টরন্টো, নভেম্বর ১০, ২০২১, নভো সংখ্যা ২৬  
              
হোমপেজ সম্পাদকীয় পাঠক পরিষদের কথা কবিতা ছোট গল্প ধারাবাহিক পাঠাগার আর্কাইভ লেখক পরিচিতি বিশেষ নিবন্ধ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল যোগাযোগ আবৃত্তি / কণ্ঠসঙ্গীত

কার্তিকের কুয়াশা

 

কবিতার পাতা

আমায় ক্ষমা করে দিও

ম্যাক আজাদ

 

সেদিন ছিল কালো অন্ধকার ভারী বর্ষার এক রাত
বিষন্ন আকাশ কেঁপে কেঁপে গর্জে উঠছিল ক্রমাগত
বিষাদময় দমকা হাওয়া উড়িয়ে নিচ্ছিল ধুলোবালি
ঝরে পরা গাছের পাতা থেকে শুরু করে সব কিছু।
নির্জন রাস্তায় একাকী দাঁড়িয়ে শীতে কাঁপানো
নিষ্পাপ আহত পাখীর মত এক অবুঝ প্রেমিক
কেবলি তার বুকফাটা বেদনার কান্নার অশ্রুধারা
গড়িয়ে মিশে যাচ্ছিল অঝরে ঝরা বৃষ্টির জলে।
প্রলয় কিংবা বজ্রপাতে মরে যাবার ভয় ছিল না তার
শীতে নিউমোনিয়া কিংবা জ্বরের ভয় ছিল না একটুও
ঘুর্নিঝড়ে উড়ে আসা ভারী কিছু কিংবা বৃক্ষের ডালে
আহত হবার ভয় ছিল না অবুঝ প্রেমিকের এক বিন্দু।
ছিল না ছিঁড়ে পড়া বৈদ্যুতিক তারে মরে যাবার ভয়
ছিল না অস্পস্ট আলোয় কোন গাড়ী চাপার ভয়।
ছিল শুধু একটি বারের জন্য দুচোখ ভরে দেখবার
ছিল শুধু ভুল ভাঙ্গানো-ভালোবাসার কথা বলবার।
সে ছিল এক অবুঝ প্রেমিক
ভালোবাসা ছাড়া সে আর কিছুই বুঝেনি সেই রাতে
একটি বার দেখা করতে চেয়েছিল তার অবুঝ হৃদয়
তাকে না দেখে ফিরবে না, এটাই ছিল তার প্রতিজ্ঞা।
রাত্রি প্রায় শেষ - কমে গিয়েছিল আকাশের গর্জন
বাতাসের হুঙ্কারও যেন অনেকটা নিস্তেজ ছিল প্রায়
ফজরের আযানে পাখী সহ জেগে উঠলো অনেকেই
ধীরে ধীরে শুরু হতে লাগলো স্বাভাবিক জনজীবন।
তখনোও বৃষ্টির জল জমে ছিল ফুটপাথ ঘেষে
ঝরা পাতা লতা গুল্ম ভাঙা ডাল পালা ছিল যত্রতত্র
মোড়ের চায়ের দোকানের টিনের চালাও গেছে উড়ে
মুখ থুবড়ে মরে পরে ছিল সঙ্গীচ্ছিন্ন একটি পায়রা।
পথচারীদের কোলাহলময় ছিল দুই রাস্তার মোড়
ক্রমশ জমে উঠেছিল একে একে পথচারীদের ভীড়
তারপর পুলিশ ভ্যান এম্বুলেন্স সাংবাদিকও হয়তো
দুপাশের বারান্দা-জানালা থেকে দেখছিল অনেকেই।
জমে থাকা ভীড়ের ঠিক উল্টো দিকের দোতলা বাড়ী
সেই বাড়ীর প্রায় সকলেই রাস্তার ভীড়ে জল্পনায় মত্ত
শুধু দোতলার বারান্দায় একাকী দাঁড়িয়ে এক কিশোরী
নির্বাক চেয়ে ছিল কৌতূহলী জনতার ভীড়ের পানে।
সেই সে কিশোরী যার অপেক্ষায় ছিল কেউ সারাটি রাত
ঘুর্নিঝড়ের মত তোলপাড় করছিল যার অপরাধী হৃদয়
ঝর্নার মত ঝড়ছিল জলধারা তার অভিমানী দুচোখ বেয়ে
যে চিৎকার করেও বলতে পারেনি, আমায় ক্ষমা করে দিও।
সে ছিল এক অবুঝ প্রেমিক
সারারাত অপেক্ষা করেও ভাঙাতে পারেনি প্রেমিকার অভিমান
পারেনি বোঝাতে তার হৃদয়ের গহীনের লুকানো সমস্ত কথা
মরে যাবার আগে সে হয়তো বলেছিল, আমায় ক্ষমা করে দিও।
টরন্টো
অক্টোবর ৩০, ২০২১

 

 

 

 

 

জুতো

 

রত্না চক্রবর্তী
৭.১১.২১

 

পায়ের তলায় রাখেন সদা
মাথায় উঠিনা কভু,
আমরা যমজ দাসানুদাস
জানান সেটা প্রভু।
কখন কখন বিদ্রোহী কোন
দেন প্রতিবাদ গুঁতো,
মুখের উপর সপাটে ঝাড়েন
মুখের মত জুতো।
জুতিয়ে লম্বা করেন কেহ
আমাদের কাজে লাগিয়ে,
ছিঁড়ে গেলেই ছুঁড়ে ফেলে দেন,
আমাদের দেন ভাগিয়ে।
ওদের মতেই আমাদের কাজ
আমরা কিছুই না,
তাইতো সদাই থাকি নিচে,
স্থান আমাদের পা।
কেউ বা করেন বুদ্ধি করে
জুতো মেরে গরু দান,
তখন আবার হয়তো মেলে
কিঞ্চিৎ সম্মান।
নবীন জুতোর ক্ষুদ্র ক্ষমতা
প্রতিবাদ করে তবু,
নতুন জুতোর ফোস্কা জ্বালায়
জ্বলেন তখন প্রভু।।

 

 

 

 

বেলাশেষে

মধুবন্তী আইচ


সহস্র রজনী জেগে রয়েছি নক্ষত্রলোকের আলোয়,
দু'চোখের তারায় একবার শুধু তোমার প্রতিবিম্ব আঁকবো বলে।
আঙুলের ডগায় তোমার দুঃখ ছোঁয়ার অছিলায়,
নীল ঘূর্ণির অতলান্ত ছুঁয়ে ভেসে উঠেছি বারবার।
হাতের পাতায় তোমার হাসির পরাগ মাখবো বলে,
বৃষ্টিকণাদের কপোলে ঠোঁটের লালিমা এঁকেছি শতবার।
তোমার হাতের উপর হাত রাখবো বলে,
অলঙ্ঘিত কাঁটাতারের ব্যূহে হৃদয়কে বাজি রেখেছি বারংবার।
জীবনের অর্ধপথ অতিক্রান্তে অজবীথির সীমান্তে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ---
গোধূলির শেষ আলোয় একবার শুধু তোমাকে দেখার আশায়...।

 

 

 

 

উপত্যকায় হিমবাহ

 ফেরদৌসী বেগম

রাজশাহী/ ০৮.১১. ২০২১


ধূলি ঝড়ে ধুসরিত গোলক
মৃত্যু ছায়া নামে উপত্যকায়
খুব ভয় হয়, শীতল হয়ে আসে চরণ
নেমে আসে মেরু শীতলতা
ডুবে যায় ঘর, পীচ ঢালা পথ
জনপদ, প্রিয়জন, প্রিয় অ্যালসিয়ান।
বরফে ঢাকা শুভ্র ফলক
অতন্দ্র প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে
বড্ড ভয় এ হিমশীতলতাকে
বড্ড ভয় হিমাগারকে,
জমে যাওয়ার , হারিয়ে যাওয়ার
শুধু সময় জানে কতটা পথ পেরিয়ে
কতটা আছে বাকী
তবুও জীবন বয়ে চলে অনিবার।
বুকের মাঝে মরু ঝড়
কেন যে মাঝে মাঝে কড়া নাড়ে
হিম শীতল একটা ছায়া
কিছুতেই মনে করতে পারি না
বিদ্যালয়ের সেই পিয়নটির নাম
ছুটির ঘন্টা বাজাতো- কত সুদীর্ঘ অপেক্ষা
কখন বাজবে ঢং ঢং।
জীবনের শেষ ঘন্টা কখন যে বাজে!
প্রিয় বইয়ের পাতা ঝাপসা হয়ে আসে
প্রিয় কলমটি কেঁপে যায়
সাদা কাগজ পিচ্ছিল হয়ে হয়ে যায়
লেখা হয় না প্রিয় কবিতা
শোনা হয় না প্রিয় গান
প্রিয়মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়
কুয়াশার অবগুন্ঠনে।
আজকাল মৃত্যুকে বড্ড ভয়
প্রিয় ফুলের সুবাস নিই সুদীর্ঘ শ্বাসে
প্রিয় চাঁদ একা বেশি একা
তবুও জীবন! প্রিয় জীবন! মুখোমুখি
প্রদীপ নিভে, প্রদীপ জলে
আর একটু বাকী
অসীমের লীনতায়।

 

 

 

 

।।বড় আপা।।

সামিদা খাতুন

 

চারদিকে এত কথা
এত মানুষের ভিড়
তবুও কেন আমার মনটা
করে এত অস্থির।
ঘুরে ফিরে কাজ করি
এদিক সেদিক যাই
কি যেন হারিয়ে গেছে আমার
কে যেন নাই।
সবার ভিড়ে খুঁজি তারে
কোথাও নাহি পাই
কই গেলে পাবো তারে
কোনখানে তে যাই।
তার কথা যে কানে বাজে
হৃদয়ে হাসির আওয়াজ
বারবার ভেসে ওঠে চোখে
তার মায়াবী মুখের সাজ।
আনমনা হয়ে দৌড়ে যখন
তার বসার ঘরে যাই
সেই চেয়ারটি যে ফাঁকা পড়ে
আমার আপা নাই।
যখন হয় খাবার সময়
খাবার টেবিলে সবাই আসে
মেজ ও সেজো আপা আসে
আমার আপা নেই আশেপাশে।
সবার মুখ পানে চেয়ে থাকি
বড় আপা বলে আর কাকে ডাকি
আপা কি আমায় দিলো ফাঁকি
তবুও আমি মনে আশা রাখি।
রাত্রি শেষে ভোরের দেশে
সূর্যমামা যেমন হাসে
আপা তেমন আসবে আবার
বসবে আমার পাশে।

 

 

 

 

 

মনকেমনেরা...

নীলাঞ্জনা সরকার

 

সব রাতে শান্তি আসে না।
তাই একটা গলিপথ চাই.... একাকী বসবো।
যেদিন আকাশে চাঁদ থাকবে না, স্বপ্নটা হবে বিশৃংখল!
সেদিন নির্বিকার বসে....
অচেনা অদেখা তোর সবটা জড়িয়ে ধরবো।
তারাদের ইশারায় বুকের মধ্যে অন্ধকার সরে যাবে,
আমি অভিজ্ঞতার কল্পনায় আকাশকে ভালোবাসবো।
ভয় পাস না.. আমি থাকি কিংবা না থাকি....
দিয়ে যাব একটা চাবি।
তুই ভোরের নরম রোদে দরজা খুলে,
আত্মবিশ্লেষণ করিস আর আমি....
নিজেকে খুঁজবো দ্বীপান্তরে।
আকাঙ্ক্ষার আর মৌনতার হাত বাড়িয়ে
নির্জন কোন অন্ধ গলির আনাচে-কানাচে
জীবন সংগ্রামের বেনামী পথে।
আসলে কিছু ক্ষেত্রে ফেলে আসলে কষ্ট হয় না
তাতে ব্যাখ্যারা থাকে নিজের মত,
কৈফিয়ৎ থেকে বহুদূর....
তাই এখন অনেক শান্ত আমি।
বুকের ভিতর ঝড়টাও, আমি আছি আমার মত
বৃষ্টিময় অহেতুক মেঘেদের থেকে লুকিয়ে....
তবুও ভালোবাসলে ঘুম আসে না।।

 

 

 

 

পোড়ামানুষ

 

সাইদুজ্জামান

 

যে মানুষ পুড়েই আছে, পড়ে আছে আর কিছু নয় - ছাই,
নতুন করে আর কী পোড়াবে কোন আগুনে, জানতে আমি চাই।
আগুনের বদলে বরং হাওয়ায় উড়িয়ে দাও টুকরো টুকরো স্মৃতি,
খরস্রোতা নদীর বুকে ছড়িয়ে দাও প্রেমের এবং প্রীতির ইতি।
পোড়ামানুষকে আবার পোড়াও - ওটাই এখন সুসভ্যতা, ওটাই এখন রীতি,
ভালোবাসা ভালো নয় - ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুতে এ-দীনের নাই ভীতি।
পোড়ামানুষ, পোড়ামানুষ, পোড়ামানুষ - কীভাবে আর আবার তাকে পোড়াও?
ভস্মীভূতকে ভস্ম করে সাধ্য আছে কার - বরং তাকে তুলোর মতো ওড়াও ।

টরন্টো, নভেম্বর ৯, ২০২১