নিঃস্বার্থ ভালবাসা
-লায়লা হোসেন
ভালবাসি , তোমার নিষ্পাপ চাহনি
ভালবাসি , তোমার অভিমান ভরা মুখখানি
ভালবাসি , তোমার মুচকি হাসি
ভালবাসি , তোমার ছোটোখাটো ভুলত্রুটি
বেলাশেষের খুনসুটি
আর হেয়ালি ভরা পাগলামি
ভালবাসি তাই , ভালবাসার ভুবনে
দুটি হৃদয়ের হৃত্স্পন্দন
আজ একই সুরে বাজে
***
ভয়
সাবরিনা সিরাজী তিতির
ভয়ের ওপারে যাবার সাহস হয়নি কখনো
খুব বেশি ভয় আমার
না পাবার ভয় , পেয়ে হারাবার ভয়
খুব দূরে চলে যাবার ভয়
খুব কাছে শ্বাস নেবার ভয়
আমার বড্ড বেশি ভয় !
তোমার ভয় , তাদের ভয় !
সাদাকালো আর রঙিন ভয়
ভীষণ রকমের দস্যুবৃত্তির ভয়
নির্লিপ্ত থাকা অসহায় ভয়
আমার বড্ড বেশি ভয় !
আমি হাঁটি না , উড়তে জেনেও ভোকাট্টা হই
ডুবসাঁতারের মোহে স্পর্শ করি না জল
হরেক রকম ছোঁয়াচ বাঁচাই
অনেক ভয়ে একটি সাহস আমি
আমি শুধু সেই আমাতেই থাকি
ভয় পালিয়ে নিজের ভিতর খুব সাহসে বাঁচি !
***
গায়ের গন্ধে মৃত্যুর ঘ্রাণ
-যাযাবর জীবন
আমায় দেখো না তুমি আমার আত্মাকে দেখ
মৃতপ্রায়, মড়া শেকড়ের মত শুকিয়ে রয়েছে
স্মৃতির খাতাটাকে উল্টেপাল্টে দেখো ভালো করে
কোন এক পাতায় এখনো আমার নাম লেখা আছে
ভালো করে ঘসা কাঁচের আয়নায় মুখ চেয়ে দেখ
সেখানে আজো আমার প্রতিচ্ছবি কোথায় যেন ভাসে
এখনো সময় আছে কিছু, আছে অবকাশ চিন্তার
হয়তো আবার নতুন করে দুজনার কিছু ভাবনার
স্বপ্নগুলো দেখেছিলেম আমরা দুজনে মিলে
একটি টোকায় ঝরিয়ে দিলে ঝুরঝুর করে
বড় ভঙ্গুর ওই কাঁচের দেয়াল কিংবা স্বপ্নগুলো
টোকাতেই ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায় মরে।
এখনো দূর থেকে তোমার ডাক শুনি
তাইতো এখনো প্রতীক্ষার প্রহর গুনি
দুঃখের আকাশে কেন যে এসে আজো জ্যোৎস্না জ্বালো
মনের গভীরে অথৈ অন্ধকার এখানে নেই কোন আলো
আমার গায়ের গন্ধ শুকে তুমি কি মৃত্যুর ঘ্রাণ পাও
ভালো করে আমায় দেখ আজ , মৃত্যুকে চিনে নাও।
***
শ্বাসরুদ্ধ
অরুনোদয় কুণ্ডু
..................
পাখীটা মরল, পেটে পুঁথির পাতা ভরা!
প্যাঁচার মতো বিজ্ঞ হয়ে হারিয়ে গেল রাতে।
প্রানের গানের নিভল বাতি কেতার নিয়মে গেয়ে,
আসলো সে শেষ বিকেলের উদাস জানালাতে।
উঠলো না সে নীল সাগরের উজান মাতাল ঢেউ,
ছেঁড়া ক্যানভাসে রইল পরে বিরহিনি মোনালিসা।
উড়োজাহাজের সঙ্গে ছুটে হাঁফিয়ে উঠলো পথে,
ফিরবে যে ঘর সে পথেরও পেলনা আর দিশা।
তাই মরল সে রাজপথে শ্বাসের খোঁজ হারিয়ে,
তাকে ঠাই দিলও হাল খাতা ক্ষতির হিসাব নিয়ে।
***
বোষ্টুমি তোমায় হারিয়ে ফেলার পর /
শুভেন্দু দেবনাথ
বিরহে পুষে রাখি তোমায় নীল আঁচল
মন্থর স্মৃতির মতো টিপয়ে রাখা কাপ,
হলদে পাতার চাদর গায়ে মাখছে বিগত অ্যালবাম
স্মৃতির দায়ভার অপলক পাহারায় থাকে অমলীন উত্তাপে।
শূন্যতার অন্য নাম যদি তুমি তবে আমি ভুলে পথে হেঁটেছি
আয়নায় পুষে রাখি টুকরো টুকরো ভালোবাসা ঘাম
আমার ছাপোষা শরীরের ডাকনাম শূন্যতা।
ডাঁই করা কবিতারা পানসি হয়ে ভেসে যায় দুপুরের ফিরিওয়ালা ডাক
মৃতচাঁদ তালুবন্দি করে ভেতরে হাহাকার আড়মোড়া ভাঙে
ঘুমের মধ্যে ছুঁয়ে ফেলি ঘুমন্ত সব নাম।
বারুদের শহরে তোমার ভূমিকা নেহাতই ঘর্ষণ
ভেতরের আগুন এর চেয়ে অনেক বেশি উত্তাপ ছড়ায়
ফিস্ফাস্ কিছু অভ্যেসে হেঁটে হাতের শিরায় কথা বলে পরিত্যক্ত ব্লেড
দিন বদলাচ্ছে রোজ, তবু শব্দেরা ভার বদলাচ্ছে না
শুধু চোখের বিষন্নতায় অলিভ ব্লু’র আস্তানা নেমে আসছে আকাশের গায়ে।।
***
তুমি আসছ কি ???
-সনাতন দাস
আমার হারানো বসন্তের
হলুদ পাতার কবিতারা...
আজ ভিড়ে মিশেছে
লক্ষ লক্ষ নুতনের সাথে,
কোটি কোটি নতুন হরফ
মেলা বইয়ের পাতায় পাতায়,
বলা না বলা অনুভবের
চিরন্তন এ মেলায়,
মনের মাঝে মোচড় লাগে,
মরচে পড়ে ঝরে...
তুমি কি অনন্ত আলোকবর্ষ দূরে!
অন্তরলীনা,
স্মৃতির চারণ পথ ধরে,
আমার কল্পলোকেও অকথিত,
গ্রন্থনাহীন ভাঙা স্বপ্নের গান...
শুনতে কি পাও মূক মনে
আজও স্মরনিকা গুনগুণ...
***
একার কবি
-রুখসানা কাঁকন
আমার নিঃসঙ্গ সময়ে ডানা ঝাপটানো একান্ত গাংচিল
মন যমুনায় ভুস ডুব
হাতের নাগালে তোমার চায়ের কাপের একান্ত অক্ষমতা
পারহীন নদীর কাছে অপূ্রনীয় দাবী ।
রোদ চশমায় আমার আদুরে ছায়া
আর দেউলীয়া দুপুরে তোমার মুখে মুখ ঘসার বেপরোয়া স্মৃতি ।
কবিকে ভালবেসো না
অনন্ত ভাঙ্গাচোরা মাঠে সে আকন্ঠ কাঁদে ।
অবাক প্রতিটা নৈবদ্য কে দেয়
সীমাহীন আবেগ ।
তুমি যা গুনে গুনে দাও
রাত ভর কবি এখন লিমেরিক লিখে
সনেটর চায়ে হাঁসফাঁস প্রত্যাশা ।
বুকের পাঁজরে আলু থালি
আজন্ম বোকাবাস আর
কলংকিত রাতে হারানো দু মেরুর
ভুসভুসে গন্ধ মাখা তারা চাঁঁদ ।
বড় হেংলা জীবন
চেটেপুটেও ঘটে না রসনার তৃপ্তি
নীল চাঁদটার কাছে
ভুল ভিক্ষাবৃত্তি ।
এটুকুই তো
হিসাবহীন প্রেমিকা কবি
অনিদ্রা চুমেছে
ক্ষয় কাশ নিস্তব্ধ ভু্মধ্যসাগরে ।