৃতি গেছো ফেলে
বাগানে ফুটেছে নীল ফুল, তাই দেবো তুমি এলে ।
টরন্টো, এপ্রিল ২, ২০২৩
তনুমধ্যা = a woman with a delicately slender waist.

চতুর্দশপদী কবিতা
২/৩০০

এক বুনোফুল আছে, অপোষ্য মৃত্তিকা ফুঁড়ে জন্ম
দলগুলো তার দোলে শোভাকর বুনো আর খাঁটি
তুমি আছো প্রকৃতি প্রতীক এক কবিতার মর্ম
এক দৃশ্য যে ফোটায় হাসি, ঠিক যেন বেলেমাটি।
রঙগুলো তার জ্বলজ্বলে, দুর্লভ রত্নপ্রভ সে
শ্রীমণ্ডিত তৃণভূমি স্পন্দমান তার বর্ণচ্ছটা
হাওয়া যদি স্পর্ধা করে বয়ে যায় নদী ভালোবেসে
সুবাস তাহার ভরিতেছে বায়ু মেঘে ঘনঘটা।
চমৎকার এক সৃষ্টি তো সে, বেসেছি তাইতো ভালো
কোমল তাহার অঙ্গখানি আটকে যায় দৃষ্টি
সুখ ও সমৃদ্ধি তার ছড়িয়ে থাকুক মাঠে আলো
ক্ষান্তি দাও ক্লান্তি সব ঝরুক অঝোর ধারা বৃষ্টি।
হে আমার বুনোফুল তুমি এক শিরোরত্ন দামি
হে সুরসুন্দরী দেবী,প্রেম আছে বুকে, আছি আমি।
টরন্টো, এপ্রিল ০৪, ২০২৩

 

 

 

 

 

 

জয়া চক্রবর্তী সোমার একগুচ্ছ কবিতা 

 

নীরবতা
যে কথা হয়নি বলা
প্রেমিক হৃদয় শুধু বোঝে
কিছু চোখ বাঙ্ময় হলে
কিছু ঠোঁট নীরবতা খোঁজে।

***

অভ্যেস
সে আর সে বহুদিন ধরে
পাশাপাশি আছে বেশ,
লোকে বলে তারা ভালোবাসে,
শুধু আমি জানি অভ্যেস।

***

শুকনো গোলাপ
আলপাকা রঙ চাদরের ভাঁজে
ফেলে আসা উত্তাপে
ফিরব বললে ফিরে যাওয়া যায়
পুরানো কফির কাপে?
যেটুকু রয়েছে ছিল সেটুকুই
বিস্তর জমা পুঁজি
নির্বোধ মন, আজকের বুকে
গতকালটাকে খুঁজি।
শীতের সন্ধ্যা স্মৃতি মেখে নেয়
অপেক্ষাদের আঁচে
মফস্বলের অলিগলি পথে
গচ্ছিত রাখা আছে।
গচ্ছিত থাক সিন্ধুকী প্রেম
স্মৃতিদের এলবামে
ভালোবাসা ছিল, সেটুকুই থাক
শুকনো গোলাপ নামে।
***

আলিঙ্গন
জড়িয়ে গিয়েছে আষ্টেপৃষ্টে
নিবিড় আলিঙ্গনে
ভালোবাসা তার আঁকড়ে রয়েছে
অমোঘ মাটির টানে।
পাথরের বুকে ফাটল ধরালো
ভাঙনের বুকে মাটি
চারাগাছটার সবুজ বুকেতে
ভালোবাসাটুকু খাঁটি।
উচ্ছ্বল নদী তান্ডবী ঝড়
যতই আসুক কাছে,
শিকড়ের টানে জড়িয়ে রাখবে
বিশ্বাস তার আছে।
মাটিও ভেজাবে শিকড়ের বুক
শুষে নেবে স্নেহধারা
যুগান্তপার সবুজের প্রেমে
জড়িয়ে রেখেছে তারা।


 

 

 


 

 

 

 

 

তনুশ্রী সামন্তর একগুচ্ছ কবিতা   

 

 

আলোছায়া


অপরাহ্নের নরম রোদের গায়ে
ফিঙের ডানায় লেখা হলো যত গান...
কেউ জানবেনা হয়তো বা কোনোদিন
আনকোরা সেই বর্ণমালার নাম।
সন্ধ্যা ঘনায় আঁধারি দুর্বাঘাসে
টুপটাপ ঝরে শিশিরের হিম দানা...
তারার আলোরা ফেলে যায় আলগোছে
দুচোখের কোণে চিকচিক বালুকণা।
জানি কিছু পরে রাতটাও গাঢ় হবে
তুমি ফিরে যাবে বাতাসি নদীর দেশে...
কবিতারা সব ছায়ার হাত বাড়িয়ে
টানতে চাইবে তোমায় আমার পাশে।
ঢেউয়ের শরীরে মিশে যাও তুমি যদি
চাঁদ ঢালে যদি রূপোলী আলোর মায়া...
তবু বিষণ্ণ রাতজাগা চোখ খোঁজে
আলোর গায়েও লেগে থাকা কিছু ছায়া।

***
চলো ভালোবাসি...❣️

চলো অনেক অনেক ভালোবাসি
ঠিক যতটা বাসতে পারলে ভালো,
হার মানবে বিরাট সমুদ্দুর
লজ্জা পাবে চাঁদের মিঠে আলো।
গাছের ডালে কপোত আর কপোতী
থামিয়ে দিয়ে ঠোঁটের আদরবাসা,
নীরব হয়ে দেখবে চেয়ে চেয়ে
তোমার আমার অবাক ভালোবাসা।
কুলুকুলু বয়ে চলা নদী
বলবে হেসে সত্যি তোমরা পারো!
একটুখানি থামিয়ে দিয়ে চলা
বলবে আচ্ছা ভালোবাসো আরো।
ফুল ও ভ্রমর আকুল হৃদয় নিয়ে
করবে এমন ভালোবাসার আশা,
উতল বাতাস বলবে ছুটে এসে
ভালো থাকুক এমন ভালোবাসা।
প্রজাপতি পতপতিয়ে উড়ে
বসতে চাইবে তোমার আমার পাশে,
মিটমিটিয়ে চাইবে মুখের পানে
একটুখানি আনকো রঙের আশে।
বৃষ্টি এসে ভিজেই নেবে খানিক
তোমার আমার প্রেমের ঝর্ণাধারায়...
আলোও গিয়ে করবে কানাকানি
সূর্য চাঁদে কিংবা তারায় তারায়।

***

রঙ রঙ...
রঙ রঙ খেলা বুঝি শুধু এই ফাগুনেই
আমার তো রঙ ছাড়া একটাও দিন নেই,
লাল নীল সবুজ আর হলুদের রোশনাই
হরদম রঙ মাখি একা একা একলাই!
অনুভবে কত রঙ ভালোবাসা গোলাপী,
টুকটুকে লাল প্রেম পলাশের মতো কি?
নীল নাকি স্বপ্নের, সাহিত্যে বলে তাই
কেউ বলে বিষাদের রঙও নাকি নীলটাই!
বয়সটা ভুলি আমি তরতাজা সবুজে,
গোধূলির কমলাতে খাই হাবুডুবু যে!
ভালোলাগা হলুদেই,হলুদে বসন্ত
কালোতে কৃষ্ণ আর কালোতে কলঙ্ক!
এতদিন দেখে শুনে বুঝে গেছি সবটাই
রঙ দেখে চোখ নয়,রঙ দেখে মনটাই,
যেই মন যেরকম রঙেতেই দ্রাব্য...
সেই রঙে রেঙে ওঠে জীবনের কাব্য!
রঙের তত্ত্বকথা বিজ্ঞানে কত যে,
ফিজিক্সটা ভুলে গেছি কবিতায় বাঁচি যে!
এইটুকু বুঝি শুধু,জীবনের প্রতিমা
রঙটুকু ঝরে গেলে খড় মাটি বৈ না!
তাই আমি এঁকে চলি লাল নীল বেগুনী
সাতরঙে ঢেকে রাখি জীবনের কাঁদুনি,
জীবনের সফলতা রঙেতেই মাপা যায়
সাদা কালো ক্যানভাস যতটুকু ঢাকা যায়।
***

ভালোবাসলে বলেই
শুধু তুমি ভালোবাসলে বলেই
আকাশ হলো গাঢ়তর নীল,
গাছের পাতা আরও সবুজ হলো
কথায় কথায় পেলাম ছন্দমিল।
কালবোশেখী কাব্য হয়ে গেল
শ্রাবণধারা হল উছল নদী,
কলমীপুকুর, কদমতলার মাঠও
হয়েই গেল টার্নারেরই ছবি।
শুধু তুমি ভালোবাসলে বলেই
পাতা ঝরার পরের কিশলয়ে,
মারল উঁকি কৃষ্ণচূড়ার কলি
লাল সবুজের মধুর পরিনয়ে।
শুধু তুমি ভালোবাসলে বলেই
আকাশ বাতাস আমার হলো সব,
আমার হল মাঠঘাট আর নদী
আমার হলো পাখীর কলরব।
প্রজাপতির ডানায় মনের তুলি
নীল বেগুনী যা ইচ্ছে তা আঁকি,
যে যাই বলুক কান দিইনা কিছুই
সারাক্ষনই তোমায় ডুবে থাকি।
শুধু তুমি ভালোবাসলে বলেই
আলোর বলয় আমার চারপাশে,
এই পৃথিবীর সকল অন্ধকারই
সেই আলোতে ঠিকরে যেতে থাকে।

***

স্বপ্নেরা বড়ো মিষ্টি

আগুন বলেছে জলকে
চল,বাষ্প হবি কালকে?
তাই খুশির নাচন জলটায়!
বুঝি মেঘের দেশেই উড়ে যায়!
তবু শিকলটা ছিল গভীরে,
জল বেরোতে পারেনি তা ছিঁড়ে!
--তবে মেঘ-ডানা মেলা হলোনা?
--জল আগুনের ছোঁয়া পেলনা?
না না,তাই কি কখনো হয় কি!
এটা আটকানো আর যায় কি?
---তবে কি হলো গো, শেষ প্রান্তে?
--বড়ো ইচ্ছে করছে জানতে!
কেনো, স্বপ্নেরা এসে ভিড়লো,
এসে দুজনেরই হাত ধরলো!
--বাঃ,স্বপ্নতো বেশ সুন্দর!!
--বুঝি শিকল ছিঁড়লো তারপর?
না না,স্বপ্নেরা বড়ো মিষ্টি,
তারা করেনা তো অনাসৃষ্টি!
শুধু সুর তুলে মন বাঁশিতে,
তারা কাজ সারে মৃদু হাসিতে।

 

 

 

 

 

 


 

ফেরদৌসী বেগমের একগুচ্ছ কবিতা

 

সমান্তরাল......

তবুও থেকে যাই আজম্ম পিপাসু
এক নদীর কাছে ঋণী
তবুও মাটি আকড়ে রয়ে যাই
তৃণের মতো যান্ত্রিকতাবিহীন।
সব কোলাহল থেমে গেলে
জনশূণ্য ব্যস্ত সড়কে ছুটে বেড়াই
নিয়ন আলোর চাঁদরে
ব্যস্ত এ নগরে
কে মনে রাখে?কারো দায় নেই!
কালের স্বাক্ষী ঐ ধ্রুব তারাটি ছাড়া
কেউ স্হির নেই।
সেটিও আপেক্ষিক
কে জানে কোন কৃষ্ণ বিবর অপেক্ষমান
মানুষের সমান্তরাল।
আমাকেও টানে নগর আর অরণ্য
সমান্তরাল,
থাকি মাঝামাঝি
মধ্যবিত্তের টান পোড়নে
ঝাড়বাতি আর জোনাকি আলোর
মাঝামাঝি এক ল্যাম্পপোস্ট।
রাজশাহী/২৩.০১.২০২৩

***

না মানি জল না মানি কাজল......

জলে যদি ভাসে নদী
নয়নের কি লাগে,
মুছে গেলে যাবে কাজল
পেতে রেখো আঁচল,
হিজলের ফুল যদি জলেতে না পড়ে
শোভা কি আর হবে তাতে
যত বলে লোকে,
স্বজলে আঁখি যদি ভরিতে চায়
দাও তাকে .......
ঢেকোনা অজুহাতে
হয়ে যাক বরফ নদী তবুও না।
রাজশাহী/ ১০.০২.২০২৩

***

একুশ এলেই...

ধূলির শহরে পলাশ ফুটেছে
পলাশের রং কেন এতো গাঢ়
পীচঢালা রাস্তায় দেখ বর্ণমালা
ঝরাপাতায় হয়েছে নীল।
রফিক শফিকের রক্তের কসম
আর ভিজিও না আঁখি,
মা গো তোমার ছেলেরা আজ দেশ ছাড়িয়ে
ছড়িয়ে গেছে সারা বিশ্বে
আর কেঁদো না মাগো আমার
স্বীকৃতি পেযেছে বর্ণমালা সার্বজনিনতার
এখন তবে তো হাসো!
বুকের রক্তে ভিজে যায় যে পথ
তা কি হয় কখনও কালো!
এই দেখো মা
শিমুল পলাশ সব এসেছে
ফির বছর তারা আসে।
আজও কেমন দুঃখীনি মায়ের আঁচল পাতা
বুকের ভিতর বাজে।
একুশ এলেই পাতা ঝরে
একুশ এলেই ধূলি উড়ে
পলাশে ঢাকে পথ
তোমার আমার সবার মনে কি যেনো সব
অবিরত নাড়া দিয়ে যায়।
রাজশাহী / ১৮.০২.২০২৩

***

জমা থাকুক হৃদ গ্রহে......

এক নভো এককে দাড়িয়ে থাকা নক্ষত্র
আর তাপ ঢেলো না
চোখের পাতায়, চিবুকে
দেখিতে দাও
আমার হাজার দিবসের বিচরনভূমি
ডানা মেলতে দাও
উড়তে চাই ধূলি সরিয়ে
এ আমার প্যারিস রোড
যখন খুশি আসবো হাঁটবো
হাসবো, কাঁদবো মন চাইলে
আটকে রাখবো মানসপটে।
এ আমার শহীদ মিনার
পুষ্পস্তবকে ঢেকে দিবো শ্রদ্ধান্জলিতে
লহো মোর অন্জলি।
ফাগুনের হাওয়ায় আগুন রঙা
পলাশ ঝরেছে
স্পর্শ করতে দাও
এখানেই কাটিয়ে যেতে চাই এক প্রহর
কারো পরোয়া করি না
শুধু তোমাকে ছূঁয়ে থাকতে চাই
আমার বেলা অবেলা সবটুকু জুড়ে।
ফিরে আসি
বার বার আসি
ধূলিকণা জানে
সবুজ পল্লব জানে
হিল্লোলে হিল্লোলে,
আরো জানি আমার এ ছায়াটুকু জানে
আর একটু হেলে গেলে
প্রলম্বিত হতে হতে মিলিয়ে যাবে
মিশে যাবে অনাদিকালের এক হৃদ গ্রহে।

রাজশাহী/ ২৬.০২.২০২৩

***

অচিন কথন.......

পাথর ভেঙ্গে স্বপ্ন খুঁজি
খুব বেশি নয় একটি জীবন
ডুব সাঁতারে কাটতে পারে
এমন জলের আধার খুঁজি।
দোয়েল পাখির যেমন জীবন
শীষ দিয়ে যায় যখন যেমন,
শাপলা ফোটা ঝিলে যেমন
চাঁদের হাসি লেগেই থাকে।
আরেকটা জীবন গ্রহণ লাগা
ভীষণ কালো
নিজের ছায়াও অচিন লাগে
নিত্য হাঁটা পথগুলো সব কেমন যেনো
অচিন লাগে।
চলতে গেলেই বিষম বাধা
জয় করাটাও শিখতে হবে।
একটা জীবন ছোট অতি
দ্বিধা দ্বন্দ্বে বহুব্রীহি
অহর্নিশি ছুটে চলে
ছুটে চলে ট্রাম, বাসের সাথে সাথেই
শান্ত জলে ছায়া পড়ে
জীবন শুধু মুচকি হাসে!

রাজশাহী/ ০৮.০৪.২০২৩

 

 

 

 

ইয়াসমিন নাহারের কবিতা

 

একদিন সূর্যাস্তে

সন্ধ্যার সূর্যাস্তে
অপার মুগ্ধতায় জড়িয়ে নিয়েছিলাম আমি দু'মুঠো আবেশ
তারপর বিমোহিত আমি
নীরবতায় হাঁটতেই দেখতে পেলাম
খুব দ্রুত 'ও' ফিরে যাচ্ছে
যেতে যেতে বললো,কাল ফিরবো
ঠিক তোমার পূর্ণতা হয়ে
আমায় উদাস করে 'ও' চলে গেল
বিষন্নতা মেখে আমি একাকী বসে
হঠাৎ দেখতে পেলাম রূপের ছোঁয়া মাখিয়ে রাংগিয়ে উঠলো নীলিমা
লাল,নীল,কমলা,বেগুনি ও আকাশ নীলে
সে এক অদ্ভুত রংয়ের খেলা
খুব কাছ থেকে দেখা বিস্ময়কর এক বিস্ময়!
স্তব্ধতায় বিমূঢ় আমি
অনুভবের তন্ময়তায় ঢুবে আছি
তারপর অপেক্ষা!
'ও' ফিরবে, কাল আবার
সন্ধ্যার সূর্যাস্ত হয়ে ........

***

দিনান্তের হিসেব

পড়ন্ত বিকেলের সূয্যিটা যখন অস্তাচলে সমূদ্রের গহীনে চলে যায়
যেতে যেতে বলে,
আমি তোমার হিসেব থেকে হারিয়ে যাচ্ছি
আগামী কাল আবার সূর্যোদয় হয়ে ফিরবো
তোমার নতুন দিন নতুন আশা হয়ে
পূর্ণতা বা ব্যর্থতা বলো
সুখ বা দু:খ বলো
তোমার যেমন খুশি তেমন করে সাজিয়ে নিও
অতপর দিনান্তে সব বুঝে নিও
আমি অস্তাচলে হারিয়ে যাবার আগে।



 

 

 

 

 

 

নাস্রীন জেরিন সুলতানার কবিতা

 

"ভালোবাসা পুঁজি"

তুমি ডেকেছিলে নির্জনতায়,
একদিন আমায়।
কি যেন বলবে বলে,
বলনি লজ্জায়।
তারপরও আমি কতবার,
কাছাকাছি এসেছি তোমার।
প্রত্যাশা করেছি কিছু শোনার,
তুমি চুপচাপ ছিলে বারবার।
ভালোবাসার গহীন বনে,
তুমি ছিলে মনে মনে।
হৃদয় আলো করে,
আমার স্বপ্নের ঘরে।
রেখেছিলে আমারে,
তোমারও হৃদয় জুড়ে।
তারপর কেন আমায়,
দিলে ঠেলে দূরে।
ভালোবাসার বৃষ্টি ঝরা, ওই বাদল দিনে।
বাধা বন্ধন না মেনে,
ভিজে কাটাইতাম কত দু'জনে।
মনে পরে সেই স্মৃতি,
তোমার আমার গাওয়া গীতি।
অথবা কম্পিটিশনে আবৃত্তি,
পুরস্কার পেয়েছি কত জিতি।
তারপর, একদিন আমায়,
দিলে ঠেলে দূরে।
তাই আমি চলে গেলাম, অন্যের ঘরে।
নিজেকে করলে নির্বাসন,
করলে প্রবাস জীবন।
আসলে একদিন ফিরে, পেলে না আর আমারে।
আফসোস, আর না বলা কথা,
মনে মনে সঞ্চিত হলো ব্যথা।
নিজেই সেজেছ বাদী,
আবার হয়েছো অপরাধী।
তুমিও ঘর বাঁধলে,
অন্য একজনকে নিয়ে।
যাকে ভাবোনি কোনদিন,
কখনো ছিল না হৃদয়ে।
আমি নির্বাক হয়ে, অবাক চোখে চেয়ে,
দেখেছি, শুধু তোমারে,
দু'নয়ন ভরে ভরে।
সেই ভালোবাসা ভেসে-গেছে,
জীবন স্রোতে।
ভালোবাসার ছায়া রেখে গেছে,
জীবন-জীবনান্তে।
ভালোবাসা পুঁজি করে, আজও কবিতা লিখি।
স্বপ্নের ঘোরে সময়ের বালুচরে।

 




 

 

 


 

 

 

 

 

দেবশ্রী ব্যানার্জীর কবিতা

   

গোধূলি বসন্ত

 

তারিখ -২২/০৩/২৩

আগুন ঝরা ফাগুন ছিল না সেদিন..
ছিলনা বসন্তের সুসজ্জিত অগ্রিম আগমন!
তবুও মনে লেগেছিল রং কোন আবেশে..
সেজেছিল যেন দুটি পলাশ কৃষ্ণ
আর রাধাচূড়ার বন!
চাঁদের নেশা ছিল না মেঘের নীল আকাশে,
ছিল চোখের তারায় তারায় মৃদু কিরণ!
শান্ত উদাসী সুরে মাতাল দুটি কলি
প্রেমের বাতাসে ভেসে ছিল অলি!
সাঁঝের প্রদীপ জ্বেলে দিতে এসেছিলো
বেলা গোধূলি..
সোনালী রাঙা আলোকে আলোকিত ছিল
আঁধা নিশাগামী ভুবন❣️