সুলতা রায়ের কবিতা
----নেশাচ্ছন্ন---
যোগ বিয়োগ
এক সহজ অঙ্কের সমাধান।
নিকোটিনের সাদা ধোঁয়ায়
আনে---এক তৃপ্তির নেশা।।
চারু,আর ভাবায় না
আজ আঁধারে, সন্ধ্যার মোহনীয় মুগ্ধতা
ওর ঘোলাটে শাড়ির আঁচলে
গা ভাসানোর নেশা।।
দূরে ভেসে আসে মাদলের তাল
মহুয়া ,কাছে এসো আরও এক বার
আজ আর ক্লান্তি নেই।।
চারু তুমি ফিরতেই পারো।
আমি না হয় থাকি।এই পরন্ত বেলার
সন্ধ্যার বুকে
নিশাচর কাল রাত্রির ন্যায়।।
24.6.2023
সাইদুজ্জামানের চতুর্দশপদী কবিতাবলী
০৫/৩০০
আমি ছিলাম ও আছি সর্বহারা - দারিদ্র্যই ভালোবাসি বেশি
ভালোবাসি মুক্তি, দুঃখ ভালোবাসি - ভালোবাসি গোলাপের কাঁটা,
রক্তাক্ত আহত হয়ে আছি আমি, ভালোবাসি সেই পথ হাঁটা
যেখানে চৌচির মাটি, মনে হয় নিজেকেই যেন ভিনদেশি।
ভালোবাসি ভালোবাসা সর্বনাশা, ভালোবেসে অথৈ জলে ভাসি,
অর্থহীনতাই ভালো লাগে বেশি, তুমি অর্থ নিয়ে থাকো যদি
সাধ হয় যদি ইচ্ছে করে তবে সুখে থাকো তুমি নিরবধি,
আমি রয়ে যাবো এ-বিদেশে, ক্ষয়ে যাবো একা - ক্ষয় ভালোবাসি।
ভালোবাসি ভয়, পরাজয়, সেসব যা পড়ে থাকে আমি তাকে
তুলে নিই বুকে কাতর আদরে - ভুল ছাড়া কিছুই করিনি
তুমি যাও আমি বেশ আছি একা দারিদ্র্যের কাছে আছি ঋণী
আমি ভুল মানুষ হয়েই রয়ে যাবো ভুলে জড়িয়ে আমাকে।
টরন্টো শহরে যে পুরুষ একা, বহুদিন তাকে আমি চিনি
রক্তের ভেতরে সেই এক সুর যেন আমি শুনি রিনিঝিনি।
টরন্টো, জুলাই ১৩, ২০২৩
১৮/৩০০
প্রেম শুধু বেদনার- কেন হবে - আনন্দেরও হয়
ভালোবাসা কারে কয় - এই প্রশ্নে বিদ্ধ সকলেই
হয়েছেন সততই, প্রেমের অর্থ বন্ধন, এই
সত্য মেনেছেন কেউ - পেয়েছেন অন্য কেউ ভয়।
ভালোবাসা নীল জল, যেরকম আগুনের লালে
নীল থাকে সেরকম - যত নম্র তত ভয়ংকর
একাত্মতার বিষয়, সোজা নয় জানেন ঈশ্বর
করালম্বিত করিবো - অগ্নি কীভাবে মাখিবো গালে ?
আগুনে চুম্বন দাও - মাটির মানুষ পোড়াবার
সাধ পূর্ণ করো তুমি - পুন্য করো ক'রে তাকে খাঁটি
আসোনি কখনো তুমি - একবার এসো এই মাটি
দেখে যেয়ো ইচ্ছে হলে, পড়ে আছি আমি একাকার।
ঝ'রে আছি মাটিতেই - কেউ বসে নাই এই ঘাসে
আকাশে বাতাসে নেই - কে আর শূন্যতা ভালোবাসে!
টরন্টো, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩
২০/৩০০
চেয়েছিলো দিতে তনু , দিতে মন সর্বস্ব তপতী
চেয়েছিলো দিতে আশা, একজন যুবতী বিপাশা
বকুল দিয়েছে ফুল, শিউলির আছে যাওয়া - আসা
এইসব ভালোবাসা আমিতো ভুলি নাই শ্ৰীমতী ।
স্মৃতির ভেতর আমি গোপনে রেখেছি সেইসব
আপন গোপন কথা - এক জাগতিক অভিসার
সিন্দুকে আটক আছে স্মৃতি, আমি ছাড়া কেউ আর
জানিবে না সে সম্প্রীতি - অন্তরের কুমুদ কৈরব।
যুবতীর খিলখিল হাসি ছিলো বাঁশি ছিলো - এলো
চুল ছিলো, সব ছিলো - থাকে নাই শুধু কথা তার
রাখে নাই, কেবা রাখে - কেবা আসে ফিরিয়া আবার ?
বহতা নদীর মতো, জীবন আমার বয়ে গেলো।
ঢের হলো কাব্য করা, এবার একলা আমি যাই
মাটির উপর দু'পা আমার এখন রাখা চাই।
টরন্টো, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩
১৫/৩০০
প্রজাপতির মতন একটি কবিতা লিখো - মনের ভেতর
উড়বে আর রাখবে পিছে রুপের ছটা এক চিহ্ন-রেখা
চাবির মতন সেই কবিতা খুলবে তালা গুপ্ত অর্থ লেখা
পাখির গানের মতো হোক তোমার কবিতা অন্তরে অন্তর।
সাদা ক্যানভাসে আঁকা হোক হৃদয়ের ছবি শিশিরের ভোর
কম্পাসের মতো নিয়ে যাক পথটি চিনিয়ে তোমার কবিতা
অনিন্দ্যসুন্দর নৃত্য হোক শব্দ ছন্দ বৃত্ত ও সহমর্মিতা
মর্মরধ্বনির মতো কথা হোক কানে কানে চুম্বনে আদর।
প্রতিবিম্বিত হোক না মুকুরের পরে সেই রূপসীর মুখ
সেইভাবে লিখে থাকে যে কবি কবিতা আমি শুধু তাঁকে
কবি মানি আরকেউ কবি নয়, যাবোনাকো আর কারো ডাকে
কবিতায আমি চাই একটু জট ছাড়ানো রহস্যের সুখ।
দূর থেকে দেখা চাই কবিতায় যেন পাই এক টেলিস্কোপ
ক্লান্তি বাড়ে শ্রান্তি বাড়ে যদি না পাই তাহারে চঞ্চল বিক্ষোভ।
টরন্টো, আগস্ট ২০, ২০২৩
১২/৩০০
হঠাৎ দেখি আমার বাগান ভরা উজ্জ্বল তারা
যাকে আমি খুঁজে ফিরি সেও দেখি খুলেছে কপাট
এতদিন ছিল এক নিতান্তই কাঁটা-ভরা মাঠ
নক্ষত্রের এ - বাগান সন্তর্পনে রেখে গেলো কারা ?
গুমোট ছিল বাতাস নৃত্য করে মেলোডি কাহার?
রূপসীর দুইচোখে পড়িয়াছে আকাশের ছায়া
গভীরতম রহস্য একখানি বাড়াতেছে মায়া
রেশমি নদীর মতো আজ বহিতেছে চুল তার।
এই কাঁটাবনে কেন আজরাতে ফুটেছে গোলাপ
কোনোদিন এইভাবে বহেনি সুগন্ধ বনফুলে
পাখিদের গান তার করিছে আদর এলোচুলে
বহুদিন আমি আর শুনি নাই এমন সংলাপ ।
খরস্রোতা নদী যদি সে-কণ্ঠে মন্থর হয়ে আসে
বলো সাধ্য আছে কার অবশ্য ভালো তার না বাসে?
টরন্টো, আগস্ট ১০, ২০২৩
জাহিদা মেহেরুন্নেসার কবিতা
আমিও তো প্রতিদিনা
আমিও তো প্রতিদিন প্রেমে পড়ি বারবার,
আমিও তো স্বপ্ন দেখি ভালবাসার
আমিও তো উড়ে যেতে চাই আকাশনীলে
আমিও তো পদ্ম হয়ে ভাসতে চাই দহনবিলে
আমিও তো গলে যেতে চাই চন্দ্র আভায়
আমিও তো ডুবে যেতে চাই জ্বলন্ত লাভায়!
আমিও তো সুশোভিত বসন্ত দেখতে চাই বনে
আমিও তো তোমাকে চাই নিবিড় আলিঙ্গনে।
চরু হকের দুটি কবিতা
সেই পাখি
উড়ে গেলো দূর বনে দারুণ শীতের নদী
পার হয়ে
কোথাও রক্তের ঝোরা
ঝরে...।
হাওয়ার গোলাপ
হাওয়ায় ভাসছে তার আলিঙ্গনের সুরভি
আমি তাকে সত্য জেনে ভরে নেই হৃদপ্রকোষ্ঠে
দিনগুলো হয়ে উঠলো মাতাল
আর
মিথ্যে গোলাপে ঢেকে গেলো
আমার দুটি অন্ধ চোখ।
ফেরদৌসী বেগমের কবিতা
বিরহী সুর......
তখনও লাগেনি গ্রহণ
চন্দ্র সূর্য অক্ষত
এই ঘাস এই পথ জানে
তখনও আসেনি অমাবস্যা
জোস্নায় ভাসা মাঠ একাকি ঝাউ গাছ
বাতাসে ভাসে বিরহী সূর।
বেওয়ারিশ সুর জানে না কত তা মধুর
নাম না জানা কোন সে স্হল
বিজনে বাজায় সেতার,
কান পেতে শুনি
আরো ঝুকে যাই সুরের পিছে ধাই
হাজার বছরের আকুতি জমা আছে
পাথরের গায়।
ক্ষুধিত পাহারের বুকে জমা আছে তৃষা
হাজার বছরের ধ্বনি
প্রতিদিন তা প্রতিধ্বনিত হয়
গিরি শুধু জানে কতটা শৈল আছে
বাঁকে বাঁকে।
কতটা ক্ষত কতটা নৈঃশব্দ নিয়ে
এ জলপ্রপাত বয়
সেতারি মনে জমা কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃঢ়তা
ভোরের আলোয় ছড়ানো শুভ্রতায়
শুভ্র গিরি ছড়ায় যে দুত্যি
তার নিচে চাপা পড়ে আছে
হত হওয়া যত স্বপ্ন ফসিল।
রাজশাহী। ২৫.১০.২০২৩
@ ডাউন টাউন, রাজশাহী।