শেষ ইচ্ছে
- অরিত্রা মান্না
আমি চাইনি আমার মৃত্যুর খবর শুনে
ছুটে আসুক কিছু অলীক আত্মীয় ,
চেয়েছি ছুটে আসুক কিছু অবলা জীব
লন্ডভন্ড করে দিক আমার নিথর দেহ।
আমি চাইনি মৃত্যুর পর আমার জায়গা হোক
কোনো অজানা স্বর্গে,
চেয়েছি মুক্তি পাক আমার আত্মা
এই জগৎ সংসারে।
না ইচ্ছে হয় না আমার মৃত্যু কে ঘিরে
হোক কোনো বড়ো সমাহার,
বরং একটা সীমাহীন লেখা হোক যা বলবে
আমার জীবনযুদ্ধের গল্প।
যা আসলেই অনেক দামি আমার মৃত্যুর থেকে।।
বিশ্লেষণ
--- ছন্নছাড়া
( তাপস দাস )
তুমি পূর্ণিমার চাঁদ দেখে আমাকে কল্পনা করতে-
উড়ে যাওয়া বর্ষার কালো মেঘে আমায় চিঠি পাঠাতে-
আসলে আমাকে কল্পনাতেই তুমি ভালোবাসতে ।
কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়াতে তোমার ছিলো অজানা ভয়,
তাইতো ঝলসানো প্রখর সূর্যের আলোয়, আমাকে ভাবতে তোমার কষ্ট হতো-
অথচ একমাত্র ওই সূর্য ই বাস্তব ।
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলতে তোমার ছিলো দ্বিধা ।
নাহলে কেনই বা মেঘের ভেলায় ভাসিয়ে দিতে তোমার ভালোবাসা?
হয়তো, এইজন্যই শুধু আমরা ভালোবেসেই নিঃশেষ হয়ে গেলাম।
অধরাই রইলো,দুজনের দুইজনকে একান্ত ভাবে কাছে পাওয়া ।।
তুমি আমার নদী হবে ?
ছন্দা চৌধুরী
তুমি আমার নদী হবে ?
আমার নদী ?
রোজ সকালে বসবো আমি
তোমায় ছুঁয়ে ।
মনের যতো কষ্ট ব্যথা , লুকিয়ে
থাকা সকল কথা ,
তোমার জলে ঢেলে দেবো
একে একে।
সেই সে কবে,
ছোট্ট বেলায় খেলার ছলে,
কাগজ দিয়ে নৌকা গড়ে,
তোমার ঢেউয়ে ভাসিয়ে দিয়ে
মনের সুখে নিজের মনেই
যেতাম ডুবে।
হওনা তুমি আমার নদী ।
জোয়ার বেলায় ভাসিয়ে নিও
আমার ভিতর , আমার বাহির ।
সাথে দেবো জমে থাকা অশ্রুকণা ,
আজলা ভরে।
ভাটির বেলায় বসবো আমি
পা ডুবিয়ে , তোমার জলের
ঠিক কিনারে ।
সারাদিনের সব কথা, যা জমে আছে
বুকের তলে খুব নীরবে ,
তোমার কানে ফিসফিসিয়ে
সবই কবো।
ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ের ভাঁজে ,
সুখের কথা, মনের ব্যথা ,
সাজিয়ে দেবো, থরে থরে।
লুকিয়ে তুমি রেখো সেসব,
আড়াল করে খুব যতনে।
আমার নদী হয়েই দেখো,
তোমার জোয়ার , তোমার ভাটা,
তোমার উথাল তোমার পাথাল
সবখানেতেই আমার ছোঁয়া,
আমার ভালবাসায় আমি
দু কুল তোমার ভাসিয়ে নেবো।
হবে তুমি আমার নদী?
নারী.........
সামিদা খাতুন
০৮/০৩/২০২২
নারী নয়তো ভোগের পণ্য
বাসায় বসে কেবলই যোগাবে অন্ন
চার দেওয়ালের দাসত্বকে করবে গলার হার।
নারী কেবল হারতে শেখেনি
জিততে শিখেছে
জয়ী হয়েও দেখিয়েছে বারবার।
নারী হয়তো শিমুল তুলো, কাঁদামাটি
জল দিলে যায় গলে।
তেমনি নারী জলন্ত কাঠ, সুউচ্চ পাহাড়
ভেঙে পড়ে না বানের ঢলে।
নারী বুঝি এমনই সহজ
গ্রাম্য মেয়ের খোলা চিঠি
কাব্যে উপমায় সাজান কবি।
নারী আবার বেজায় জটিল
বোঝা বড়ো দায় এ যেন
ভিঞ্চির আঁকা মোনালিসার ছবি।
মৃত্যু সম ব্যথা যে তার অল্পেও সে কাঁদে
এমনও বুক মায়ায় ভরা বাধঁনেও সে বাঁধে।
নারী যেমন নির্যাতিত তেমনি করে শাসন।
বিশ্বকে জয় করে নারী মায়ের সিংহাসন।
নারী, তোমার জন্য
✍ সাইদুজ্জামান
ফুলের মতো, নদীর মতো, পাখির মতো নারী,
আকাশ যখন পরায় তাকে প্রেমের নীল শাড়ি।
বাগান তাকে সাজায় রঙে, ঠোঁট রাঙানো পানসুপারি।
সোনার হরিণ চাইনা কিছু - চাই শুধু ভালোবাসার এক নারী।
হাত দুটো তার, চোখ দুটো তার, এবং যা কিছু তার দুটো,
সাজাবো আমি বাসন্তী ফুলে আমার এক মুঠো।
গাছ যেভাবে সবুজ পাতায় সাজায় লাল ডালিমের জোড়া,
দুটো বেতফল আমিও সাজাবো চুম্বনে, রক্তে দুরন্ত ঘোড়া।
৮ই মার্চ, ২০২২
হলুদ অরন্যের ইতিকথা,,,,,,,,
ফেরদৌসী বেগম
রোদেলা এ শহর জানে না
ধ্বসে পড়া শীর্ণ এ বাড়ীটার ইটের ফাঁকে
গজে উঠা পাকুড় গাছটির পাশে
অজানা দুঃখ বাসা বেঁধেছে।
একটু একটু করে বেড়ে উঠা
দুঃখ চারাটির মাথাটা বড় বিল্ডিং ছেড়ে গেছে।
রাত্রি দুটো
বাতাসে বন পলাশের শোক
রাত জাগা পাখিদের ডাক শোনা যায়
গত রাতেও বাঁদুড়ের কান্না শোনা গেছে
চৌরাস্তার মোড়ে।
এ শহর এখন কান্নার শহর
সন্ধ্যা হলেই জড়িয়ে নেয় কাশ্মিরি শাল
পীচঢালা পথে কান পাতলে
শোনা যায় বজ্র নিনাদের হাজারো শব্দ।
এ শহরের মোড়ে মোড়ে জ্বলে উঠা
অভিমানী ল্যাম্প পোস্টগুলো
লোডশেডিং এ মুখ ঢেকেছে,
দুঃখ চারাগুলো ক্রমশ বড় হয়
হয়ে যায় হলুদ অরণ্য।
এ শহরে দুঃখরা বাসা বেঁধেছে
চলো ছেড়ে চলে যায় অন্য শহরে
অন্যত্র অন্য কোনখানে
নদীরাও জানুক তার শহরে দুঃখ বাসা বেঁধেছে
জলও জানুক হলুদ অরন্যের ইতিকথা।
রাজশাহী। ০৭.০২.২০২২
সমাধান সমতায়
ডাঃ পরমেশ ঘোষ
বিশ্ব নারী দিবসে বিশ্বের প্রতিটি দেশের সরকার প্রতিটি ধর্ম্মের গুরুরা
সাবধান।
ঘুচবে নারী ও পুরুষের দায়িত্ব, অধিকার, শাসন, শাস্তি, সুবিধার সকল
ব্যবধান।
শরীর আলাদা নারী ও পুরুষের, পরিপূরক পরস্পরের; এটা প্রকৃতির দান,
বিধান।
এই সুযোগে নারী-নির্য্যাতন, আদর বেড়াল পোষার মতন, কারণ পুরুষই
শক্তিমান।
পুরুষ ও নারীর শিক্ষার প্রয়োজন, উভয়েই করুক অর্থোপার্জন, হউক সমতায়
সমাধান।
কোনো মানুষ না ক্রীতদাস; বর্জ্জনীয় হোক হাস্য পরিহাস; চলুক
স্বামী-স্ত্রীর দ্বৈত অভিযান।
আইনতঃ দণ্ডনীয় হোক্ খুন-জখম-অত্যাচার, যেই হোক্ সে অপরাধী – ঘরের
পার্টনার,
অথবা ট্রেণিং-পাওয়া গুণ্ডা খুনী, সতত সুযোগ-সন্ধানী নির্ম্মম
নির্ভয়াঘাতী নির্দয় ড্রাইভার।
কোনো কোনো দেশের সংসারে, খুনীরা দেয় ক্ষতির মূল্য ধ’রে, আইনী শাস্তি
করে পরিহার।
নিহত পুরুষের মূল্য যদি হয় পাঁচ হাজার, তবে নির্য্যাতনে নিহত নারীর
মূল্য পাঁচশো দিনার।
এখনও তিন-তালাকের জোরে, পুরুষেরা সহজে পেতে পারে স্ত্রীর ভরণপোষণ থেকে
পরিত্রাণ।
সে পরিত্যক্তা স্ত্রীর, হয়তো অবস্থা ভিখারীর; না আছে কোনো আশ্রয়, না
খাদ্য-পরিধান সংস্থান।
এখনও কোনো স্বামী. অনায়াসে হয় বিপথগামী; নিজ স্ত্রীকে ঘরে রাখি, পরকীয়া
প্রেমে দিনযাপন।
আবার কখনো ভীরু যুধিষ্ঠির, খেয়াল রাখেনা নিজ দ্রৌপদীর, পাশার চালে
সম্ভোগ ক’রে দুর্যোধন।
আজকাল বহু শিক্ষিতা নারীর অসহ্য লাগে তার স্বামীর শরীর; মাতে বহু
পুরুষ-সঙ্গে যৌন খেলায়।
গর্ভবতী হয় যদি কোনো নারী; কার সন্তান চিন্তা না ক’রি শিখণ্ডী বোকা
স্বামী সামলায় যতো দায়।
‘পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্য্যা’ – এ শ্লোকে নেই আর ভরসা; থাক নারী একা,
পুরুষও একা- এই পূর্ব্বাভাস:
যৌবনে নির্বীজন তরুণ-তরুণীদের; হাসপাতালে সঞ্চয় শুক্রানু-ডিমের;
নির্বিবাহ প্রেমের নির্ভয় আশ্বাস।
বিয়ের আর নেই কোনো দরকার, বরফে বাঁচাও শুক্রানু-ডিমের ভাণ্ডার; আইভিএফে
হবে সন্তান বিকাশ।
অবাধ প্রেমের অনায়াস দিগ্বিজয়, তবু অবাঞ্ছিত সন্তানের জন্ম নয়; স্ত্রী
নহে ক্রীতদাসী, স্বামী ক্রীতদাস।।
সাতরঙ স্বপ্নে ধোয়া
- লীমা জামান শিল্পী
সুনীল শাড়ী পরো কপালে বাঁকা টিপ
যুথীমালা কন্ঠে দিয়ে চোখ সাজাও নীল কাজলে
ঘনঘাসে শুয়ে চোখ মেলো আকাশনীলে
মেঘে ভেসে ভেসে ভয়ংকর মোহময়তায় ভীষন আনন্দে
গেয়ে ওঠো প্রিয় কোন গান কিম্বা মোমের আলোয় কবিতা পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পরো।
পবিত্র ঘুম। স্বপ্ন। স্বপ্নে সুখ আনন্দে জীবনের সিঁড়ি পেরোতে পেরোতে
সকাল।
বারবার প্রচন্ড হাসিতে পাশে শুয়ে থাকা তোমার নিজস্ব পুরুষটির ঘুম
ভাঙিয়েও যদি রাত্রি কাটে ক্ষতি নেই
তবু তুমি তার আগ্রাসী আলিঙ্গনে
অমন করে কেঁদোনা মেয়ে!
যে হৃদয় চেনেনা সে মূর্খ। তাকে ঘৃনা ক'রোনা অভিশাপ দিয়োনা। মিথ্যে
অভিমান বেমানান। তুমি নারী।
তোমার মিষ্টি চোখে জল দেখতে ভালোবাসে পুরুষ তাইতো তোমাকে খেলনা পুতুল
বানিয়ে ইচ্ছেমত
চাবী দেয় তোমাকে কাঁদায়।
তুমি কেঁদোনা একটুও কেঁদোনা তুমি!
তোমার মেধা ও মানবতার নিঁখুত প্রয়োগে
ভেঙ্গে দাও খেলাঘর।
তুমি অন্তহীন একা গড়ে তোলো
অন্তত একজন পুরুষকে মানব রূপে।
অসীম আগ্রহে ধৈর্যে বোঝাও জীবনের মানে
বোঝাও প্রখর উত্তাপে খন্ডিত হৃদয়ভূমে
যে অঝোর বৃ্ষ্টিধারা, সে নারী। তুমি।
পুরুষকে ভালোবাসায় শিক্ষিত করে তোলো।
অবহেলার বৃন্তে ফোঁটাও সন্মান
ফোঁটাও তোমার সাতরঙ স্বপ্নে ধোয়া
চমৎকার সেই ফুল!
শুধু তোমার জন্য
ম্যাক আজাদ
এ মাসে বোনাস পেলে,
কিনে দিবো রেশমি চুড়ি আর তাঁতের শাড়ী,
সাথে কানের দুল নাকের নোলক কপালের টিপ।
এ মাসে বোনাস পেলে,
ঘুরে আসবো সেই অচেনা জায়গায়
যেখানে অচেনা পাহাড় অচেনা যত পাখী।
এ মাসে বোনাস পেলে,
তোমাকে নিয়ে যাবো সমুদ্রের শেষ প্রান্তে
তোমার কোলে মাথা রেখে শুনবো সমুদ্রের গর্জন।
এ মাসে বোনাস পেলে,
তিন দিনের জাহাজ ভ্রমনে যাবো সুন্দরবন
বনের শেষ সীমানায় যেখানে হাজারো হরিনের বিচরন।
এ মাসে বোনাস পেলে,
কিনে আনবো বাজারের সবচেয়ে বড় মাছ
সাথে আমাদের ছবি আঁকা মগের জন্য কলম্বিয়ান কফি।
এ মাসে বোনাস পেলে,
নিয়ে যাবো একদিন পাঁচতারা রেস্তোরায়
মোমবাতির আলোয় তোমাকে নিয়ে হবে নৈশ ভোজ।
এ মাসে বোনাস পেলে,
স্বপ্নের নায়াগ্রা ফলস দেখা হবেনা জানি
কিন্তু মাধবকুণ্ড কিংবা হামহাম নিয়ে যাবোই যাবো।
এ মাসে বোনাস পেলে,
প্রাণপণ চেষ্টা করবো তোমার ইচ্ছেগুলো মেটাতে
যা কিছু চাইবে সব কিছু এনে দিবো শুধু তোমার জন্য।
এ মাসে বোনাস পেলে,
জীবনের বাকী সবটুকু সময় শুধু তোমার জন্য
এঁকে দিবো শেষ বিকেলের গোধূলি আলোয় রংধনু দিগন্ত।
ফেব্রয়ারী ২৫,২০২২