টরন্টো, জানুয়ারি ২১, ২০২২, নভো সংখ্যা ২৮  
              
হোমপেজ সম্পাদকীয় পাঠক পরিষদের কথা কবিতা ছোট গল্প ধারাবাহিক সাহিত্য সংবাদ ভ্রমণ কাহিনি বিশেষ নিবন্ধ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল আবৃত্তি / কণ্ঠসঙ্গীত পাঠাগার আর্কাইভ লেখক পরিচিতি যোগাযোগ

কার্তিকের কুয়াশা

 

কবিতার পাতা

 

 

 

 

 

 

নিভৃত নীরবে

 

মধুবন্তী আইচ

 

মনের মণিকোঠায় গহীন তোরঙ্গের গোপন কোণে,
সাগরপাড়ের মুক্তো-গাঁথা যে বাক্স রাখা,
তার অন্তঃস্থলে সাদা মলমলের ভাঁজে ভাঁজে,
কোনোও এক বাউল প্রাণের গানের সুর আর তুলির রেখা,
স্মৃতির যতনের মোড়কে মুড়ে রয়েছে আজও রাখা।
শীতের অলস দুপুরে পেলব রোদ্দুরে পা ছড়িয়ে বসে,
কিংবা চৈত্রের কালবোশেখীতে যখন টুকরো টুকরো মন-খারাপের ঘূর্ণি ওড়ে মনের উঠোনে,
অথবা বর্ষার রিনরিনে বৃষ্টি যখন চারপাশ ঢেকে দেয় এক অপার্থিব ধোঁয়াশায়...
হয়তো তখন রূপকথার সেই হাতবাক্স খুলে,
ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি বিস্মৃত কোনো বাসন্তী-সন্ধ্যায় তারাদের কপোল চুঁইয়ে খসে পড়া,
স্মৃতির অতলে শ্যাওলা-ধরা, শুক্তি-হৃদয়ের গভীরে জমাট বাঁধা কিছু পল অনুপল....

 

 

 

 

 

চুপকথা

-অরুণোদয় কুন্ডু

জীবন বলছে চলো যাই
ফেরার সময় আর নাই
পড়ে থাকা স্মৃতির স্তূপ
ধূলোয় রঙিন মুখ ঢেকে
সভ্যতার হিসেবী রা চুপ।

বিকেলে নিভতে থাকা রোদ্দুর গুলো
গিটারের ছেঁড়া তারে জমা ধুলো
মুখ লুকিয়ে চিলেকোঠায়,
ঘুড়ি কেটেছে ছারপোকায়,
স্বপ্নগুলো খাতার ভাঁজে
শুকনো গোলাপ হয়ে চুপ।

ভোরে শিশির ভেজা ঘাসের ছোঁয়া
জমাটি আড্ডা, চায়ের ধোঁয়া
চাঁদা তুলে মুড়ির ফিস্ট,
যত ভেঙে যাওয়া স্বপ্নের লিস্ট,
আজ ব্যাংক ব্যালেন্স আর স্ট্যাটাসের খোঁজে,
রঙ পেন্সিল হারিয়ে ফেলে চুপ।

 

 

 

 

প্রিয় শহরে এসো তবে,,,,,,,,,,,

ফেরদৌসী বেগম

রাজশাহী/ ১৯.০১.২০২২

 

যদি মন চায় এসো তবে
প্রিয় এ শহরে
ট্রামে বাসে যেথা যা মন চাই
চলে এসো প্রিয় শহরে
এ শহরের বাতাস নির্মল
আকাশটা সীমাহীন নীল
নীলে নীলে মাখামাখি লাল ঘুড়ি উড়ে
যদি চাও এরই মাঝে উড়বে তোমার সাদা ঘুড়ি।

আামার শহর প্রিয় শহর সবুজে ঢাকা
শ্যামল বিথির ছায়া
তারই মাঝে - নন্দিনী রাজপথ চলে আঁকাবাকা
পথের মাঝে অলকানন্দা, চামেলিরা হাসে
কৃষ্ণচূড়ার লাল রংয়ে আলপনা আঁকে
ঝিরিঝিরি হাওয়া বয় সারাদিনময়
হেঁটে যেতে মন চায় যত দূর আঁখি চলে যায়
মোড়ে মোড়ে ঐতিহ্য ম্যুরাল- ইতিহাস কথা বলে
রাজারা একদা হেথায় ছিলো হয়তো
শহর সেটা জানে
এ শহরের ল্যাম্পপোস্টও প্রিয়দর্শিনী
নিকানো রাতের তিলোত্তমা রমণী।

প্রিয় শহর প্রিয় নদী গাঙচিল উড়ে
একধারে বালুচর আরেকধারে বাঁধ
এরই মাঝে মাঝি করে নদী পারাপার
কাশফুল ছেয়ে থাকে নদীর চারপাশ
সাজানো বাঁধের পাড়েই বসো- যত মন চায়
মঞ্চের সুর ধ্বনি কানে ভেসে আসে
এরই মাঝে টুস করে রাত্রি নেমে আসে
রূপালি চাঁদ রূপালি নদী রূপালি বালির ঘাট
নদীর জলে বটের গুড়ি পাতা ঝকঝক
আলো ছায়া মৃদু হাওয়া উদাস উদাস রয়
এক নিমিষেই প্রহরের পর প্রহর কেটে যায়।

আমার শহর প্রিয় শহর
থেকে যেতে মন চায়
এ শহরের আলো বাতাসে মায়া ছড়ানো রয়
কোলাহল ছাড়া শান্ত শহর শান্তিতে বসবাস
নাই তেমন জৌলুশতা বিলাসী ভবন
তবু যেনো মন কাড়ে নিরাভরণ
আমার শহর শান্তির শহর শান্তির বার্তা বয়
ঘুঘু ডাকে কোকিল ডাকে কখনও একা নয়
এসো যদি মন চায় কখনও সাধ জাগে
এ শহরের ধূলোও জানবে
তুমি এসেছিলে।


 

 

 

 

কথা

সামিদা খাতুন

 

কথায় যেমন ব্যথা পায় মন কথাতেই জুড়ায় প্রাণ
কথাতেই সাজাই কবিতা যেমন কথাতেই বাঁধি গান।
কথাতেই মানুষ হাসে যেমন কথার কারণেই কাঁদে
কথার জন্যে ঘর ভাঙ্গে আবার কথাতেই ঘর বাঁধে।
কথায় যেমন হয়'রে মরণ কথাতেই বাঁচে জীবন
কথাতেই মানুষ পর আবার কথাতেই হয় আপন।
কথার কারণে সমস্যা যেমন কথাতেই সমাধান
কথার পৃষ্টে কথা ছুড়ে মানুষ দেয় তার প্রতিদান।
কথার জাল বুনে কেউ কেউ পাতছে বিশাল ফাঁদ
সেই ফাঁদে পড়ে আবার কারো জীবন বরবাদ।
কথায় চলে রাজ্য যেমন তেমনই চলে প্রজা
সত্য কথায় সাধুবাদ যেমন মিথ্যা কথায় সাজা।
কথার পিছু ছুটছে জগৎ দেখ কথার কত নাম
মিষ্টি কথা, তিতা কথা যত কথা ততোই বুঝি দাম
ভালো কথা মন্দ কথা দেখ কথার কত রূপ
স্বার্থ রক্ষার্থে সবাই কথা কয় স্বার্থাঘাতে সবাই চুপ।

 

 

 

 

 

আমার সারাবেলা

✍️নুসরাত জাহান রুবাইয়া

 

তোমার ভালোবাসার আচ্ছাদনে
আমার সারাবেলা।
শুরু হয় সুপ্রভাত দিয়ে আর
শেষ হয় শুভরাত্রি জানিয়ে।
এর-ই মাঝে কত-শত স্বপ্নের ছুটোছুটি
কত গল্পের মুর্ছনা,
কত-ই না সুখের আলিঙ্গন!

তোমার ভালোবাসার প্রতিক্ষায়
আমার সারাবেলা।
কখনঅও মুঠোফোনে একটি ক্ষুদে বার্তার অপেক্ষায়,
কখনও দিনের শেষে ক্লান্ত বেশে
ঘরে ফেরার পর জিজ্ঞেস করা
কখন ফিরলে?
কখনও-বা গভীর রাতে নিস্তব্ধ থেকে
একটি ফোন কলের অপেক্ষায়!

তোমার ভালোবাসার প্রতিচ্ছবিতে
আমার সারাবেলা।
কখনও লেপটপে তোমার পানে অপলক চেয়ে থাকা,
কখনও-বা শপিংমলে জেন্টস গ্যালারিতে
চোখ আটকে পড়া,
কোন্ টিশার্টটা তোমায় মানাবে ভালো
কোন্ পাঞ্জাবিটা তোমায় লাগবে শুভ্র
ইত্যাদি... ইত্যাদি....!

তোমার ভালোবাসার স্পর্শে
আমার সারাবেলা।
কখনও চায়ের কাপে এক চুমুকে
কখনও বা জামাকাপড় স্পর্শ করে
তোমার শরীরের গন্ধ নিয়ে!!!

 

 

 

 

মানসী কিনবে গো.....

 

নীলাঞ্জনা সরকার

 

লাল তরল, সবাই বলে রক্তস্রাব - তুমি বলো নারীত্ব।
নারী কিসের, ছোট মেয়ে তোমার!
যখন একলা ঘরে বসে লুকাই,
যখন বারবার নিজেকে পিছনে ফিরে দেখি..
তুমি এসে বলো চুপিসারে, সাবধানে থাকিস মা!
সাবধানতা কিসের... সবাই তো আপনার চারিপাশে।
যখন দূরে রক্তমাংসের দালাল, ক্ষুধার্ত চোখের চাহনি
তখন তোমার আঁচল আমার বাসা -
তোমার আদর আমার সকল আশা।
রাতে শুনে তোমার আর্তনাদ নিজেকে করি অপমান,
তখন আত্মশুদ্ধির স্নানে ব্যস্ত তুমি!
আঁড়ালে, নিভৃতে, ভয়ভীতিতে জর্জরিত আমি
তুমি এসে বলো চুপিসারে পালিয়ে যা মা।
পালাবো কেন... তোমার ছত্রছায়ায় যে আমি!
যখন ধূপের গন্ধে ম ম বাতাস,
যখন বাইজি পাড়ার ব্যালকনিতে আমি,
তখন মদের গন্ধে মাতাল আকাশ।
তুমি তখন শান্ত, স্নিগ্ধ, রজনীগন্ধায় আবৃত।
চুপিসারে বললে এসে বাঁচবি না মা।
অনড় আমি বাঁচবো বলে, তোমার কাছে থাকবো বলে
যখন পান রাঙা ঠোঁটে বিষ চুম্বন, রক্তে দলিত আমি!
তখন শব কান্নায় ভিজে কামনার শিকার আমি।
তোমার দহনে আমার যোনি ছিড়ছে জানি।
দগ্ধ, জ্বলন্ত, রক্তস্নাত আমি।
তোমার আবেগে আবেশে জন্ম নিলেও-
সমাজের মানসী আমি, কে কিনলে গো আমায়!

 

 

 

 

কেউ জানে না

 

সাইদুজ্জামান

 

কেউ জানে না আগেভাগে, সেই ক্ষমতা নেই হাতে,
ভাগ্য কাকে জড়িয়ে যাবে অনাবশ্যক কার সাথে।
কেইবা হবে মিত্র, কেইবা হবে শত্রু, আর কেইবা শুধু চেনা
জানা কি যায় আগের থেকে - কখনোই না, কক্ষনো না।
সুখ দেবে কেউ, কেউ আবার বিশ্বাসঘাতকতা, তাইতো নিয়ম,
কেড়ে নেবে কেউ, কেউ সর্বস্ব দেবে, শীতে দেবে হৃদয়ের ওম।
দুঃসময়ে পাশে এসে দাঁড়াবে না, কৃপনের হাত ছোঁবে না কাঁধ,
আবার কেউ কেউ ভাগ করে খাবে ভাত, মাথার ওপর দেবে ছাদ।
কারো কারো সাথে খুব সহজেই সহজ হওয়া যায়, নিমেষেই আপন,
সম্বোধনে তুমি অথবা তুই বলতেও বাধে এরকমতো আছে কতজন!
কাউকে ভালো লাগে দিতে সব - বিশেষত মন ও হৃদয়,
আবার কারো মুখের উপর দরজা বন্ধ করেও দিতে হয়।
কাউকে তো বিশ্বাস করি যেমন করি নিজেকেই - আমাকে,
আবার কাউকে শুধুই সহ্য করা - শুধুই মেনে নেওয়া বিপাকে।
কারো কারো সাথে দুঃসময়েও যেখানে খুশি যাওয়া যায়,
আবার কারো কারো সাথে সুসময় কাটানোও দেখি দায়।
কেউ জানে না আগেভাগে, সে তথ্য নেই আমার কাছে
দিনের আলোয়, রাতের কালোয় আমার ভাগ্যে কী আছে।
কারো কাছে জীবন আনে দ্বিগ্বিজয়ের স্বর্ণপ্রভ সফলতা,
কারো আছে পাপে প্রায়শ্চিত্ত - বিষাদ পাচ্ছে অমরতা।
কারো আছে সারাজীবনই সৌভাগ্যের পরশমণি,
কারো আছে ভোগান্তি আর দুঃখ ব্যথার মস্ত খনি।
সত্যের জন্য সততই যুদ্ধ করা আছে কারো - যুদ্ধ চতুর্পাশে,
কেউ কেউ মিথ্যেয় জিতে গেছে চিরকাল নিশ্চিত অনায়াসে।
এভাবেই তো আমরা বাঁচি - এমনইতো জীবনযাপন এ-দুনিয়ায়,
ভালো আর মন্দ দুটোই আছে - বেঁচে থাকতে দুটোই লাগে হায়।
পাপে অজুহাত দিই অল্প বয়সের অনভিজ্ঞতা আর পরিস্থিতির চাপ,
হিসেব রাখি অন্যের যাবতীয় ভুল, শুধু নিজের ভ্রমে থাকছি নিরুত্তাপ।
যাকে বন্ধু বলি তাকেও দুঃখ দিতে চেষ্টা তো কম নয় সারাদিন,
পোড়ামাটি আবার পোড়াই, ভঙ্গুর ভাঙি, আঘাত করি ক্ষমাহীন।
চুপ করে থাকি যখন উচিত চিৎকার করা দেখে-শুনে বিশ্বরূপ,
চিৎকার করি যখন উচিত শান্ত থাকা, উচিত থাকা চুপ।
টরন্টো, জানুয়ারি ২০, ২০২২