-ফিরোজা হারুন
এদিকে মামা –মামী অনেক বিয়ের প্রস্তাব পরীক্ষা করে দেখলেন। পছন্দ
করার মতো দু’একটা পেলেন, কিন্তু মামার কলিগের পাশের বাড়ির ভদ্রলোক
নাছোড়বান্দা। তার খুব ইচ্ছে তার পরিচিত ছেলেটির সঙ্গে আমার বিয়ে হোক।
ছেলে স্বপ্রতিষ্ঠিত। ভাল প্র্যাকটিস করেন। ভবিষ্যত আরও ভাল। ব্যবহার
ভাল, দেখতে খারাপ নয়। কিন্তু আমার মনের দিক থেকে কোন সায় পেলাম না।
ভাবলাম, আমি সেরকম কাউকে নির্বাচন করিনি জীবনসংগী হিসেবে গ্রহন করার
জন্য। অচেনা লোকের সঙ্গেই আমার বিয়ে হবে। সুতরাং সে যেই হোক তাকে ঠিক
করে নিতে হবে। তা আমি পারব।
সকলেই বলতে লাগলো ‘ওকালতি পেশা খারাপ কি? মানুষ তার প্রফেশনের জন্য
খারাপ হতে পারে না। যে ব্যক্তি মন্দ, সে উকিল না হয়ে অন্য পেশায়
নিয়োজিত থাকলেও মন্দলোক হবে। খারাপ যে, তাকে কোন পেশাই ভাল করতে পারবে
না। ভাল যে, সে যে কোন অবস্থানে তার চরিত্রের দৃঢ়তায় অটল থাকবে।’ এসব
বক্তৃতা শুনে আমার মন যুক্তির সন্ধান পেল। আমি সম্মতি জানালাম।
ছেলে দেখার আয়োজন হলো ঢাকা বিমানবন্দরে। রেবা ভাবীর ভাইয়ের বিলাত গমন
উপলক্ষে আমরা এয়ারপোর্টে গেলাম। তখনকার দিনে কেউ বিলেত গেলে অনেকেই
তাকে বিদায় দেয়ার জন্য এয়ারপোর্ট যেত। সেই সুযোগে বিমানবন্দর দেখা,
উড়জাহাজ দেখা এসব কাজও হতো। মামার কলিগের বন্ধুও সেই সুপাত্রকে নিয়ে
এলেন সেখানে। পরিচয় করিয়ে দিলেন। দৃষ্টিটা একটু ক্রূর মনে হলো।
কথাবার্তা হয়নি তার সাথে আমার। মামারা দু’চার কথা আলাপ করলেন। তাতে
নাকি ভালই মনে হয়েছে তাদের। সে ঘটক ভদ্রলোক তার গুণের অনেক ফিরিস্তি
দিলেন। বিদ্যা, পেশা, নির্ঝঞ্ঝাট কোন কিছু ভাবতে হবে না, একেবারে তৈরী
সংসার! কেবল একজন ঘরণী দরকার, আর কিছুই নয়। সোনায় সোহাগা হবে নাকি আমার
বিয়ে। আমার কেমন যেন মন উঠলো না বিয়েতে। তবুও রাজী হয়ে গেলাম। সকলের
যখন পছন্দ তখন আমার হয়তো ভালই হবে। যে বসন্তে আমার ভাইয়ের বিয়ে, তার
পরের বসন্তেই আমারও জীবনের পট পরিবর্তনের ক্ষণ নির্ধারিত হলো। আমি তৈরী
হলাম। তবে মনের আড়ষ্টতা রয়ে গেল। যথারীতি মা ও মামী ঝাঁপিয়ে পড়লেন
আয়োজনে। মামাতো বোনটিও একটু বড় হয়েছে। সেও যথেষ্ট সাহায্য করতে পারছে।
আমার মা মনের মাধুরী মিশিয়ে অনুষ্ঠান রচনায় মন দিলেন। আয়োজন খুব সুন্দর
হলো। তারপর পঞ্জিকা দেখে দিনক্ষণ ধার্য হলো।
বরযাত্রী এলেন মাত্র কয়রকজন! বলল, আত্মীয় –পরিজন এদিকে বিশেষ কেউ নেই।
বন্ধু বান্ধবও সংখ্যায় কম। কেননা এখানে তার বেশী দিনের বসবাস নয়। অতিথি
ছিলেন সেই ঘটক সপরিবারে। মামার কলিগ, তার বাড়ির সকলকে নিয়ে। পাত্রের
পিতামাতা সেই সুদূর সাতক্ষীরা থেকে এসেছেন তাদের ছেলেসহ। আর কোন আপনজন
এসেছে বলে শুনতে পাইনি। কিছু কাপড় –চোপড় একটা স্যুটকেসে ভরে ভদ্রলোক
বিয়ে করতে এসেছেন। গহনাপত্র অর্ডার দিয়েছেন, সেগুলো দু’চারদিনের মধ্যে
পেয়ে যাবেন। তাড়াহুড়ো করে সেগুলো তৈরীর কাজ সম্পন্ন হয়নি। আমরা
ভদ্রলোক। মানুষের মুখের কথা বিশ্বাস করি। হতেও পারে এরকম। কারণ ছেলে
একা। বিয়ের আয়োজন কিভাবে করতে হয় তা তার জানার কথা নয়।
আমার মা, তার যত অলংকার ছিল তার অনেকগুলো আমাকে দিয়ে দিলেন। আমাদের
পোশাক –অলংকার দিয়ে আমাকে সাজানো হলো। সেই সময়ে বিউটি পার্লার ছিল না।
বাড়ির বাইরে দোকানে গিয়ে কনে সাজানো, মেহেদী লাগানো, খোঁপা বাঁধানো –এ
ছিল অশ্রুতপূর্ব ঘটনা। বাড়ির মেয়েরা তখন কনে সাজানো , কবরী রচনায় খুবই
পারদর্শী ছিল। বন্ধুরা পরম উৎসাহের সঙ্গে আমাকে অপরূপ সাজে সজ্জিত
করলো। সঙ্গে ছিল আমার মায়ের শিল্পী মনের নির্দেশনা। সর্বাঙ্গ সুন্দর
রূপে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলো, বাড়িতেই। আমাদের দিক থেকে কোন ত্রুটি ছিল
না।
চলে এলাম ঘোড়ার গাড়ি চড়ে শ্বশুরবাড়ি। শ্বশুর বাড়ি ঠিক নয়, বরের বাড়ি।
সেখানে সেই বন্ধুর স্ত্রী আমাকে অভ্যর্থনা জানালেন। হাত ধরে গাড়ি থেকে
নামালেন। সঙ্গে করে গৃহ প্রবেশ করালেন। অল্প কিছুক্ষণ থাকার পর তারা
চলে গেলেন। রয়ে গেলেন আমার শ্বশুর, শাশুড়ি আর একটি দেবর। কম বয়েসী
কাজের ছেলে একটি আছে। খুব ছোট নয়। তরুণ। কিছুক্ষণ পর সে শয্যা গ্রহন
করল।
এমন কোলাহলবিহীন নীরব পরিবেশে কতক্ষণ জেগে থাকা যায়? আমার স্বামীও
বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লেন। অগত্যা আমি একা জেগে রইলাম। রাত গভীর হলো। ধীরে
ধীরে সাজ পোশাক পাল্টে নিলাম। শোবার ব্যবস্থাটি আমার পছন্দ হয়নি।
সেজন্য একটি কাঠের চেয়ারে বসেই বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা করি। ঘুম এলো না
চোখের পাতায়। এমনকি তন্দ্রাও নয়।
জীবনে এই প্রথম রাত, যে রাত আমার বিনিদ্র কেটে গেল। পাখির কূজনে সরব
হলো চরাচর। চেয়ার ছেড়ে উঠে হাতমুখ ধুয়ে তৈরী হয়ে নিলাম। ঘুরে ঘুরে
দেখলাম ঘরদোর। দুই কামরার বাড়ি। শ্রীহীন। লক্ষীছাড়া। ব্যাচেলার মানুষের
সংসার এর চাইতে ভাল আর কি হবে! এই ছন্নছাড়াটাকে এবার মানুষ করতে হবে
আমাকে।
সেই কাজের ছেলেটি সবার জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করলো। দোকান থেকে সব কিনে
নিয়ে এলো। আমার বর রহমতুল্লাহ নাস্তায় শরীক হলেন। খাওয়ার সময় শ্বশুর
সাহেব তাদের চলে যাওয়ার কথা বললেন। বাড়িতে তাদের অনেক কাজ। না গেলে
অনেক অসুবিধা। তাদেরকে আজই যেতে হবে। পরে সময় মতো আবার আসবেন। আমার
সঙ্গে তাদে তেমন কোন কথা হয়নি। বিকেলের দিকে তারা খুলনার উদ্দেশ্যে
ঢাকা ত্যাগ করেন। তারা নিজেরাই রিকশা ডেকে স্টেশনের দিকে চলে গেলেন।
তাদের পুত্রকে তাদের সঙ্গে যেতে দেখলাম না! একটু অবাক লাগলো বটে। তবে
আবার ভুলেও গেলাম সেই কথা।
পরের দিন রাতে দেখি আমার বর অন্য কাময়ায় শুতে গেলেন। আসলে সেটিই তার
বেডরুম যেখানে গতরাতে তার মাতা পিতা ও ভ্রাতা অবস্থান করছিলেন।
ইতিমধ্যে সারাদিন এই লোক আমার সঙ্গে একটি কথাও বলেন নি। মনে মনে ভাবলাম
লোকটি বোধহয় লাজুক।কি কথা বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না। আমার কেমন একা একা
লাগছে। কোনদিন কথা না বলে কাটাই নি। কৌতূহল বাড়তে লাগলো। এ কেমন লোক?
বিয়ের পর বৌয়ের সঙ্গে কথাই বলে না। লোকে তো নব বিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে
কথা বলার জন্য উন্মুখ থাকে বলেই আমার ধারনা। এ বিয়ে তো তার ইচ্ছার
বিরুদ্ধে নয়। ঘটকের প্রচন্ড চাপের মুখে আমার মামারা এই বিয়েতে রাজী
হয়েছেন। নয়তো এই বিয়ে তো কোনক্রমেই হওয়ার নয়। এত ভাল ছেলে, তুলনারোহিত।
কিন্তু এত ভাল ছেলেরা নতুন বউয়ের সঙ্গে কথা বলে না?
পরের দিন সকালে নাস্তার টেবিলে দেখা। আমি দু’একটি কথা বললাম। তাও
নৈর্ব্যক্তিক। সংক্ষেপে উত্তর দিলেন। মনে হল চেম্বারে যাবেন। জিজ্ঞেস
করলাম। উত্তর এলো হাঁ সূচক। বিয়ে উপলক্ষে ছুটি নেয়নি লোকটা? অবাক
লাগলো। কৌতুহলবশতঃ প্রশ্ন করেই ফেললাম – ছুটি নেননি?
বললেন - না।
কেন?
তার কোন জবাব পাওয়া গেল না। তিনি চলে গেলেন। বলাবাহুল্য তার কক্ষের
তালাটি বন্ধ করতে ভুল হলোনা। বিস্ময়ে বিমূঢ় আমি! একি সর্বনাশ! এতো
নাটকের পূর্ব সূচনা! তা প্রথম পদক্ষেপেই? মনে মনে প্রমাদ গুনতে শুরু
করলাম। সতর্ক হলাম। অপেক্ষা করতে লাগলাম পরবর্তী ঘটনা পর্যবেক্ষণের
জন্য। কাজের ছেলেটি তার বাইরে যাওয়ার তৈয়ারী করে দিল প্রতিদিনকার
অভ্যাস মতো। সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি ফিরলেন আগের মতোই সম্ভবত। চা তৈরী
করলাম আমি নিজে। দিলাম তাকে। কোন কথাবার্তা নেই। নিজেই উদ্যোগী হয়ে
দু’চার কথা জিজ্ঞেস করলাম। জবাব দিলেন এই যা। তার বেশী কিছু নয়। সেদিনও
তিনি যথারীতি ঢুকে গেলেন তার রুমে। আমিও সেদিন রাতে আমার রুমের দরজা
বন্ধ করে বিশ্রাম নিতে গেলাম। দেখলাম দরজা যথেষ্ট মজবুত নয়। তবে একটি
বার আছে শক্ত কাঠের। সেটি দরজার উপর আড়াআড়ি যথাস্থানে তুলে দিলাম। এঘরে
প্রবেশের আর কোন পথ আছে কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখলাম। অন্তর কেমন যেন
কেঁপে উঠলো। মায়ের মুখখানি চোখের সামনে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আমার
নিজের দুঃখ কোন দুঃখই নয়। দুঃখ আমার মা – আমার মায়ের কি হবে যিনি আশায়
বুক বেঁধে আছেন আমার সুখ দেখবেন বলে।
পরের দিন পুনরায় নাস্তার টেবিলে দেখা। দুই কামরার সামনে একটি বারান্দা।
বারান্দার একপাশে রান্না ঘর। অন্যপ্রান্তে বাথরুম। মাঝখানে পাতা ছোট
একটি সাধারণ টেবিল, দুটি অতি পুরাতন চেয়ারকে সঙ্গী করে দাঁড়িয়ে আছে।
বলার কিছুই ছিল না। লক্ষ্য করলাম তিনি আমার চেহারা দেখছেন।আগেও দেখেছি।
যতক্ষণ আমি অন্য দিকে তাকাই তিনি আমার চেহারাই দেখেন। ব্যাপারটি
অত্যন্ত স্থূল মনে হলো। স্থির করলাম আমি আর তাকে আর চান্স দেব না। আমি
তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। আমার চোখে চোখ রাখতে পারলেন না। মনে
মনে ঠিক করলাম চেহারা দেখার পালা এখন আমার। কোথায়, কার কাছে এসে পড়েছি,
তা আমার জানা দরকার। তারপর থেকে আমিই তাকে লক্ষ্য করতে লাগলাম। দেখলাম
তার চোখ বড় হিংস্র। দিনে দিনে আমার ধারণা সত্য হলো। তার চোখে নিষ্ঠুরতা
খেলা করছে। আমার সঙ্গে তার বিয়ে হওয়ার পিছনে কোন নিগূঢ় কারণ আছে।
গল্পের বইয়ে পড়েছি নায়ক প্রেম করে বিয়ে করে। তারপর বিয়ের রাতেই সে খুন
করে সেই মেয়েকে। কেউ তার কোন হদিস পায় না কোনদিন। এটা সেই লোকের এক
বিকৃত মানসিক ব্যাধি। তার অন্য সব কার্যকলাপ ঠিক আছে। সুন্দর মেয়ে বিয়ে
করে তাকে একটি বিশেষ উপায়ে হত্যা করাই তার উদ্দেশ্য। এতে তার পৈশাচিক
প্রবৃত্তি আনন্দ পায়।
আমি শিউরে উঠলাম। আমার নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ভাবে চিন্তিত হয়ে পড়লাম।
কয়েকদিনপর আমি মামার বাসায় যাবার কথা বললাম। তাকে আমার সঙ্গে যাওয়ার
কথা আমি বলিনি। তিনিও যাননি। বাসার সকলে অবাক হল আমাকে একা দেখে। সকলে
জানতে চাইলো কেন তাদের প্রিয় অতিথি আসেননি। বললাম, কোর্টে কাজে খুব
ব্যস্ত তাই আজ আসতে পারেননি। মামা মামী অনেক আদর যত্ন করলেন আমাকে।
আবার বিকেলে ফিরে গেলাম সেই নির্জন পুরীতে। ভয় করতে লাগলো। তবুও দেখতে
হবে ব্যাপারটা কি। কয়েকদিন এভাবে কেটে গেল। আমার ছুটি শেষ। কলেজে গিয়ে
মন ভাল হয়ে গেল। মনে হলো কোন স্বর্গপুরীর দ্বার আমার জন্য খোলা হলো।
আমার ভাগ্য মোটেও খারাপ নয়। এই তো কত লোকজন। কত ভাল ব্যবহার করছে সবাই
আমার সঙ্গে। অন্তরে অনেক জোর পেলাম। সাহস সঞ্চয় করে আমাকে বাঁচতে হবে।
হেরে গেলে চলবে না। মরে গেলেও চলবে না। সেই ঘটক –যিনি কনের মাসী বরের
পিসি তিনি আর কখনো আসেননি। বরের বন্ধু –বান্ধব বা অন্য কোন প্রাণীও এ
বাড়িতে পদার্পণ করেনা। সম্পূর্ণ অচেনা পরিবেশ, তবে কাজের ছেলেটি যে ঐ
নিষ্ঠুর লোকটির বিশ্বস্ত সহচর, তা আমার দৃষ্টি এড়ায় নি। আমি ছেলেটিকে
দিয়ে ফুট ফরমায়েশ করিয়ে থাকি। খুশী হয়ে করে, তবে তাকে আমি ভয় পাই।
তড়িঘড়ি বদলি হয়ে আআর পর আমার অফিসিয়াল কাগজপত্র ঠিক করে নেয়ার প্রয়োজনে
শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ে গেলাম। সেখানে অনেক সময় ধরে নানা কাগজ সই করে বাড়ি
ফিরে এলাম। সেদিন কেন জানি না বড়ই উৎকন্ঠা বোধ হতে লাগলো। আমার স্বামী
রহমতুল্লাহ এবং কাজের ছেলে আবদুল আজ খুব খুশী খুশী।
আমার স্বামী মোটামুটি ফর্সা চামড়ায় মোড়া মাঝারি সাইজের লোক। চুলের
সংখ্যা কম। তাও খাড়া খাড়া। দাড়ির সংখ্যাও স্বল্প মনে হয়। শরীরে চামড়া
টানটান। শরীরে কাঠামো হাড় হাড্ডিসার, চাপা ভাঙ্গা, নাক সূচালো। একজন
যুবক সুন্দর চেহারার অধিকারী না যদি হয়, তবুও তার চেহারায় যে প্রাণ
চাঞ্চল্য ও পৌরুষত্ব জেগে ওঠে –এ লোকের তা ছিটেফোঁটাও নেই। দেখলে কারোর
ভাল লাগার কথা নয়। তবুও হিতাকাংখীরা হয়তো ভাবতে পারেন যে ঠিকমতো খাবার,
যত্ন পেলেও এই অবস্থার পরিবর্তন হবে। চেহারার জৌলুস বৃদ্ধি পাবে।
কিন্তু তারা জানেন না যে, এ ব্যাক্তি মোটেও স্বল্পাহারী নন। প্রচুর
খাদ্যগ্রহন করেন। আরামে নিদ্রা যান। আয়েশে অফিস করেন।
ছয়
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজে আমাকে আরেকদিন সেখানে যেতে হলো। গিয়ে দেখি
রাজশাহীর সেই ভদ্রলোক শিহাব আহমেদ। তিনি আমাকে দেখে চমকে উঠলেন। বললেন,
আপনি? এখানে?
বললাম, কেন থাকতে নেই?
-না কল্পনা করিনি আবার এভাবে দেখা হবে।
-কল্পনা করার চেষ্টা করতে হয়। কারণ পৃথিবীটা তো গোল। ঘুরতে ঘুরতে কোন
না কোন সময়ে কারো না কারো সংগে দেখা হবে। যাকে পছন্দ করেন তাকেও, যাকে
না করেন তাকেও দেখতে পাবেন।
-ও কথা বলবেন না। যাকে পছন্দ করি না, তাকে জীবনে আর কখনো দেখতে চাই না।
বিধাতার কাছে আমার এই একটি মাত্র প্রার্থনা।
–বিধাতা অকৃপণ। তাঁর কাছে একটি কেন অনেক কিছু প্রার্থণা করতে পারেন।
মঞ্জুর যে হবে না, তা তো হলপ করে বলা যায় না। তা আপাতত ঢাকায় কিসের
জন্য এসেছেন? তাও মন্ত্রণালয়ে?
শিহাব আহমেদ বদলি হয়ে আসতে চান ঢাকায়। সেই পোস্টিং এর তদবীর করতে
এসেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসেছেন তার কলিগের সঙ্গে। ভাগ্যে আছে দেখা,
তাই এ সাক্ষাৎ আমার সঙ্গে। আমার কলেজের ঠিকানা দিলাম। বললাম, কখনো
সম্ভব হলে যোগাযোগ করবেন –যদি অপছন্দের লোকের তালিকায় না পড়ি। আমি
এখানে কলেজে নতুন।
বাসায় গিয়ে দেখি কাজের ছেলে আবদুল খুব খুশি খুশি। বাসনপত্র গোছাচ্ছে।
জিজ্ঞেস করলাম কেউ এসেছিল নাকি? বললো, হ্যা। পর মুহূর্তে ত্বরিত গতিতে
মুখ ফিরিয়ে বললো, না না। কে আবার আসবে?এখানে ভাই সাহেবের কেউ নেই।
-কেউ নেই কি রে? এই তো তুই আছিস, আমি আছি।
সে হাসতে লাগলো নীরবে দাঁত বের করে।
আমার ঘরে যেহেতু কোন মূল্যবান জিনিসপত্র নেই, সেইজন্য আমি আমার ঘর তালা
বন্ধ করিনা। এছাড়া এটা আমার ঘর নাকি? এতো এক রহস্য পুরী। আমি দেখে
এখানে বাস করছি। আমার আত্মীয়দের আসতে দিইনা। তারা এ অবস্থা দেখলে মন
খারাপ করবে।
ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলাম। মনে হলো একটু আগেও কেউ এখানে ছিল। আমার
বিছানায় তার চিহ্ন। চিরুণী তে একগাদা চুল, যা আমার নয়। একটি ছোট পড়ার
টেবিলের ওপর একটি গোল আয়না আছে আমার। তার পাশে একটি চিরুণী থাকে। পাশেই
আমার বইপত্র, কাগজ, কলম, কালি ইত্যাদি। সেই চিরুণীটি দেখি আমার ধারণা
বদ্ধমূল হলো যে, এঘরে একটি মেয়ে এসেছিল। আমার দুর্ভাগ্যের সাথে সে
বিশেষ ভাবে জড়িত। মনের ভিতর ঝড় উঠলো। কিন্তু করার কিছুই খুঁজে পেলাম
না। এই লোক কে? কি কারণে আমাকে বিয়ে করেছে? কোন খবরই জোগাড় করতে পারলাম
না।
তিনি বাসায় এলেন।বিকেলে চায়ের টেবিলে তাকে শুধালাম,
-আপনার সেই বন্ধু ও তার স্ত্রী কোথায়? আর আসেন না কেন তারা?
উত্তরে জানালেন, ওরা এখানে নেই।
-কোথায় গেছেন?
-যশোরে।
-কেন?
-কেন আবার? সরকারি চাকরী করেন খালেক সাহেব। বদলি হয়েছেন তাই চলে গেছেন।
-তা আমাদের সঙ্গে দেখা করে যেতে পারতেন। এত দূর চলে যাচ্ছেন, বলে যাবেন
তো!
এবার আর জবাব এলো না।
আমার খুব খটকা লাগলো। যে লোক এতো জোর দিয়ে একটি বিয়ে ঘটিয়ে দিয়ে, তিনি
একবার দেখা না করে চলে গেলেন! এ রহস্য উদঘাটন করা দরকার। কিন্তু কোন
উপায় খুঁজে পাচ্ছি না।
আব্দুল তার মনিবকে কি যেন বলতে চায়। সে একবার সেই ঘরে ঢুকে কি যেন বলে
এলো। বেশ সময় নিল আমিই তাকে সুযোগ দিলাম। চলে গেলাম আমার কামরায়। বোধহয়
সেই মেয়েটির আগমন সংবাদ দেওয়া হলো। মনে মনে ভাবলাম মামাকে বলি। তিনিও
তার কলিগের বন্ধুর খোঁজ করুন। তাতেও ভয়ের কারণ আছে। কারণ এখানে আমি
সম্পূর্ণ একা। আমি যমের বাড়িতে যমের সঙ্গে বসবাস করছি।
মনটা খুবই অস্থির। বুকের ভেতর প্রবল উদ্বেগ, শংকা আমাকে তটস্থ করে
রাখলো। এক অশুভ সংকেত যেন অনুভব করতে পারছি। পরদিন আমি কলেজে যাইনি।
শরীর ভাল ছিল না। ঠান্ডা লেগেছে মনে হয়। সকাল দশটার দিকে এক ভদ্রলোক
এসে হাজির ততার বাড়ি সাতক্ষীরায়। সম্পর্কে তিনি আমার চাচা শ্বশুর হন।
এত দিন পর একজন আত্মীয়ের দেখা পেয়ে খুব উৎফুল্ল হলাম। আব্দুলকে পাঠালাম
দোকানে মিষ্টি আনার জন্য। ভদ্রলোককে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালাম। কুশল
বিনিময়ের পর জানতে চাইলাম আমার শ্বশুর–শাশুড়ি, দেবর-ননদ কেন এলেন না?
সেই যে গিয়েছেন আর একবারও কেউ আসেন নি। একটি চিঠি দিয়েও খোঁজ খবর নেন
নি।আমার সঙ্গে তাদের পরিচয় হওয়া দরকার। আমি তাদের ঘরের বৌ। পরিবারের
সদস্য।’
ভদ্রলোক কেমন অবাক হয়ে তাকালেন, শুদজালেন, ‘তুমি এখানে কেমন আছো?’
- খুব ভাল আছি।
- রহমতুল্লাহ কেমন ব্যবহার করে?
- ভাল ব্যবহার করেন। তিনি খুব ভাল লোক। আমি প্রায়ই তাকে বলি তার
বাবা–মা , ভাই–বোনদের এখানে নিয়ে আসতে। তিনি খব ব্যস্ত। সেজন্য বাড়ি
যেতে পারেন না মনে হয়।
- চাচা শ্বশুর সাহেব বললেন, ‘তাহলে মতি গতি পাল্টেছে তার। খুব ভাল কথা।
সে তার বাবা মাকে যে কষ্ট দিয়েছে তাতে ওদের মন ভেঙে গেছে। ভবিষ্যতে
হয়তো তুমিই ঠিক করে নিতে পারবে।
- জিজ্ঞেস করলাম, কি কষ্ট দিয়েছেন? কেন দিয়েছেন?
- তিনি বললেন, সে অনেক কথা। সে এক করুণ কাহিনী, দুঃখের ঘটনা।
- -আমাকে বলেন। সব কথা খুলে বলেন। নাহলে সম্পর্ক ভাল করব কি করে?
পারিবারিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই তো আমার প্রধান কর্তব্য। সব কথা জানা
থাকলে আমার জন্যে সুবিধা হবে।
- তিনি বলতে লাগলেন, ‘রহমতুল্লাহ আমাদের জয়েন উদ্দিন মাস্টারের পুত্র
নয়।’
একথা শুনে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল। হৃৎপিন্ডে রক্ত সঞ্চালন দ্রুততর
হলো। আমার চেতনা লোপ পাওয়ার জোগাড় হলো। নিজেকে সেখান থেকে টেনে উদ্ধার
করে, স্থির হয়ে তার বক্তব্য শোনার জন্য বসে রইলাম। এ সুযোগ হাতছাড়া করা
যাবে না। আর কোনদিন জানতে পারবো না এই লোকের ইতিকথা। এ লোক কে? এ রহস্য
আমাকে জানতেই হবে।
তিনি বলতে লাগলেন, জয়েন উদ্দিন মাস্টারের প্রথম সংসার–জীবনে কয়েকটি
সন্তান, জন্মের পর পরই মারা যায়। তারা অনেক ডাক্তার, কবিরাজ, পীর
ফকিরের শরণাপন্ন হন। এক সন্ন্যাসী তাদেরকে এক অচেনা, অনাথ নবজাতককে
দত্তক গ্রহন করার নির্দেশ দেন।চারিদিকে সেরকম একটি শিশু সংগ্রহের
চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু কোথাও কোন সন্ধান পাওয়া গেল না। এমন সময়
একদিন তাদের বাড়ির অদূরে নবগঙ্গা নদীতে এক বেদের নৌবহর এসে হাজির।
সেখানে একটি নবজাতকের কান্না শোনা যায়। থেকে থেকেই সেই ক্রন্দনধ্বনি
গ্রামবাসীদের সচকিত করে তোলে। কৌতূহলী জনতা তাকে আবিষ্কার করে। এক
মাতৃহীন শিশু। বড়ই অসহায়। কে দেখবে তাকে?
জয়েন উদ্দিন মাস্টারকে সকলে সেই শিশুর সন্ধান দিল। এ তো আল্লহ্র দান।
কারণ সন্ন্যাসী বাবা তাদেরকে এরকম একটি নবজাতক দত্তক গ্রহন করার কথা
পরামর্শ দিয়েছিলেন।একটি দত্তক গ্রহন করলেই পরবর্তীতে তাদের সন্তান
জীবিত থাকবে। তাদের সন্তান আর জন্মের পর পরই মারা যাবে না।
আল্ল্র ইচ্ছা মনে করেই তারা এই বাচ্চাটিকে বুকে তুলে নেন। তখনকার
প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী জয়েন উদ্দিন মাস্টার একটি টাকার পরিবর্তে
শিশুটিকে খরিদ করেন। তাতে করে বেদেদের সেই বাচ্চার ওপর আর কোন অধিকার
থাকবে না। কোনদিন ফিরিয়ে নিতে পারবে না।
শিশুটির গায়ের রঙ পরিষ্কার ছিল। যত্নে আদর দিনে দিনে ফুটফুটে হলো।দেখলে
সকলেই আদর করতো।প[অরম করুণাময়ের ইচ্ছায় এই ছেলেকে তারা পেয়েছেন। সেজন্য
তার নাম রাখা হলো ‘রহমতুল্লাহ – আল্লাহ্র দয়া।’
সন্ন্যাসীর কথাই ঠিক হলো। জয়েন উদ্দিন মাস্টারের দুটি পুত্র ও একটি
কন্যা সন্তান জন্মগ্রহন করে পরবর্তীকালে এবং তারা সকলেই জীবিত তজাকে।
কিন্তু এই ছেলেটিকে তারা পরম যত্নে মানুষ করেছিল। এখনো তারা একে খুবই
স্নেহ করেন। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস! পর কখনো আপন হয়না। এই ছেলে
বাল্যকাল থেকেই অপরাধ প্রবণ। কয়েকদিন পর পর একটি অঘটনা না ঘটালে তার
চলতো না। সেগুলি সে ঘটাতো তার মাতা পিতাকে কষ্ট দেবার জন্য। তার হাতে
সবসময় একটি লাঠি বা কাঠি অথবা বাঁশের কঞ্চি থাকতো। ঐটিই ছিল তার চব্বিশ
ঘন্টার খেলার সাথী। আর সেটি দিয়েই সে ঘটাতো অঘটন।
হঠাৎ প্রশ্ন করে ফেললাম, বেদের ছেলের তো গায়ের কৃষ্ণবর্ণ হওয়ার কথা।
তার গায়ের রঙ বেশ ফর্সা। এর কারণ কি?তার জন্মের পর তার মায়ের কি
হয়েছিল?
- এত কথা তো জানা যায় নি। তবে তার জন্মদাত্রী নাকি কি এক অজ্ঞাত কারণে
নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে মৃত্যুবরণ করে। পরবরর্তীতে বেদেরা একে বিক্রি করে
দিয়ে দ্রুত নোঙ্গর তুলে অন্য কোথাও চলে যায়। আর কোনদিন আসেনি ছেলের
খোঁজে।
স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হলো রহমতুল্লাহ্কে। লেখাপড়ায় ভালো ছিল সে।
স্কুলের যত দুর্ঘটনা, সে-ই ঘটাতো। চেয়ার টেবিল ভেঙ্গে ফেলা, খেলার মাঠে
অন্য ছেলেদেরকে আঘাত করা, ছেলেদের পকেটের পয়সা সরিয়ে ফেলা –এসবই তার
একারই কাজ।তার মাথায় নিত্য নতুন বুদ্ধির খেলা।তবে সবই ছিল কুবুদ্ধি।
তাকে সৎ পথে রাখার জন্য বাবা মা তাকে তিরস্কার করতেন। একটু বড় হয়ে মুখে
মুখে তর্ক করা তার রুটিন হয়ে দাঁড়ালো। সে বলতে আরম্ভ করলো আপনারা নিজের
স্বার্থে আমাকে লালন পালন করেছেন। আমার জন্য আপনাদের এইসব ছেলেমেয়েরা
বেঁচে আছে। নাহলে সব মারা যেত। আপনাদের স্নেহ মপমতা সব লোক দেখানো।
আমার জন্য নয়।
এতকিছু সত্ত্বেও জয়েন উদ্দিন মাস্টার সাহেব পুত্র স্নেহ থেকে তাকে
বঞ্চিত করেন নি। বরং তার লেখাপড়ার খরচ এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা, অন্য
সন্তানদের তুলনায় একটু বেশিই দিয়েছেন। তা সত্বেও তার মন পাননি।
রহমতুল্লাহ্র লেখাপড়া একদিন শেষ হয়। নিজের পায়ে দাঁড়ায়। ওকালতি শুরু
করে জেলা শহরে। তারপর আর পিতা মাতার সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনি। এভাবেই
যোগাযোগ ছিন্ন হয়। স্নেহময় পিতামাতা তাকে কাছে টানার অনেক চেষ্টা
করেছেন। বিফল হয়েছেন বারবার। এভাবেই কাটে দীর্ঘকাল। পরে সে ঢাকায় চলে
আসে। জয়েন উদ্দিন মাস্টার তার খোঁজ জানতেন না।
তারপর এই বিয়ে উপলক্ষ্যে অন্যলোক মারফৎ তাদেরকে ডেকে এনেছে। অন্যকোন
উপায় ছিলনা বলে। তাও শুনেছি তাদের সঙ্গে কোন আন্তরিক ব্যবহার করেনি।
তবুও বাবা মা হিসাবে তাদের আশীর্বাদ তার জন্য নিরন্তর বয়ে চলবে। এখন
তুমি যদি তাকে ফিরাতে পার, তবে তো খুবই ভাল হয়। মাস্টার সাহেবের
পরিবারে আনন্দের জোয়ার আসবে। টাকা পয়সার সুখের চাইতে স্নেহ মমতার সুখই
বড়। সেটিই প্রকৃত সুখ। এ ছেলেটিকে সে কথাট বুঝাবার চেষ্টা কর।
এতক্ষণে আমি সম্বিত ফিরে পেলাম। বললাম, চিন্তা করবেন না, আমার চেষ্টা
আমি করব।
আব্দুল ফিরে এলো নানাপ্রকার খাদ্যদ্রব্য নিয়ে। চাচাশ্বশুরকে অনেক আদর
যত্ন করে বিদায় দিলাম। জোর করে তাকে দীর্ঘ সময় ধরে রাখা ঠিক হবে না মনে
হলো। কারণ রহমতুল্লাহ্ সন্দেহ করতে পারে অনেক কিছুই । সে একজন
ডেলিংকুয়েন্ট পারসন। তার মন সন্দেহ প্রবণ। অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস!
একজন আইন অমান্যকারী অপরাধপ্রবণ লোক কিনা আইনের ব্যবসা করে। যোগ্য লোকই
বটে! এরাই যুগে যুগে কত নিরাপরাধ ব্যাক্তিকেলালা দালানের ভাত
খাওয়াচ্ছে, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড় করাচ্ছে –কে তার হিসাব রাখে? আমার আরো
সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। আমি এক ভয়ংকর বিপদের বিবরে অবস্থান করছি।
আর দুঃখ নয়।মুক্তির উপায় খুঁজে বের করতে হবে।মনস্থির করে ফেললাম। মাথার
উপর থেকে বিরট বোঝা নেমে গেল।আমার মনের ভাব গোপন রেখে নিত্য দিনের মতই
চলতে লাগলাম।
পরের দিন কলেজে ক্লাস ছিল না। কোন এক বিশিষ্ট ব্যাক্তির মৃত্যুতে ক্লাস
সাসপেন্ড হলো। বাসায় ফিরে আসার কোন তাড়া ছিল না। ভাবছি মামার বাসায়
যাই। গেটের বাইরে পা রাখবো এমন সময় দেখি শিহাব আহমেদ। আনন্দের আলোর
শিখার মতো অন্তরকে স্পর্শ করলো। কুশল বিনিময়ের পরেই প্রস্তাব দিলেন কোন
এক রেস্টুরেন্টে যাবার জন্য। আমার অন্যকোন অসুবিধা না থাকায় রাজি হয়ে
গেলাম। নিউমার্কেটে তখন বেশ কিছু খাবারের দোকান ছিল। মেয়েদের জন্য ছিল
পর্দা ঘেরা আলাদা ব্যবস্থা। আমরা ছাত্রী জীবনে প্রায় সবসময়ই সেসব
দোকানে যেতাম স্ন্যাক্স খেতে। আজো সেখানকার কথাই মনে পড়লো। গেলাম,
খাবারের অর্ডার দিলাম। তারপর শুরু হলো আমাদের গল্প। গল্পে তারও উৎসাহ
যেমন, আমারো কম নয়।
চলবে...