টরন্টো,  একুশে এপ্রিল, ২০২৩, নভো সংখ্যা ৩৯
              
হোমপেজ সম্পাদকীয় পাঠক পরিষদের কথা কবিতা ছোট গল্প ধারাবাহিক সাহিত্য সংবাদ ভ্রমণ কাহিনি নিবন্ধ প্রেমপত্র বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল আবৃত্তি / কণ্ঠসঙ্গীত পাঠাগার আর্কাইভ লেখক পরিচিতি যোগাযোগ

কার্তিকের কুয়াশা

সম্পাদকীয়

 

 

কবিতা শুধু লিখি এইমাত্র। তবে এভাবে কোনদিন কবিতা নিয়ে বলতে বসিনি। তবু আজ এতদিন লেখার সুবাদে নিজের সামান্য উপলব্ধির নির্যাসটুকু আপনাদের সাথে বিনিময় করতে ইচ্ছে হলো। আমার ভাবনায় কবিতা হলো শব্দ সংবন্ধনের এক বিশেষ রূপ,যাতে মানুষের আবেগ, অনুভূতি, উপলব্ধি চিন্তাধারা....উপমা, উৎপ্রেক্ষা, অলংকার চিত্রকল্পের সমন্বয়ে মনোগ্রাহী হয়ে হৃদয়কে, চেতনাকে আন্দোলিত করে। তবে কবিতা যে সবসময় ছন্দোবদ্ধ হতে হবে,এই ভাবনা থেকে বেরিয়ে কবিরা অনেকদিন আগে থেকেই নানারকম নীরিক্ষার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছেন। তবুও একটা কথা আমার মনে হয় ছন্দবদ্ধ পংক্তিমালা অনেক বেশি হৃদয়গ্রাহ্য স্মৃতিগ্রাহ্য। সেই চর্যাপদকে প্রথম বাংলা কবিতার গোড়াপত্তন হিসেবে ধরা হলে,তারপর নানা বিবর্তনের মাধ্যমে বাংলা কবিতার ধারা এগিয়ে চলেছে। পদাবলী, মঙ্গলকাব্য, মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ,আল মাহমুদ... আরো অনেকে। তারপর জয় গোস্বামী,শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বিষ্ণু দে, সুবোধ সরকার... তারপর শ্রীজাত,সাদাইত হোসাইন...সব নাম উল্লেখ করা গেল না।এই স্বল্প পরিসরে হয়তো পুখানুপুঙ্খ আলোচনারও অবকাশ নেই। আরেকটা ব্যাপার নিয়ে আলোকপাত না করলেই নয়। তাই হলো কবিতার কাঠিন্য। বর্তমান প্রজন্মের বহু কবি কবিতার এমন এক দুর্বোধ্য নির্মান করছেন যা সাধারন পাঠককুলের কাছে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।কবির অন্তর্লোকের অনুভূতি যত শৈল্পিক হোক না কেন,তা সৌন্দর্যমণ্ডিত অনুভূতিগ্রাহ্য ভাষায় প্রকাশ না করলে তা শুধুই কবিকুলের কাব্য হয়েই থেকে যাবে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা পড়লেই আমরা বুঝতে পারি কত কঠিন ভাব, কত অধরা অনুভূতি তিনি প্রাঞ্জল ভাষায় সাজিয়ে মানুষের অন্তঃকরণে পৌঁছে দিয়েছেন। লেখার মধ্যে শিল্পিত লিখনশৈলী অবশ্যই থাকবে, তবে তা যদি মানুষের কাছে দুর্বোধ্য ঠেকে তাহলে কাব্যরচনার আসল উদ্দেশ্য অনেকটাই ব্যাহত হয়। কারণ কবিরা শুধুই আত্মবিলাসী নন।বরং তারা আত্মবিলাসিতা বর্জন করে নিজস্ব অনুভবটুকুকেও পৃথিবীর মানুষের জন্য সমর্পণ করে যান। বর্তমানে সোশাল মিডিয়ার আনুকুল্যে কবিতা যেন অনেকটাই মুক্তমঞ্চে পৌঁছে গেছে। এর ভালো মন্দ দুটো দিকই আছে। অনেক অনেক ভালো লেখা উঠে আসছে সোশাল মিডিয়া থেকে। কবিরা অনেক বড়ো প্লাটফর্ম পাচ্ছেন। পাঠকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ অনেক সহজ হয়েছে। বহুমানুষ কবিতার আঙিনায় আসার ফলে কবিতা নিয়ে নিত্যনতুন পরীক্ষা নিরীক্ষা বজায় আছে। যদিও আমি মনে করি কবিতার ঐতিহ্যবাহী ধারাটিকে ভুলে গেলে চলবে না। কারণ ট্রাডিশনাল কবিতা সম্পর্কে সঠিক বোধ না থাকলে নিত্যনতুন গবেষণা করা অনেকটা শূন্যে ডিগবাজির মতোই ভিত্তিহীন ফাঁপা নির্মিতি হয়ে যেতে পারে। কবিতা যেমন মানুষের নান্দনিক সৌন্দর্যবোধের হৃদয়বৃত্তির পরিতৃপ্তি ঘটাবে, তেমনই সমাজ, রাজনীতি,আধ্যাত্মিকতা,মূল্যবোধ প্রভৃতি বহুরৈখিক উৎকর্ষ সাধনের পথেও হাঁটবে। আর একটা ব্যাপার লক্ষ্য রাখতে হবে লবিবাজ, স্টান্টবাজ লোকেদের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে নির্মোহ, নিরাসক্ত প্রকৃত কবিরা যাতে উপেক্ষা অবহেলার আড়ালে হারিয়ে না যান। সেটা হবে বাংলা সাহিত্যের চরম ক্ষতি। তবুও খোলা থাক এই মুক্তমঞ্চ। বিবর্তনের অনিবার্য ধারায় সময় এবং সমাজের গ্রহনযোগ্যতা অনুসারেই নির্দিষ্ট হোক বাংলা কবিতার ভবিষ্যৎ পথের রূপরেখা। কবিতা সমাজ তথা মানবজীবনের দর্শন,মনন,কৃষ্টি, সংস্কৃতি হৃদয়বত্তার বহুমুখী শাখাযুক্ত বৃক্ষটিকে অন্তঃসলিলা ফল্গুধারার মতো নীরবে সিঞ্চিত করে চলুক।







 

তনুশ্রী সামন্ত, ডেবরা, পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ।