টরন্টো, ২৯শে নভেম্বর, ২০২২, নভো সংখ্যা ৩৮   
              
হোমপেজ সম্পাদকীয় পাঠক পরিষদের কথা কবিতা ছোট গল্প ধারাবাহিক সাহিত্য সংবাদ ভ্রমণ কাহিনি নিবন্ধ প্রেমপত্র বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল আবৃত্তি / কণ্ঠসঙ্গীত পাঠাগার আর্কাইভ লেখক পরিচিতি যোগাযোগ

কার্তিকের কুয়াশা

 

কবিতার পাতা

 

 

 

 

 

 


 

ঝর্ণা হবো

✍ রীনা ঘোষ

এবার তবে লিখবো না আর শ্রাবণ নিয়ে
ভাবছি এবার দূর পাহাড়ে ঝর্ণা হবো
আলতো হাতে আকাশ তোকে দেখবো ছুঁয়ে
রোজ সাঁজে তোর মনখারাপের সঙ্গী হবো।
পাহাড় বুকে খুব নীরবে বইবো যখন
পড়বি বুঝি কি লেখা এই হৃদ নিলয়ে।
আরশি আমায় দেখেই নাহয় নিস্ বুঝে তুই
নইলে যাবে মনের কথা মনেই রয়ে।
যখন পড়ন্ত দিন মনকেমনের নামবে আধার
ঝর্ণা তখন 'আকাশ' কেবল তোকেই খোঁজে
জমিয়ে রাখে যত্ন করে টুকরো নালিশ
তোর মতো বল কে আর এমন কষ্ট বোঝে?

 

 

 

 

 

 

সাইদুজ্জামানের কবিতাবলী 

 

চিঠি



লেখার ছিল তোমায়, প্রিয়সখি চিঠি এক, টরন্টো শহরে
যেখানে আকাশ থেকে, অন্টারিও লেকে রাতে , ঝরে পড়ে জল
যেন হামানদিস্তায় চূর্ণ, কঠিন বরফ কুচি , আগুন অন্তরে
পৃথিবীর সব আছে, এখন অপেক্ষমান, ধ্বংসমুখী ঢল;
শুধু শেষ নেই মিথ্যে, সত্য গেছে মরে কবে, কূলে বসে একা
মালবিকা তোমাকে-ই, আমার প্রেমের এই, শেষ চিঠি লেখা।

হাসিতে পারার শক্তি, তাও আছে দেখিবার - নিজ বিপদ্দশা
বাসিতে পারার ভালো, অলোক-সুন্দর এই, বালক পৃথিবী
শিউলি বকুল আছে, সেই আগের মতোই, তার জীবদ্দশা
গোলাপে সৌরভ আছে, কোমলে কন্টকে আছে, সুখেদুখে দিব্যি;
লিখেছি তোমায় এই, ঝড় ঝাপটার রাতেই, তুমি মণি পান্না
মালবিকা মনে রেখো, এখানে ঝরেছে বৃষ্টি, অবিকল কান্না।

যদি কোনো পৃথিবীর, যদি কোনো আকাশের, মেঘে এসে ভেসে
জ্বলিবার সাধ হয়, তারার মতন এক, বিশিষ্ট নগরে
এসো তুমি সাঙ্গ কোরে, জীবনের সব দায়, এসো তুমি শেষে
কলিকাতা থেকে, আট হাজার মাইল, দূরের শহরে;
যদি থাকি ততদিন, যদি রাখি এই কথা, যদি থাকে লেখা
রোদের মতন চাই, মাখামাখি করিবার, এক মালবিকা।

টরন্টো, ২রা নভেম্বর, ২০২২

***
চতুর্দশপদী কবিতা
বড়ো প্রেম

যেন হাওয়া খেতে গেছি, ভালো লাগে যেতে খুব দূরে,
যেন খুব বড়ো প্রেম - উড়োজাহাজের মতো উড়ে
গেছি কাছে নয় দূরে, আপাদমস্তক দেখতে তাকে
ভালোবাসা কারে কয়, কোথায় নিবাস কোথা থাকে।
কোথা রাখে তার মধু সে মৌচাক খুঁজে ফিরে আমি
ক্লান্ত খুব শ্রান্ত খুব সেকথা জানেন অন্তর্যামী।
সখি শান্তি কারে কয় বলো সে কি ডাহা মিথ্যে নয়?
যুদ্ধ ছিল যুদ্ধ আছে আর শান্তি শান্তি অর্থ হয়
রাজনীতির অপচয় - মিছেই বৈঠক রুদ্ধ ঘরে
সেই কথা আজ নয় সেই কথা হোক কিছু পরে।
আজ শুধু ভেবে দেখি তোমাকে আমি কীভাবে পাই
ভালোবাসা ছাড়া কোনো পদ্ধতি আর আমার নাই ।
তোমার আবক্ষ ছবি রাখিবার আছে এক ফ্রেম
ছোট এই বুকে ভরা দূরে ঠেলিবার বড়ো প্রেম।

২৪ শে নভেম্বর, ২০২২
***
অভিমান

বিপার ছিলো অনেক কিছু তাকেই শুধু দেবার
পাহাড় নদী নীল আকাশ মনটা ধূধূ সে-বার।
বোঝেনা কেউ খোঁজে না কেউ হৃদয় খাঁখাঁ তাহার,
বেশতো আছে সুখের নাচে কাহার কাছে যাবার ?
যাবে না আর পাবে না কেউ তাহার দেখা এবার,
পত্র লেখা গান শোনানো দেবার তাকে - নেবার।
হাত বাড়ানো সহজ ছিল মন বাড়ানো শক্ত
সখা তোমার বুকেই ছিলো প্রেম গড়ানো রক্ত।

টরন্টো, ১৩ই নভেম্বর, ২০২২
***
প্রথম প্রেম

তোমাকে আজ পড়ছে মনে খুব,
ইচ্ছে করে স্মৃতিতে দিতে ডুব।
প্রথম দেখা প্রথম লেখা চিঠি,
হাতটি ধরা - তারার মিটিমিটি।
করপৃষ্ঠে প্রথম চুমু দেয়া,
প্রেমের নদী পারাপারের খেয়া ।
তোমাকে আজ পড়ছে মনে, লেনা
হয়েছে শোধ সব পাওনা দেনা।
হারিয়ে ফেলা দিনগুলোর স্মৃতি,
রেখেছিলাম যত্ন করে প্রীতি।
থাকলো না তা, এইতো ঠিক রীতি,
বিরহ থাকা প্রেমের এক নীতি।

টরন্টো, ৮ই নভেম্বর, ২০২২


 

 

 

 

 

 

জয়া চক্রবর্তী সোমার একগুচ্ছ কবিতা 

 

ভালো বাসা

ভালো বাসা খুঁজে ফিরছিল পাখি
ডানা জুড়ে সংশয়
বুকে জমে ওঠে কালশিটে মেঘ
চোখে জমে ওঠে ভয়
খড় কুটো বয়ে উড়ে উড়ে ফেরা
আশিয়ানা অবশেষে
খুঁজে পেল পাখি ভালো বাসা তার
আকাশকে ভালোবেসে৷
***
হলুদ খাম

ফিরিয়ে দিলে ফিরেই যাব
ডাক পাঠালে ঠিকানা ভুল
হলুদ খামের বরাত খারাপ
আমার যে নেই ডাকমাশুল।
খুচরো কিছু অভিমান আর
মনখারাপের অল্প দাম
তাই খুলি না চিঠির পাতা
মন্দ বরাত হলুদ খাম।
পিওন ফিরুক চিঠির বোঝা
আসলে তার রিক্ত হাত
মনকেমনের গল্পগুলো
এবার তবে নিপাত যাক।
***
ভালোবাসা

আঘাতটা যার পরিচিত উপহার
যন্ত্রণা যার খুব পরিচিত নাম
ভালোবাসা নামে ডাকে তাকে কিছু লোকে
মেঘলা চোখেই লেখা তার পরিণাম।
হৃদয় ছোঁয়ার অধিকার দেব কাকে?
হৃদয় শুধুই মাংসপিন্ড বুঝি?
ধমনী শিরায় জড়াজড়ি জটিলতা
হৃদয় ছোঁয়ার মানুষ কোথায় খুঁজি?
কালশিটে দাগ হৃদয় খুঁড়লে পাবে
রক্ত জমাট নীল নীল অভিমান,
তারাই তো শুধু যন্ত্রণা দিতে পারে
যাদের জন্য ভালোবাসা অফুরান।



 

 

 


 

 

 

 

 

তনুশ্রী সামন্তর একগুচ্ছ কবিতা   

চতুর্দশপদী কবিতা
ইচ্ছে দেশে 

 

আমিতো প্রতিটি দিনই হৈমন্তী সকালে
অজস্র অজস্র চুমু রাখি বারে বারে,
শিশিরে সজ্জিত ঘাসে হলুদ পুরুলে
আধাডোবা শালুকের রসালো শরীরে।
হলদেগুঁড়ি পাখিদের ডানা ও পালকে
নীলাকাশে সোনারোদে চাঁদনীর গায়ে
আঁকি ভালোবাসা আমি আবেগী তুলিতে
অকারণে মনে মনে শত চুমু দিয়ে।

আজ যদি তোমাকেই ভালোবেসে ফেলি
ভালোবেসে ফেলি আমি পাগলের মতো
তবে কেন দোষ হয় কি করে যে বলি!
বুঝি না এখনও আমি এমন নিয়ম
পৃথিবীর ব্যাকরণ ছুঁড়ে নিরুদ্দেশে
শুধু যেতে ইচ্ছে করে পুণ্য ইচ্ছে দেশে।

***

মন খারাপ

 

একটি বিকেল ডাকলে তোমায়
আমার কাছে আসবে কি?
ফড়িংগুলো যখন করে
জলের সাথে খুনসুটি!
ঘাসের ওপর হলুদ ফুলে
বুলবুলিটা রোজ নাচে,
চৌকোনা এই সবুজ মাঠে
সূয্যি কিছু রোদ রাখে।
আসতে পারো সময় পেলে
বসতে পারো এই ঘাসে,
খেলতে পারো বউবসন্ত
উঠতে পারো জামগাছে।
জানি তোমার নেইকো সময়
সকাল বেলা টিউশেনি,
স্কুলটা ছুটির পরেই আবার
আসবে গানের দি-মনি।
সন্ধ্যাবেলা আবার পড়া
হোমটাস্কেরাও কাজ সারা,
সময় পেলে একটু তাও
ম্যাজিক ভুতুর মস্করা।
আমি এখন একলা যে তাই
বিকেল বেলার বিলের মাঠ,
তোমরা আমায় ভুলেই গেছো
আমার ভীষণ মনখারাপ।

***

নিজের মতো

 

বনের হরিণ বনেই থাকে
গাছের পাখি গাছে,
মানুষ তাদের কেন মাগো
খাঁচায় ধরে রাখে?
ময়না টিয়া বুলবুলিদের
তোমরা ধরে রাখো,
ভেবে দেখো তাদের কিগো
কষ্ট কি হয় নাকো?
সেবার যখন পূজার ছুটি
কলিকাতায় গিয়ে,
চিড়িয়াখানায় বেড়িয়ে এলে
আমায় সাথে নিয়ে।
সেদিন থেকে স্বপ্নে মাগো
হরিণছানা ডাকে,
বলে খোকন দাও ছেড়ে দাও
খেলবো তোমার সাথে।
যাবো দূরে তেপান্তরে
কচি ঘাসের দেশে,
মিষ্টি নদীর জলটি খেয়ে
ছুটবো নেচে নেচে।
আমি বলি ছোট্ট আমি
চাবি তো নেই কাছে,
আমার কথা কেউ শোনেনা
বলবো বলো কাকে?
জেগেই হঠাৎ মনে পড়ে
মাগো তোমার বাণী,
সবার আশা পূরণ করেন
শুধু ভগবানই।
তাইতো আমি রোজ সকালে
জানাই মাগো তাকে
এ জগতে সবাই যেন
নিজের মতো বাঁচে।