কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন "আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ায়
লুকোচুরি খেলা রে ভাই লুকোচুরি খেলা"... কোথায় হারিয়ে গেল সেই সব
দিন! বর্তমান মহামারীকালে উদ্বেগ- উৎকণ্ঠায় ভুগছি আমরা সবাই। বালিতটে
আঙ্গুলের মিহি স্পর্শ অনুপস্থিত, বাড়ির অন্দরমহল আর বারান্দার
দূরত্বের দৈর্ঘ্য যেন ক্রমাগত বেড়ে চলেছিল! দেওয়ালে নিজের স্বত্ব
লেপ্টে অযত্নে, দীর্ঘশ্বাসে অবক্ষয়ের সাক্ষী হচ্ছিলাম সবাই। সেটাই
স্বাভাবিক। কিন্তু মনের ওপর বাড়তি চাপের বোঝা কম বেশি সবাই অনুভব করছি
এটাই সত্যি। বিভিন্ন মাধ্যমে অতিপ্রচার আতঙ্কের মাত্রা বাড়িয়ে রাগ বা
অবসাদ ডেকে আনছে শুরু থেকেই। এই সময়ে 'কোয়ালিটি টাইম' কথাটি ভুলে
গেলে চলবে না। এই ইতিবাচক অবসর কাটানোর মাধ্যমে আমরা মনোদৈহিক ভারসাম্য
সুষ্ঠভাবে রক্ষা করতে পারি। এই কোয়ালিটি টাইম কাটানোর উপায় অনেক কিছু
হতে পারে যেমন সঙ্গীত চর্চা, নাচ, ছবি আঁকা ইত্যাদি যার মধ্যে অন্যতম
হলো বই পড়া। শুধু এই মহামারীকালে নয় আগামী দিনেও অনেক অনিশ্চিত বিপদে
আমরা অকৃত্রিম বন্ধন তৈরী করতে পারি সাহিত্যচর্চার সাথে যা মনের পজিটিভ
এনার্জি বাড়িয়ে দেয়, একাকিত্ব দূর করতে সাহায্য করে এবং
ব্যক্তিত্বের প্রসার ঘটায়। বিখ্যাত লেখকদের সৃষ্টিতে নিমগ্ন হওয়ার
সাথে সাথে আসুন আমরাও সৃষ্টিশীল হই। শৈশবের ইচ্ছেগুলো কোনোদিন স্তব্ধ
হয়ে যায় না, পর্দার আঁড়ালে থাকে মাত্র। যদি কোনোদিন... কখনো নিজের
ভাবনাকে ধরে রাখার একটা ইঙ্গিত অনুভব করে থাকেন তাহলে শুভস্য শীঘ্রম।
এই যে সকালে চা/কফি দিয়ে দিন শুরু করে রাত পর্যন্ত আমরা কিছু না কিছু
ভাবি এবং করি সেগুলো একটু সময় বের করে লিখে রাখতে পারি। মনে হতেই
পারে, ধূর! এসব আমার জন্য নয়। তবে, যদি একটু অন্যভাবে বিষয়টাকে দেখা
যায় তাহলে বুঝতে পারবেন যে সত্যিই খুব ভারী শব্দচয়ন হয়তো সবাই পারে
না কিন্তু গল্প... তা তো আমরা সবাই কম বেশি করতে ভালোবাসি। তাহলে সেই
পথে একটা লম্বা পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করা যেতেই পারে। মনে করুন, আমাদের
পরবর্তী প্রজন্মের জন্য না হয় এই বিপদকালীন সময়ে ঠিক কিভাবে আমাদের
দিন কেটেছে তার একটা পাণ্ডুলিপি থাক। ব্যক্তিগত স্মৃতি রোমন্থন হয়তো
নিজেদেরও আগামী দিনে ভালো লাগবে।আসলে সাহিত্যচর্চা ভালোলাগা থেকেই শুরু
হয়। কিন্ত কি এই সাহিত্য? গল্প/কবিতা/প্রবন্ধ ইত্যাদি অনেকে অনেক ভাবে
ব্যাখ্যা করবেন। সাহিত্য আসলে শিল্পের একটা অংশ, বিস্তারিত বললে কোনো
লিখিত বিষয়বস্তু যা সাধারণ লেখনী থেকে আলাদা। সহজ ভাষায় বললে এটি
ভাষার মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করার একটি মুক্ত উপায়। সময়ের সাথে
সাহিত্য চর্চার পদ্ধতি আধুনিকত্ব পেয়েছে অনেকটাই। হাতে নিয়ে বই পড়ার
পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়েছে 'ই পত্রিকা'। যখন আমরা জানলার কাঁচে বৃষ্টি
দেখি কিন্তু ভিজতে পারি না...স্বপ্নে বুনো ফুলের গন্ধ পাই, নুড়ি নিয়ে
খেলি, কিন্তু ঘুম ভেঙে যায়। অবসাদের মেঘে তখন এই 'ই পত্রিকা' সহজেই
ভালোলাগার মুহূর্ত ফিরিয়ে দেয় যখন হাতে নিয়ে পড়ার পছন্দমত বই
পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়। কি লাভ বলুন তো জড় হয়ে বাঁচার! বরং উদ্ভিদের
মত শাখা মেলি। মুগ্ধতা আনি নিজের সৃজনশীলতায়। অনভ্যস্ত অথবা অভ্যস্ত
কলমে কখনো ফুল ফুটুক অথবা গোলাপের মৃত্যু হোক। লেখায় আসুক হৃদপিণ্ডের
অস্থিরতা... ভালোবাসায় তো কত কি হয়! আমরা না হয় যুদ্ধে নামি দু চার
লাইনের মাদকতায়। আসুন আমরা চেষ্টা করি শব্দকে ভালোবেসে কল্পনাকে
প্রাধান্য দিয়ে ইতিবাচক ব্যস্ততায় নিজেদের ভরিয়ে রাখতে।
কার্তিকের কুয়াশার 'ই পত্রিকা' বেশ কিছু মানুষের প্রতিভায় সমৃদ্ধ হয়ে
প্রতিমাসে প্রকাশিত হয়ে চলেছে। কৃতজ্ঞতা সকল পাঠকবৃন্দকে। আশা রাখি
সকলের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় কার্তিকের কুয়াশার যাত্রাপথ রঙিন হোক।
নীলাঞ্জনা সরকার
মুম্বাই, ভারতবর্ষ